নতুন আতঙ্কের নাম চলন্ত বাসে ধর্ষণ
---
নিউজ ডেস্ক : ধর্ষণ ইস্যুতে আস্তে আস্তে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসছে। নতুন প্রজন্ম ধর্ষণের শিকার নারীর দিকে বাঁকা চোখে না দেখে বরং দোষীর উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হতে শুরু করেছে।
দুই বছর আগে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডে দুই যুবক এক গারো তরুণীকে মাইক্রোবাসে ধর্ষণের পর চারিদিকে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। পরের বছর টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থেকে ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে একই কায়দায় ধর্ষণের শিকার হন এক নারী। আর গত মাসে বাসে করে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে খুন হন জাকিয়া সুলতানা রূপা নামের এক তরুণী। তিনটি ঘটনাই যেন একই সূত্রে গাঁথা। রাস্তার যানবাহন যে নারীদের জন্য চরম অনিরাপদ সেই বিষয়টিই যেন বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় এসব ঘটনা। পৃথিবীর জঘন্যতম বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ধর্ষণ। আর সেই জঘন্য বিষয়টি আরো বেশি ঘৃণ্য হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে চলন্ত বাসে ঘটার মধ্য দিয়ে। সর্বশেষ চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর রূপার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি পুরো দেশবাসীর বিবেককে নাড়া দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই জঘন্যতম ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন।
কথা হচ্ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অন্তু হাজরার সাথে। চলন্ত বাসে ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অন্তু বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে স্যাটেলাইট, ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সংস্পর্শে থাকা মানুষ মুহূর্তেই সারাবিশ্বের নানা ঘটনা সাথে সাথে জেনে যায়। গত কয়েক বছরে প্রতিবেশি দেশ ভারতে চলন্ত বাসে বেশ কয়েকটি ঘটনা ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এবার সেই ঘটনাই যেন আমাদের দেশে চর্চিত হচ্ছে। ধর্ষণের সাথে জড়িতরা নানা সময়ে শাস্তিও পাচ্ছে। কিন্তু তা দেখেও কেউ যেন শিক্ষা নিতে পারছে না উল্টো ধর্ষণের নতুন নতুন উপায় শিখতেই বেশি উৎসাহী।
চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনায় মার্কেটিং পেশায় যুক্ত লিপি সরকার বলেন, ধর্ষণের মতো জঘন্য রোগে আক্রান্ত মানুষের হার দিন দিন বাড়ছে। সময়ের সঙ্গে সভ্যতায় অনেক পরিবর্তন আসলেও কমেনি নারীর প্রতি সহিংসতা বরং কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক বেশি বেড়েছে। এই ধরনের অপরাধের মাত্রা এবং সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ধর্ষণের ক্ষেত্রে নিত্যনতুন বাজে দৃষ্টান্ত তৈরি হচ্ছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ৪০১ জন, ২০১৪ সালে ৬৬৬, ২০১৫ সালে প্রায় ৭০০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। মহিলা পরিষদের তথ্য মতে, ২০১৬ সালে দেশে ১০৫০ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশের ১৪টি দৈনিক পত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি এ তথ্য দিয়েছে। এই চিত্র সত্যিই আতঙ্কের। বেশ কিছু ক্ষেত্রে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এসব নারীদের। এমনকি কোন কোন ঘটনায় ধর্ষণের চিত্র মুঠোফোনে ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বার বার ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। আবার ধর্ষণের শিকার নারীকে দোষী পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার মতো বাজে দৃষ্টান্তও রয়েছে। উদ্বেগের বিষয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের মান-সম্মান এবং লোক লজ্জার ভয়ে ধর্ষিত নারীরা ধর্ষণের বিষয়টি চেপে যান। তবে আশার কথা, ধর্ষণ ইস্যুতে আস্তে আস্তে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসছে। নতুন প্রজন্ম ধর্ষণের শিকার নারীর দিকে বাঁকা চোখে না দেখে বরং দোষীর উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হতে শুরু করেছে।