g এ মাসেই বড় বন্যা! | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

রবিবার, ২৭শে আগস্ট, ২০১৭ ইং ১২ই ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

এ মাসেই বড় বন্যা!

AmaderBrahmanbaria.COM
আগস্ট ১৩, ২০১৭

---

নিউজ ডেস্ক : চলতি বছরের এপ্রিলে দেশের হাওর অঞ্চলে আগাম একদফা বন্যা হয়েগেছে। জুলাই মাসে উত্তরাঞ্চলে দ্বিতীয় দফা বন্যা হয়েছে। এবার আরেকটি বন্যার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে ভারী বর্ষণের পানি নেমে আশার কারণেই এই আশঙ্কা তাদের। দেশের সাতটি জেলায় ইতোমধ্যে বন্যা শুরু হয়েছে। নদ-নদীর পর্যবেক্ষণাধীন পানির ৯০টি পয়েন্টের মধ্যে ৮১টির-ই পানি বাড়ছে। ইতোপূর্বে আগস্টের শেষের দিকে আরেকটি বড় বন্যার আশঙ্কা করেছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

জানতে চাইলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উত্তরাঞ্চলে বন্যা শুরু হয়েছে। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পর্যবেক্ষণাধীন পানির ৯০টি পয়েন্টের মধ্যে ৮১টির-ই পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধির এ প্রবনতা আগামী ১৬ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এরপর কমতে পারে কিন্ত ব্যাতিক্রমও হতে পারে। কারণ আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন হয় অল্প সময়ে।

কেন আবার বন্যার আশঙ্কা করছেন জবাবে এই প্রকৌশলী বলেন, দেশে অনেক বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরও ২ থেকে ৩ দিন বৃষ্টিপাত হবে। বন্যাতো হয় বৃষ্টির কারণে। বৃষ্টিরপাতের সম্ভাবনা আছে বলেই বন্যার আশঙ্কা করছি। তিনি বলেন, আগামী ১৪ তারিখ সোমবার যদি বৃষ্টির পানি কমে যায় তাহলেও পানি বাড়বে। কারণ উজান থেকে পানি আসবে। তাই আরও ৩ থেকে ৪ দিন পানি বাড়বে। অর্থাৎ বর্তমানে যে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে এর সঙ্গে যোগ হবে উজানের পানি। তহালে বড় ধরনের কোনো বন্যা হতে যাচ্ছে জবাবে তিনি বলেন, বন্যা বড়-ছোট হয় তার স্থায়িত্বের উপর। চলতি বছরের বন্যা ১০ দিন স্থায়ী হয়েছে। ১৯৯৮ সালের বন্যার স্থায়িত্বকাল ছিল আড়াই মাস। আর ১৯৮৮ সালের বন্যা দুই দফায় প্রায় ১ মাস স্থায়ী হয়। তাই এখনই বলা যাচ্ছে না বন্য বড় না ছোট হবে।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নদ-নদীর পরিস্থিতির উপর গতকালের এক বুলেটিনে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া নদ-নদীর পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের ৯০টি পয়েন্টের ৮১টিতেই বৃদ্ধি পেয়েছে। ৬টির হ্রাস পেয়েছে এবং বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ১৭টি পয়েন্টে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ড. মো. সাব্বির মোস্তফা খান বলেন, আগস্টের শেষের দিকে একটা বন্যা হতে পারে এবং সেটা মাঝারি ধরনের হতে পারে। কারণ আমাদের দেশের বৃষ্টি এবং ভারত বিশেষ করে উজানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই দুই পানি মিলেই বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাহলে আসলেই এ ধরনের বন্য হবে কিনা এটা কদিন আগে জানা যাবে জবাবে ড. খান বলেন, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে ৪ থেকে ৫ দিন আগে পূর্বাভাস দিতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মৌসুমী বায়ুর বর্ধিতাংশের অক্ষ ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে।

এছাড়া গত শুক্রবার সীতাকুণ্ডে ২২৮ মিলিমিটার ও রাঙামাটিতে ২২৫ মিলিমিটার, রংপুর ও সিলেটের অনেক এলাকায় ১০০- ১৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। গত জুলাই মাসের বন্যায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছিল। নদী ভাঙনের শিকার হয়েছিল সাড়ে ৪ হাজার পরিবার। সেই রেশ না কাটতে ফের বন্যার পানিতে ভাসছে দেশের সাত জেলা। টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। ইতোমধ্যে চর, দ্বীপচর ও নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ।

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার সাতটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। এ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় এক হাজার ঘরবাড়িসহ অনেক ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও প্লাবিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব জেলার হাজার হাজার পরিবার। অর্থাৎ বন্যা এক প্রকার শুরু হয়ে গেছে। দুই সপ্তাহ আগে পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বড় বন্যার আশঙ্কা করেছিলেন।

এ বন্যা মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, বেশিরভাগ নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে আছে। জলাবদ্ধতা আর বন্যার পার্থক্য কিন্তু আপনাদের বুঝতে হবে। সাধারণত বড় বন্যা হয় যখন যমুনার পানি, পদ্মার পানি এবং মেঘনার পানি এক সাথে বাড়ে। সাথে যদি সাগরে তখন অমাবস্যা থাকে, তখন বন্যার প্রকোপ হয়। এবার ইতোমধ্যে দ্বিগুণ বৃষ্টি হয়েছে। সেজন্য আমরা একটা ওয়ার্নিং দিয়ে রাখছি যে (বড় বন্যার) একটা সম্ভাবনা আছে। আর এই বন্যাটা হয় আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে।