সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে নানামুখি চাপে তেরেসা
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :পার্লামেন্ট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে নানামুখি চাপে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। গত ৮ জুনের নির্বাচনী জুয়ায় ধরাশায়ী হয়ে নিজ দলের ভেতরেই এখন কোণঠাসা হয়ে গেছেন এই কনজারভেটিভ নেত্রী। এরই মধ্যে তেরেসা মন্ত্রিসভা গোছাতে শুরু করলেও, তার পদত্যাগ দাবি তুলেছেন দলীয় অনেক এমপি। একই দাবিতে সরব হয়ে উঠেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এদিকে ১০ আসনের ক্ষুদ্র দল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সঙ্গে তেরেসা মে জোট সরকার গঠনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা নিয়েও বেশ বিপদে পড়েছেন। বলা হচ্ছে, এই জোট উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে স্বাক্ষরিত গুড ফ্রাইডে এগ্রিমেন্টের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
জোটের বিরুদ্ধে একটি অনলাইন পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন তিন লাখেরও বেশি ব্রিটিশ নাগরিক। দলীয় নেতাদের চাপে তেরেসার দুই শীর্ষ উপদেষ্টা শনিবার পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকেও তার ওপর চাপ রয়েছে।
জোট নিয়েও সংকটে পড়েছেন তেরেসা মে। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে কয়েক দশকের উত্তেজনা শেষে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১৯৯৮ সালে স্বাক্ষর হয়েছিল ‘গুড ফ্রাইডে অ্যাগ্রিমেন্ট’। এ চুক্তিমতে, স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পাওয়া ওই ভূখণ্ডের স্থানীয় রাজনীতিতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে কেন্দ্রীয় সরকার; কিন্তু এ ভূখণ্ডেরই দল ডিইউপির সঙ্গে জোট গড়ছেন তেরেসা যা নিরপেক্ষতার নীতিসিদ্ধ নয়।
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর কারণে প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করছেন অনেক কনজারভেটিভ এমপি। ক্ষুব্ধ এমপিরা বলছেন, তিনি অযথাই রাজনীতির জুয়া খেলতে গিয়েছেন। তার ফল হয়েছে হিতে বিপরীত। অনেক এমপির অভিযোগ, তেরেসা কোনোমতে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য অখ্যাত একটি রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) ওপর ভর করছেন। স্কটল্যান্ডে কনজারভেটিভ দলের নেতা রুথ ডেভিডসন এই জোটের বিরুদ্ধে। তার আপত্তির কারণ, গর্ভপাত ও সমকামী অধিকারের বিরোধিতা করে থাকে ডিইউপি। কিন্তু কনজারভেটিভরা এসব অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’কে ফোন করেও এ অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা চেয়েছেন।
এদিকে কনজারভেটিভের তাৎক্ষণিক জরিপে দেখা গেছে, তৃণমূলের ৬০ শতাংশের বেশি নেতাকর্মী প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তেরেসা মের পদত্যাগ চান। এখনও তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চান ৩৭ শতাংশ কনজারভেটিভ সমর্থক। ১৫০০ জনের মধ্যে চালানো এ জরিপের ফল দলের অনলাইন হোমপেজে প্রকাশ করা হয়।
এর আগে কনজারভেটিভ দলের কোনো কোনো নেতা তেরেসা ক্ষমতায় টিকতে পারবেন না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দলীয় এমপি হিদি অ্যালেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বড় জোর ছয় মাস ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন। তার মতো দলের অনেক এমপিই মনে করছেন, আগামী শরতের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদায় বার্তা বাজবে। বিশেষ করে সারাহ ওয়ালস্টেন, আন্না সোব্রি ও নিকি মরগান তো প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
নিকি মরগান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে বিদায় নিতে হবে। কারণ তিনি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন। দলীয় নেতাদের চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে পরাজিত এমপিদের কাছে ক্ষমা চাইতেও বাধ্য হন। ব্রেক্সিট আলোচনা শুরুর চাপেও রয়েছেন তেরেসা। ইইউর পক্ষে তার ওপর চাপ প্রয়োগ করেন জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মেরকেল। তিনি বলেন, আগামী ১৯ জুনের মধ্যে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু করতে হবে।
এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলটির ভেতর মহলে গুজব উঠেছে, বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা তেরেসার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। সবার আগে আসছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের নাম। ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডেভিড ডেভিসও তেরেসার আরেক চ্যালেঞ্জার হিসেবে মাঠে আসতে পারেন। তিনি অবশ্য প্রকাশ্যে তেরেসাকে এখন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আম্বার রাড, প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্যার মাইকেল ফ্যালোনও হয়ে উঠতে পারেন তেরেসার প্রতিদ্বন্দ্বী। এই চাপ সত্ত্বেও এই চারজনকেই স্বপদে নতুন জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় নিয়োগ দিয়েছেন তেরেসা। অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডও আছেন এ মন্ত্রিসভায়। তবে এক্ষেত্রে ফিলিপ হ্যামন্ডকে নিয়ে কনজারভেটিভ দলে উদ্বেগ আছে। তিনি ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একীভূত রাখার পক্ষে। আন্দাজ করা হচ্ছে, তিনি সরকারের শীর্ষস্থানীয় পদে থেকে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শিথিল করার পক্ষে অবস্থান নিতে পারেন। নির্বাচনে তেরেসার ফ্রন্টবেঞ্চের আট মন্ত্রী পরাজিত হয়েছেন। তাদের আসনে নতুনরা আসছেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার ব্রিটেনজুড়ে পার্লামেন্ট নির্বাচন শেষ হলেও মধ্য লন্ডনে কেনসিংটন আসনের ফল প্রকাশ বাকি ছিল। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পর প্রকাশ হলো এ আসনের ফল। এ আসনটি বিরোধী লেবার দলের ঝুলিতে গেছে। এর ফলে চূড়ান্ত হিসাবে ৬৫০ আসনের হাউস অব কমন্সে কনজারভেটিভরা পেয়েছে ৩১৮ আসন। লেবার ২৬২ আসন।