জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে কুতুবদিয়া
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : তীব্র ঝড়ো হাওয়া তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে সম্পূর্ণ ডুবে গেছে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। ইতিমধ্যে দ্বীপের অধিকাংশ ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে সহায় সম্পদ। কিনারাহীন হয়ে পড়েছে দ্বীপবাসী।
কুতুবদিয়া উপজেলার ডেইল ইউনিয়নের পশ্চিম আলী আকবর ডেইল, কাহার পাড়া, কাজীর পাড়া, কিরন পাড়া, চৌধুরী পাড়া, পন্ডিত পাড়া, তেলি পাড়া, হায়দার বাপের পাড়া, পূর্ব তাবালেচর, পশ্চিম তাবালেরচর, জেলে পাড়া এবং বড়ঘোপ ইউনিয়নের মুরালিয়া, রোমাই পাড়া এলাকায় গত রাত থেকে দ্বীপের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বৈরী আবহাওয়া এবং সামুদ্রিক বড় জোয়ারে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে কয়েক হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে গেছে। প্রায় ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। দ্বীপের মানুষগুলো স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে।
পানির ধাক্কায় দ্বীপের বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর থেকে বেড়িবাঁধের যে অংশ ভাঙা ছিল তা পুনঃনির্মাণ না করায় ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী জানান, রবিবার মধ্যরাত ও সোমবার সকালের বৃষ্টিপাত, উচ্চ জোয়ার এবং বৈরী আবহাওয়ার ফলে ডুবে গেছে কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইলের ১, ২, ৩ ও ৭নং ওয়ার্ড এবং উত্তর ধুরুং এর অধিকাংশ এলাকা। বেড়িবাঁধ ভাঙার ফলে অতীতের মত এবারও ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসেছে অনেক পরিবার। তাদের অধিকাংশই এখন আশ্রয় নিয়েছে সাইক্লোন শেল্টারে।
উপজেলা চেয়ারম্যান দুঃখ করে বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও কেটে যাবে ঝড়-জলোচ্ছাস। কিন্তু কাটবে না তাদের ভাগ্য? বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুতুবদিয়া দ্বীপের ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ভাঙন বেড়িবাঁধ এলাকা দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। এতে উত্তর ধুরুং, আলী আকবর ডেইল, বড়ঘোপ ইউনিয়নে জোয়ারের পানিতে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধূরী বলেন, বিগত ৪ বছর ধরে উত্তর ধুরুং এলাকার কাইছারপাড়া, চুল্লারপাড়া, চরধুরুং, নয়াকাটা, আকবরবলীপাড়া, ফয়জানির বাপের পাড়া, উত্তর সতর উদ্দিনসহ ১০ গ্রাম জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
এসব এলাকায় পাউবোর প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত থাকায় শত শত পরিবার জোয়ারের নোনা জলে ভেসে গেছে।
বড়ঘোপ ইউপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধূরী বলেন, বড়ঘোপ আজম কলোনী, মধ্যম অমজাখালী, দক্ষিণ অমজাখালী এলাকায় ঘূর্নিঝড় রোয়ানুর সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর মেরামত না করায় রবিরার দুপুরে ভাঙা বাঁধ দিয়ে নোনাজল গ্রামাঞ্চলে ঢুকে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়। রোয়ানুর আঘাতে নোনা জলে ডুবে যাওয়া পুকুরগুলো ওই এলাকার লোকজন নিজেরা সেচ দিয়ে বৃষ্টির পানির জন্য খালি করে রাখে। সোমবার দুপুরে চলতি অমাবষ্যার জোয়ারে পুকুরগুলো আবারো নোনাজলে ভরে গেছে।
আলী আকবর ডেইল ইউপি চেয়ারম্যান নুরুচ্ছাফা জানান, কুমিরারছড়া জেলেপাড়া, আনিচের ডেইল, পূর্বতাবলেরচর, পশ্চিম তাবলেরচর, হায়দারবাপেরপাড়া, তেলিপাড়া, কাহারপাড়া, কাজিরপাড়া এলাকায় বাঁধ ভাঙা থাকায় জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে শত শত একর ফসলি জমি ও শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বিবার্তাকে বলেন, কুতুবদিয়ার খুব খারাপ অবস্থা। আমি জেনেছি। এখনো কোন সাহায্য পাঠানো সম্ভব হয়নি। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।