ঈদের ছুটিতে : সবুজ চা বাগানে
---
আমাদের উত্তর বঙ্গে, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার সমতলেই আছে দৃষ্টি নন্দন আর মনকাড়া এক সবুজের সমুদ্র চা বাগান। দুইপাশে সবুজ সমুদ্রের মাঝ দিয়ে চলে গেছে মিহি পিচ ঢালা পথ, ছোট ছোট নদীর বয়ে চলা, সারি সারি ইউক্লিপটাস গাছ, মেহগনি, জলপাই আর আমলকির আয়োজন।
কোনো এক অলস সময় বা অবসরে বাসে করে চলে যেতে পারেন পঞ্চগড় বা সরাসরি তেঁতুলিয়ায়। ভাড়া নেবে ৬৫০ টাকা নন এসিতে। অথবা ট্রেনে করে দিনাজপুর নেমে, বাসে করে পঞ্চগড় হয়ে তেঁতুলিয়া। আগে থেকে বলে রাখলে সরকারি এসি ডাক বাংলোর ডাবল রুম পেয়ে যাবেন ৮০০-১০০০ টাকায়। খেতেও পারবেন সেখানে । থেকে কেয়ারটেকার কে বলে রাখলে। এরপর রিকশা নিয়ে চলে যেতে পারেন ডাকবাংলোর কাছে।
দারুণ কৃষ্ণচূড়ার লালে সাজানো, সবুজের ছায়ায় ঘেরা, মহানন্দার অববাহিকায়, হিমালয়ের কোল ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকা, সমতলের চা বাগানের এক সবুজ, নীরব আর কোলাহল মুক্ত শান্ত শহর তেঁতুলিয়ার সরকারি সেই ডাকবাংলো। যেখানে গিয়ে আপনার আর ফিরতে মন চাইবে না।
কী কী পাবেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়?
নীরব এক লোকালয়
অবসরে আপনি দুই একটি দিন কাটিয়ে আসতে পারেন অনায়াসে। যেখানে নেই কোনো কোলাহল, বাড়তি টুরিস্টদের কলকাকলি, নেই জ্যাম, ঘাম, গরম বা ধুলোর আস্তরণ। আছে সবুজ মাঠ, স্নিগ্ধ ঘাস, সারি সারি সবুজ গাছ, সাধারণ আর সহজ সরল জীবন-যাপন। রিকশা আর সাইকেলের টুংটাং শব্দ, ঝিরঝিরে বিশুদ্ধ বাতাস। আর চুপচাপ বসে নিজেকে জানার-বোঝার আর কথা বলার কিছু অখণ্ড অবসর।
সমতলের সবুজ সমুদ্র
সকালটা একটু বিশ্রাম নিয়ে, ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে পড়তে পারেন কাজী অ্যান্ড কাজী টি স্টেটের চা বাগানের সবুজের সমুদ্রে। দেখতে পারেন চা প্রসেসিংয়ের ব্যাপার। বেলি ফুলের দুর্লভ বাগান। আর সবুজের গালিচা, আনন্দ ধারা। চা বাগানে গেলে মনে হবে এখানেই কেন থেকে যাই না একটি দিন। শেষ দুপুরে ফিরে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে যেতে পারেন। তেঁতুলিয়া বাজারের সত্যিকারের জীবন ও বৈচিত্র্য উপভোগ করতে, আর একটু এগিয়ে একই সঙ্গে উপভোগ করতে পারেন তেঁতুলিয়া আর জলপাইগুড়ির চা বাগানের মনোমুগ্ধকর সবুজের খেলা । সবুজ গাছ আর শেষ বিকেলের হলুদ রোদের আলিঙ্গনের সঙ্গে কোমল আর দিগন্ত বিস্তৃত চা বাগান যা দেখে আপনি অভিভূত হবেন।
হিমালয়ের ডাক আর সবুজ পাহাড়
হিমালয় ছোঁয়া না হোক, তেঁতুলিয়ার সরকারি ডাকবাংলোয় মহানন্দার নদীর পাড়ে বসে অন্তত দেখা তো যাবে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ের সারিগুলোকে। জিরো পয়েন্টে গেলে ইচ্ছে হবে ওপারের হিমালয় যদি ছুঁয়ে আসা যেত? এমনকি ডাকবাংলোর বারান্দায় বসেও আপনি উপভোগ করতে পারবেন এসব নান্দনিকতা একই সঙ্গে। মাতাল করে দেবে হিমালয় থেকে আসা ঠান্ডা হাওয়া, আর ভাগ্য ভীষণ ভালো হলে, পরিষ্কার আকাশ থাকলে দেখা পেতে পারেন অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘার আর শ্বেত শুভ্র পাহাড় চূড়ার।
ঝিরঝিরে বাতাসে মহানন্দার তীরে
তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর সঙ্গে পাবেন মহানন্দা নদী পাড়ের আনন্দ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আঁধার নামতেই ফিরে আসতে পারেন মহানন্দার তীরের ডাকবাংলোয়, হেটেই। বসতে পারেন ঝিরঝিরে বাতাস বয়ে যাওয়া নদীর তীরে । নিতে পারেন বুক ভরে বিশুদ্ধ বাতাস । করতে পারেন মহানন্দা নদীতে শীতল অবগাহন। অনেক রাত পর্যন্ত কাটাতে পারেন এখানেই, পাশের দোকানের চা উপভোগ করতে, করতে কখনো ইচ্ছে হবে পুরো একটি দিন আর রাত মহানন্দার তীরে কাটিয়ে দিতে। উঠতে ইচ্ছে করবে না কাঠের ওই বেঞ্চ ছেঁড়ে কিছুতেই।
তেঁতুলিয়া সান্ধ্য বাজার
সন্ধ্যা নাগাদ ফিরে আসতে পারেন তেঁতুলিয়া বাজারে । উপভোগ করতে পারেন গরম পুরির সঙ্গে বিশাল রসগোল্লা।
যাওয়া-আসা আর থাকা-খাওয়া
ঢাকা থেকে ৬৫০ টাকায় বাসে করে যাওয়া যায় তেঁতুলিয়া । সরকারি ডাকবাংলোর ভাড়া পড়ে ৮০০-১০০০ টাকা, আগে থেকে বলে রাখা সাপেক্ষে। খাওয়া-দাওয়া সারাদিন-রাত ২৫০-৩০০ টাকা খরচ করলেই পেয়ে যাবেন মনের মতো আর তাজা সব খাবার। ব্যক্তিগত ভাবে থাকার হোটেলও আছে কয়েকটি সেগুলোর ভাড়াও সাধ্যের মধ্যেই।