g অবশেষে মালয়েশিয়ায় ঠাঁই হলো জাকির নায়েকের | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শনিবার, ৪ঠা নভেম্বর, ২০১৭ ইং ২০শে কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

অবশেষে মালয়েশিয়ায় ঠাঁই হলো জাকির নায়েকের

AmaderBrahmanbaria.COM
নভেম্বর ২, ২০১৭
news-image

---

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের চাপের মুখে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ প্রত্যাখ্যান করলেও অবশেষে কট্টরপন্থি ইসলামি চিন্তাবিদ ও বিতর্কিত তুখোড় বক্তা জাকির নায়েকের ঠাঁই হলো মুসলিমসংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মালয়েশিয়ায়।

গত মাসের ঘটনা। মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ার ঐতিহ্যবাহী পুত্র মসজিদ থেকে জাকির নায়েক বেরিয়ে আসছিলেন। একজন দেহরক্ষী ছিলেন তার সঙ্গে। সেদেশে এভাবে তার সবার সামনে আসার বিরল ঘটনা এটি। তখন তার চারপাশে ভিড় জমায় অসংখ্য মানুষ। তার সঙ্গে কুশল বিনিময় ও সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই। ওই মসজিদে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রায়ই নামাজ আদায় করেন।

বৃহস্পতিবার ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের এক খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য প্রত্যাখ্যান করলেও জাকির নায়েককে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দিয়েছে মালয়েশিয়া এবং সেদেশর সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তার।

ইসলামের উগ্র মতবাদ ছড়িয়ে জঙ্গি কার্যক্রমে তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করার অভিযোগে ভারতে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ফৌউজদারি মামলা হয়। তার বিরুদ্ধে একাধিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে নিজ দেশ ভারত ছেড়ে নির্বাসনে যান তিনি। প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিলেন। সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় লাভের চেষ্টা করেন। সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যে আশ্রয় পাননি তিনি। পরে মালয়েশিয়া আসেন এবং গত মাসে দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পান জাকির নায়েক।

সমালোচকরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় জাকির নায়েকের উপস্থিতির অর্থ হলো- দেশটিতে উচ্চপর্যায় থেকে কট্টরপন্থি ইসলামের প্রতি সমর্থন দেওয়ার নামান্তর, যেদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় খ্রিষ্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধ রয়েছে এবং দীর্ঘদিন দেশটি মধ্যপন্থি ইসলামি ভাবমূর্তি ধরে রেখে চলছিল।

প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের অধীনে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটিতে ইসলামের রাজনীতিকরণ বাড়ছে, বিশেষ করে ২০১৩ সালে তার দলের পরাজয় এবং ক্ষমতাসীন জোটের বাজে অবস্থানের পর থেকে। সেই থেকে তার ক্ষমতাসীন দল স্থানীয় রক্ষণশীল মালয়-মুসলিম ঘাঁটিতে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে এবং ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে ধর্মই হয়ে উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোক্ষম হাতিয়ার।

পেশায় চিকিৎসক ৫২ বছর বয়সি জাকির নায়েক বিশুদ্ধ ইসলামের এক নতুন ব্র্যান্ড দাঁড়া করানোর চেষ্টা করেন। তার সৃষ্ট বিতর্ক নিয়ে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, সমকামী ও ইসলাম থেকে বিশ্বাস ত্যাগকারীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পক্ষে মত প্রচার করেছেন তিনি। একটি ইউটিউব ভিডিওতে দেখা যায়, জাকির নায়েক বলছেন, ‘ওসামা বিন লাদেন যদি আমেরিকায় সন্ত্রাস ছড়িয়ে থাকেন, তাহলে সন্ত্রাসী, সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হিসেবে আমি তার সঙ্গে আছি।’

ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) গত সপ্তাহে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তুত করেছেন। এতে বলা হয়েছে, ‘প্রকাশ্য বক্তব্য ও উপদেশের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা ও ঘৃণা ছড়িয়েছেন তিনি।’

পিস টিভি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জাকির নায়েক তার বক্তব্য ও মতামত প্রচার করতেন। গত বছর ঢাকায় হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে ২২ জনকে হত্যাকারী সন্ত্রাসীরা জাকির নায়েকের বক্তব্যে অণুপ্রাণীত ও তার অনুসারী- গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পিস টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ। অবশ্য ওই হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

সিঙ্গাপুরের রাজারত্মম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাডিজের বিশ্লেষক রাশাদ আলী বলেছেন, মালয়েশিয়া সরকার জাকির নায়েকের থাকার ব্যবস্থা করেছে, কারণ ‘যৌক্তিকতার সঙ্গেই মালয়দের মধ্যে জনপ্রিয় চরিত্র হয়ে আছেন তিনি, যিনি তার আরো বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে চলেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ অবস্থায় সরকার যদি তাকে দেশ থেকে বের করে দেয়, তাহলে তা জনগণের দৃষ্টিতে ধর্মীয় বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’

গত বছর জাহিদ ও রাজাকের সঙ্গে জাকির নায়েকের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। এ নিয়ে মালয়েশিয়ার মানুষের একাংশের মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে।

মালয়েশিয়া থেকে তাকে বের করে দেওয়ার জন্য একদল অ্যাক্টিভিস্ট দেশটির হাইকোর্টে মামলা করে। তারা অভিযোগ করে, বহু জাতির সমাজে, যেখানে ৪০ শতাংশ অমুসলিম, সেখানে শান্তি বিনষ্ট করতে পারেন জাকির নায়েক। তবে পুত্র মসজিদে তার উপস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলতে পারেনি গ্রুপটি। গত কয়েক মাস ধরে পুত্রজায়ার বিভিন্ন মসজিদ, শপিংমল, হাসপাতাল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দেখা যাচ্ছে জাকির নায়েককে।

অবশ্য মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ মঙ্গলবার তাদের পার্লামেন্টকে জানান, পাঁচ বছর আগেই মালয়েশিয়ার নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে জাকির নায়েককে। এ সময়ের মধ্যে তিনি দেশের আইন বা শৃঙ্খলা ভাঙেননি। এ ছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে তার সম্পর্কে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নিয়ে মালয়েশিয়াকে কিছু জানানো হয়নি। ফলে তাকে আটক বা গ্রেপ্তারের কোনো কারণ নেই।

অন্যদিকে, মালয়েশিয়ার বিরোধী দল ইসলামিক পার্টিও জাকির নায়েককে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছে এবং কোনো বিদেশি সরকারের হাতে তাকে তুলে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

নিজ দেশ ভারত ও এর বাইরে মুসলিম বিশ্বে জাকির নায়েকের কোটি কোটি ভক্ত-অনুসারী রয়েছে। ইসলামি বক্তা হিসেবে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। কট্টরপন্থি ইসলাম প্রচারের জন্য তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। গত মে মাসে কুয়েতে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকির নায়েক দাবি করেন, জনপ্রিয়তার কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের রোষানলে পড়েছেন তিনি।

এ জাতীয় আরও খবর