হঠাৎ আলোচনায় মুশফিক!
---
স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশের ক্রিকেট নিঃসন্দেহে এক সোনালী সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ একটু একটু করে হয়ে উঠলো এক পরাশক্তি। তারপর প্রভাবটা পড়তে শুরু করলো টেস্ট ক্রিকেটে। শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো মহাশক্তিধর দলগুলোর বিপক্ষে একটার পর একটা সিরিজ ড্র করে বাংলাদেশ এখন টেস্ট ক্রিকেটেও সমীহ তৈরি করার মতো একটা দলে পরিণত হয়েছে। শচীন টেন্ডুলকার, বীরেন্দর শেবাগ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটাররা পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রবল প্রতাপে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
এই সুখের সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা কাঁটার মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে আলোচনা।
বাংলাদেশ টেস্ট দলে তিনটি ভূমিকায় মাঠে দেখা যায় মুশফিককে—ব্যাটসম্যান, উইকেটরক্ষক ও অধিনায়ক। এর মধ্যে ব্যাটসম্যান মুশফিককে নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তিনি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানদের ভেতর একজন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে উইকেটরক্ষণ ও অধিনায়ক মুশফিককে নিয়ে।
উইকেটরক্ষক করার কারণে মুশফিককে লম্বা সময় থাকতে হচ্ছে মাঠে। দস্তানা হাতে উইকেটের পেছনে দেড় দিন, দুই দিন ধরে প্রবল পরিশ্রম করার পর তিনি আর ব্যাটিং অর্ডারের ওপরের দিকে ব্যাট করতে পারছেন না। যেখানে মুশফিকের মতো ব্যাটসম্যানকে সবাই আশা করছে চার নম্বরে, সেখানে তিনি ব্যাট করতে আসছেন ছয় নম্বরে। ফলে মুশফিকের কাছ থেকে সেরা সার্ভিসটা ব্যাট হাতে পাওয়া যাচ্ছে না।
এর সঙ্গে আবার অধিনায়কত্ব নিয়ে একটা আলোচনাও আছে। প্রথমত তিনি অধিনায়ক হিসেবে খুব আগ্রাসী নন। দ্বিতীয়ত নিজে অধিনায়ক বলে নিজের ব্যাটিংয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেও তার মুশকিল হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তিনি ‘টিম ম্যানেজমেন্ট’-এর ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন সিদ্ধান্ত।
সম্প্রতি এ নিয়ে কথাও বলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি চেয়েছেন মুশফিকের সাথে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে একটা সমাধানে পৌঁছানো হোক। যদিও পরে পাপন বলেছেন, তিনি বলেছেন বলে যেসব কথা প্রচার করা হয়েছে, তা তিনি বলেননি। তবে এটা বলেছেন যে, মুশফিকের বিষয়টায় একটা ভালো সমাধানে পৌঁছাতে চান তারা।
মুশফিকের এই বিষয়টায় ভালো সমাধানে পৌঁছানো মানে তাকে অন্তত উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া। সেটা করতে গেলে দলে চাই বিকল্প উইকেটরক্ষক। এই মুহূর্তে মুশফিককে বাদ দিলে দেশের সেরা দুই উইকেটরক্ষক হলেন নুরুল হাসান সোহান ও লিটন কুমার দাশ। এর মধ্যে টেস্ট বিবেচনায় লিটন দাশের আবার ব্যাটিং রেকর্ড ভালো। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই যদি নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চায় বাংলাদেশ, তাহলে হয়তো স্ট্যাম্পের পেছনে আবার গ্লাভস হাতে দায়িত্ব পালন করতে হবে লিটন দাশকে।
শেষ পর্যন্ত দলে মুশফিকের ভূমিকা যাই হোক, এই সময়ে এই আলোচনাটা বোর্ড অন্তত আর খুব বেশি বড় করে তুলতে চায় না। কারণ, এখন দল তাকাতে চাচ্ছে সামনের দিকে। দেশের মাটিতে একটার পর একটা সাফল্য আসছে। এবার দেশের বাইরেও সেই সাফল্যকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পালা।
বাংলাদেশ দল এবার যাচ্ছে লম্বা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। এই সফরে দুটো টেস্ট, তিনটে ওয়ানডে ও দুটো টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ দল। লম্বা এই সফর কঠিন হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা এমনিতেই যে কোনো দলের জন্য কঠিন এক জায়গা। তার ওপর উপমহাদেশের স্পিন নির্ভর দলগুলোর জন্য এটা আরও কঠিন জায়গা। এমন জায়গায় সাফল্য মেলা সহজ কথা নয়। সেই কঠিনের দিকে চেয়েও অপেক্ষায় থাকবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দলও নিশ্চয়ই চাইবে দেশের বাইরে নতুন করে কিছু সাফল্যের ইতিহাস তৈরি করতে। সেটা করতে চাইলে মুশফিকের এই বিষয়টার মতো ক্রিকেটের একান্ত ঘরোয়া বিষয়গুলো একান্তেই সমাধান করতে হবে। এমন সুখের সময়ে এই ছোট অসুখের আলোচনাগুলো এসে যেনো কিছুতেই বাংলাদেশের সাজানো বাগান নষ্ট করে দিতে না পারে।