g ইতিহাসের শৃঙ্গে মুরালিধরন | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

সোমবার, ২৪শে জুলাই, ২০১৭ ইং ৯ই শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ইতিহাসের শৃঙ্গে মুরালিধরন

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ২২, ২০১৭

---

স্পোর্টস ডেস্ক :নিজের ওপর দারুণ বিশ্বাস ছিল মুত্তিয়া মুরালিধরনের। নইলে এত বড় ঘোষণাটা কখনই দিতেন না তিনি। ক্যারিয়ারের ৮০০ উইকেট পেতে আরো আটটি উইকেট দরকার ছিল তাঁর। অথচ মুরালি জানিয়ে দিলেন, ভারতের বিপক্ষে এই টেস্টই হতে যাচ্ছে তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। মুরালি জানতেন এই টেস্টেই মাইলফলক ছুঁতে পারবেন তিনি। ম্যাচ শেষে বিজয়ী বেশেই ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন তিনি। ৮০০ উইকেটের মাইলফলক তো ছুঁয়েছেনই, সেই সঙ্গে দলকেও জেতান ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল এই বোলার। টেস্ট ইতিহাসে তাঁর আশপাশে নেই আর কেউই। ক্রিকেটে বল হাতে তাঁর মতো আর কেউ দাপট দেখাতে পারবেন সেটা আগবাড়িয়ে বলাটা চরম দুঃসাহসিক হবে।

২০১০ সালের ১৮ জুন। গলে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামে শ্রীলঙ্কা। ২০০১ সালের পর থেকে শ্রীলঙ্কায় দ্বিপক্ষীয় সিরিজের প্রথম টেস্টটি কোনোবারই হারেনি স্বাগতিকরা। বিদায়ের জন্য এমন একটি উপলক্ষই বেছে নেন স্পিন জাদুকর মুত্তিয়া মুরালিধরন। টস জিতে ব্যাটিং নেন লঙ্কান অধিপতি কুমার সাঙ্গাকারা। পারানাভিথানা ও সাঙ্গাকারার শতকে রানের পাহাড়ে চেপে বসে স্বাগতিকরা। ৫২০ রানে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা।

ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই গৌতম গম্ভীরকে হারায় ভারত। এরপর রান আউট হয়ে ফিরে যান রাহুল দ্রাবিড়। এরপর শুরু হয় মুরালি ম্যাজিক। টেন্ডুলকারকে দিয়ে শুরু করেন তিনি। এরপর যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি, প্রজ্ঞান ওঝা ও অভিমন্যু মিথুনকে দিয়ে ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬৭ বারের মতো ৫ উইকেট নেন স্পিন মাস্টার। শেবাগের ১০৯ রানের ঝড়ের পরেও ২৭৬ রানেই অলআউট হয়ে যায় ভারত। ৩৬ রানে ৫ উইকেট নেন মুরালি।

ফলোঅনে পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করে ভারত। এবার মালিঙ্গার ঝড়ের সামনে ভেঙে পড়ে ভারতের দুর্গ। চতুর্থ দিনে শেষে ভারতের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১৮১ রান। যুবরাজকে আউট করে ৭৯৮ উইকেট পান মুরালি। শেষ দিনে লঙ্কানদের জয়-পরাজয় ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে মুরালিধরনের ৮০০ উইকেট। সকালেই হরভজন সিংকে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন হরভজন সিং। এরপর শ্রীলঙ্কাকে বেশ ভোগান ভিভিএস লক্ষণ, অভিমন্যু মিথুন ও ইশান্ত শর্মা। এই তিনজনের ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে অপেক্ষা বাড়ে মুরালিধরনের। শেষ পর্যন্ত লক্ষণ ও মিথুনকে ফেরান মালিঙ্গা। অপরদিকে উইকেটের জন্য মুরালিকে দিয়ে একের পর এক ওভার করিয়ে যান অধিনায়ক সাঙ্গাকারা। ভয় কেবল একটাই, মালিঙ্গা। কানায় কানায় পূর্ণ গলের দর্শকরা সেদিন হয়তো কোনোভাবেই মালিঙ্গার ওভারে উইকেট চাচ্ছিলেন না। এটা যে মুরালির বিদায়ের দিন, তাঁর অমরত্বের দিন। শেষ পর্যন্ত ওঝাকে ফিরিয়ে ৮০০ উইকেটের শৃঙ্গে পৌঁছান কিং অব স্পিন মুত্তিয়া মুরালিধরন। গ্যালারিতে তখন বাঁধভাঙা উল্লাস। ৩৩৮ রানে অলআউট ভারত, লঙ্কানদের সামনে মাত্র ৯৪ রানের টার্গেট। তবে ম্যাচের আবেদন একেবারেই ফিকে। ক্রিকেট বিশ্বের চোখ যে ছিল কেবল এ জাদুকরের দিকে। শেষ বলে উইকেট নিয়ে শেষ করলেন টেস্ট ক্যারিয়ার, যে রেকর্ড আগে ছিল নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্যার রিচার্ড হ্যাডলির। এদিন শেষ বলের কারিশমায় মুরালি জানিয়ে দিলেন, তাঁকে মনে রাখতে হবে। কিংবদন্তির বিদায়টাও ছিল রাজার মতোই। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ১০ উইকেটে জিতে নেয় স্বাগতিকরা।

টেস্ট ক্রিকেটে মুরালিধরনের চেয়ে বেশি উইকেট আর কোনো বোলার নিতে পারেননি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন শেন ওয়ার্ন। অসি এই লেগ স্পিনারের উইকেট সংখ্যা ৭০৮টি। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন মুরালিধরন। ১৯৯২ সালের আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেক হয় তাঁর। আর ১৯৯৩ সালে ভারতের বিরুদ্ধে ঘটে ওয়ানডে অভিষেক। ক্যারিয়ারের ১৩৩তম টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান মুরালি। ওয়ানডে ক্রিকেটেও সবার ওপরে রয়েছেন এই স্পিনার। এই ফরম্যাটে মুরালির সংগ্রহ ৫৩৪ উইকেট। ৫০২ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন পাক কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম।