বাঞ্ছারামপুরে হিজড়াদের তান্ডবে অতিষ্ঠ উপজেলাবাসী : বেপোয়ারা আনোয়ার-বুলবুলী বাহিনী
---
ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)প্রতিনিধি : ‘এই তুই ডেকতে ত কুব সুন্দর। ১০টা টাকা দে। দিলে কি হয়? দে!… না হয় এখনই কিন্তু চুমু দিয়ে দিব!’ এমন অকথ্য ভাষায় কথা বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় মানুষদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে হিজড়ারা। হিজড়াদের অত্যাচারে নগর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রাজধানীর সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই হিজড়ারা।
তাদের অনৈতিক আবদারে সাধারণ মানুষ অতীষ্ঠ। কারো শিশুসন্তান জন্মগ্রহণ করলে হিজড়াদের এলাকা ভিত্তিক নিয়োগকৃত এজেন্টদের মাধ্যমে খবর পেয়ে হিজরার দল ঢোল তবলা নিয়ে তাদের বাসায় হানা দেয়। শিশুকে কোলে নিয়ে গান বাজনা করে অনেক টাকা দাবি করে। টাকা পরিশোধ না করলে শিশু সহ পরিবারের লোকদেরকে হেনস্থা করা হয়। আর্থিক সংগতি অনুয়াযী শিশুর অভিভাবকের কাছে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বকশিশ দাবি করে।এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর বার্তার সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক মো.মনিরুজ্জমান পামেন বলেন,গত সোমবার (১৬ অক্টোবর) বাঁশবাড়িতে বাঞ্ছারামপুরের হিজড়াদেও সর্দার আনোয়ার ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বুলবুলী দলবল নিয়ে যেয়ে আমার অনুপস্থিতিতে আমার আমার ২ মাসের শিশু সন্তান জন্মানোর অজুহাতে স্ত্রী’র কাছ থেকে নগদ ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে নিজেদেও মান সন্মান রক্ষা করেছি’। তিনি বলেন, হিজড়াদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা ছাড়া আর কি করার আছে ? তিনি জানান –আনোয়ার বাবু চেয়ারম্যানের বাড়ির পেছনে সঙ্গী সাথী নিয়ে থাকে।
এদিকে,বাঞ্ছারামপুর পৌর চকবাজারে হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ী। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার টাকা তারা চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে এই এলাকায় তারা চাঁদাবাজি করছে। তাদের (হিজড়া) এ অত্যাচার দেখেও অনেকে না দেখার ভান করছেন।
হিজড়াদের প্রধান টার্গেট হলো বিয়ে বাড়ি ও সন্তান জন্ম হয়েছে এমন ঘর। দল বেঁধে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে অবস্থান বুঝে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে তারা। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা শরীর থেকে জামা-কাপড় খুলে অশোভন আচরণ করে এবং নানা অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। পরে মানসম্মানের ভয়ে ওদের চাহিদা পূরণ করে বিদায় করতে হয়।
জানা যায়, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন আনাচে-কানাচে আছে তাদের বিচরণ। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তাদের এজেন্টও আছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ওই এজেন্টরা এলাকার কোনো বিয়ে, জন্ম ও বিবাহবার্ষিকীতে তাদের খোঁজ দিয়ে থাকেন। সময় মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হানা দেয় তারা।
এ ছাড়া বিভিন্ন হাট-বাজারে একেক দিন একক গ্রুপ গিয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করছে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে অপমান করে তারা। তাই সম্মান বাঁচাতে বাধ্য হয়েই চাঁদা দেন সাধারণ মানুষ।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদর মালিহাটিতে হিজড়ারা দলবদ্ধভাবে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। দিনের বেলায় চাঁদাবাজি করলেও রাতে ওই বাসায় বিভিন্ন অপকর্ম হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, হাটের দিনসহ প্রায়ই এসে হিজড়ারা টাকা তোলে। টাকা না দিতে চাইলে বিভিন্ন গালমন্দসহ মারধরও করে ব্যবসায়ীদের।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, কোন দেশে বাস করি জানি না; এটা যেন মগের মুল্লুক চলছে।বাঞ্ছারামপুর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী,আমেনা প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সেও ব্যবসাীয়ক সমিতির সভাপতি ও সাংবাদিক নেতা ফয়সল খান জানান, বাঞ্ছারামপুর বাজারে হিজড়াদের চাঁদাবাজিকে কথিত ভদ্রলোকেরা নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন। বাসা ভাড়ার আড়ালে হিজড়ারা নানা অপকর্ম ও ইয়াবা ব্যবসার সাথে লিপ্ত বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.শরিফুল ইসলাম জানান, আসলে হিজড়াদের উৎপাতে সব জায়গার মানুষ অতিষ্ঠ। সরকার এদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘এদের সাথেতো বেশি কথা বলা যায় না; তারপরও চেষ্টা করছি, দেখি কী করা যায়।আমি সমাজ সেবা অফিসারকে বলে দিবো পূর্ণবাসনের জন্য।আনোয়ারের বিরুদ্ধে কেউ সুনির্র্দিষ্টভাবে মামলা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে’। হিজড়াদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে প্রশাসনের আশু দৃষ্টি কামনা করছে সচেতন মহল।