অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের ৮ উপসর্গ
---
অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার চরম পর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত উপসর্গ খুব একটা ধরা পড়ে না। আপনি যদি নিম্নলিখিত উপসর্গের যেকোনো একটি দেখেন তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। কেননা এসব উপসর্গ অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের কারণেও হয়ে থাকে।
ত্বক হলুদ দেখালে
নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত মাউন্ট সিনাই হসপিটালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ক্রিস্টোপার ডিমাইও বলেন, ‘জন্ডিস হচ্ছে অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের অন্যতম একটি নিশ্চিত উপসর্গ।’ তিনি আরো বলেন, ‘রোগী প্রায় সময় ভালো বোধ করেন যতক্ষণ না কেউ দেখিয়ে দিচ্ছে তার চোখ হলুদ। তারপর তারা ডাক্তারের কাছে যান ও জানতে পারেন যে তাদের অগ্ন্যাশয় ক্যানসার চরম পর্যায়ে।’
অগ্ন্যাশয়ের সম্মুখভাগ থেকে শুরু হওয়া ক্যানসার পিত্তনালীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পিত্তরসকে ইনটেসটাইন বা অন্ত্রে পৌঁছতে বাধা দেয় যেখানে পিত্তরস চর্বিযুক্ত খাবার হজমে সাহায্য করে এবং শেষে মলের সঙ্গে দেহের বাইরে চলে আসে। প্রতিবন্ধকতার কারণে পিত্তরস জমা হতে থাকে ও জন্ডিস সৃষ্টি করে। জন্ডিস হলে চামড়া বা চোখ হলুদ হয়ে যায়। দ্য আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, শরীরে জমে থাকা পিত্তরস ত্বকে পাঁচড়া সৃষ্টি করে। এটি ক্যানসারের আরেকটি উপসর্গ যা অবহেলা করা উচিত নয়।
পেটে বা পিঠে ব্যথা হলে
পেটের উপরিভাগে বা বুকের হাড়ের ঠিক নিচে এবং তার বিপরীত পাশ পিঠে ব্যথা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে। ড. ডিমাইওর মতে, এসব কমন জায়গা যেখানে অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের রোগীরা ব্যথা অনুভব করে থাকে। তিনি বলেন, ‘ব্যথার বর্ণনা দেওয়া কঠিন। কিন্তু এসব স্থানে হালকা ব্যথা, অভ্যন্তরীণ ব্যথা কিংবা পেট ও পিঠের পার্শ্বস্থ জায়গায় ছড়িয়ে পড়া ব্যথা অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের ইঙ্গিত বহন করে এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত।’ অগ্ন্যাশয়ের কোনো অংশ সৃষ্টি হওয়া ক্যানসার পার্শ্বস্থ অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং ব্যথার উদ্রেক করতে পারে। অগ্ন্যাশয়ের পার্শ্ববর্তী স্নায়ুতে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
গাঢ় প্রস্রাব বা পিচ্ছিল পায়খানা হলে
গাঢ় প্রস্রাব (বাদামি বা মরিচা রঙের প্রস্রাব) অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের একটি উপসর্গ হতে পারে। লিভার বিলিরুবিন তৈরি করে এবং রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে প্রস্রাব গাঢ় হয়ে যায়। পিচ্ছিল বা কাদা বর্ণের পায়খানাও অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে।
বমি বমি ভাব বা বমি
দ্য আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির তথ্যমতে, পাকস্থলীর অগ্রবর্তী অংশে হওয়া ক্যানসার আংশিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যার ফলে পাকস্থলীতে খাবার সহজে প্রবেশ করে না। এ কারণে খাওয়ার পর বমি বমি ভাব, বমি বা ব্যথা হতে পারে।
অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ বেড়ে গেলে
ড. ডিমাইও বলেন, অগ্ন্যাশয়ের ক্ষুদ্র টিউমার দ্বারা অগ্ন্যাশয়ে অবর্ণনীয় ও অনবরত প্রদাহ হতে পারে। যদিও পাথর হওয়া, নতুন ওষুধ সেবন করা বা অ্যালকোহলের অপব্যবহারে প্রদাহ বেশি হতে পারে। যদি এসব বিষয় ছাড়া এ প্রদাহ বেড়ে যায় তাহলে তা আরো মারাত্মক পরিণতির নির্দেশনা হতে পারে।
মুখের স্বাস্থ্য দুর্বল হলে
আপনার মুখে যদি দূষিত শ্বাস, দাঁতের প্রদাহ বা আলগা দাঁতের সমন্বয় ঘটে থাকে তাহলে তাকে খারাপ স্বাস্থ্যের চেয়েও বেশি বলা যায়। নিউ ইয়র্ক ল্যাঙ্গোন মেডিকেল সেন্টারের গবেষকরা অগ্ন্যাশয় ক্যানসার রোগীদের মধ্যে যাদের মুখে ব্যাকটেরিয়া আছে ও যাদের মুখে নেই তাদের ওপর পরীক্ষা চালান এবং তাতে দেখা যায় যে, অগ্ন্যাশয় ক্যানসার রোগীরা সাধারণত মাড়ি রোগ, দাঁতের গর্ত বা ক্ষয়রোগ ও মুখের ত্রুটিপূর্ণ সমস্যার শিকার হয়ে থাকে। পরীক্ষায় আরো দেখা যায় যে, যেসব রোগীর মুখে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে পেরিওডোনিটিস (মাড়ির প্রদাহ) নামক দাঁতের রোগ হয়ে থাকে তারা যাদের মুখে ব্যাকটেরিয়া নেই তাদের তুলনায় মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকে।
টাইপ-২ ডায়বেটিস
ডায়বেটিস রোগ নির্ণয়ে প্রমাণ হয় না আপনি অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন। কিন্তু ঝুঁকিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মায়ো ক্লিনিকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার রোগীদের ক্যানসার নির্ণয়ের আগে ডায়বেটিস ধরা পড়ে। ড. ডিমাইও বলেন, ইনসুলিন তৈরিতে অগ্ন্যাশয় ভূমিকা রাখে এবং টিউমারের প্রাথমিক পর্যায়ে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন তৈরিতে সমস্যা হয় যার ফলে ডায়বেটিস হয়।
ওজন অতিরিক্ত হ্রাস
ড. ডিমাইওর মতে, যদি আপনার হঠাৎ ক্ষুধা কমে যায় অথবা খাদ্যাভ্যাস বা কাজ বা অনুশীলনের পরিবর্তন ছাড়া ওজন হারাতে থাকেন তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। এটি অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের সাধারণ একটি উপসর্গ।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট