ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যাওয়ার লড়াইয়ে ১৪ বাঙালি

---
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের হয়ে ১৪ জন ব্রিটিশ বাংলাদেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদের আটজন লড়ছেন প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির হয়ে। চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী, লিবারেল ডেমোক্রেট ও ফ্রেন্ডস পার্টির হয়ে লড়ছেন একজন করে।
ব্রেক্সিট তথা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার প্রক্রিয়া জোরদার করতে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা আরও নিরঙ্কুশ করতে গত ১৮ এপ্রিল অনেকটা আচমকাই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে।
৮ জুন বৃহস্পতিবার এই ভোট হবে। ৬৫০ আসনের পার্লামেন্টের ৩৩১টিতে জয়ী হয়ে গতবার সরকার গঠন করেছিল কনজারভেটিভরা।
২০১৫ সালের ওই নির্বাচনে লেবার পার্টির হয়ে লড়েছিলেন পাঁচজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি, যাদের তিনজনই জয়ী হন। তবে কনজারভেটিভ দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী একমাত্র ব্রিটিশ বাংলাদেশি পরাজিত হয়েছিলেন।
গতবারের বিজয়ী রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক ও রুপা হক এবারও লেবারের টিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের সঙ্গে এই দল থেকে প্রার্থী হয়েছেন আনোয়ার বাবুল মিয়া, মেরিনা আহমদ, রওশন আরা, ফয়সল চৌধুরী এমবিই ও আবদুল্লাহ রুমেল খান।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাজু মিয়া; ফ্রেন্ডস পার্টির হয়ে লড়ছেন আফজল চৌধুরী।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন আজমল মাশরুর, অলিউর রহমান, আবু নওশাদ ও ব্যারিস্টার মির্জা জিল্লুর।
লুটন সাউথ এলাকা থেকে আশুক আহমেদ নামে আরেক বাংলাদেশিকে মনোনয়ন দিয়েছিল লিবারেল ডেমোক্রেটিক দল। তবে ইহুদিবিদ্বেষী মন্তব্য করায় সম্প্রতি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বাঙালি প্রার্থীর নাম ও আসন: রুশনারা আলী (লেবার, বেথনাল গ্রীন অ্যান্ড বো আসন), টিউলিপ রেজওয়ান সিদ্দিক (লেবার, হ্যাম্পস্টেট অ্যান্ড কিলবার্ন), রূপা হক (লেবার, ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন), আনোয়ার বাবুল মিয়া (লেবার, ওয়েলউইন অ্যান্ড হ্যাটফিলড), মেরিনা আহমদ (লেবার, বেকেনহাম), রওশন আরা (লেবার, সাউথ থেনেট), ফয়সল চৌধুরী এমবিই (লেবার, স্কইল্যান্ডের এডিনবারা সাউথ ওয়েস্ট), আবদুল্লাহ রুমেল খান (লেবার, পোর্টসমাউথ নর্থ), সাজু মিয়া (লিবডেম, ওয়াইর ফরেস্ট), আজমল মাশরুর (স্বতন্ত্র, বেথনালগ্রীন অ্যান্ড বো), ওলিউর রহমান (স্বতন্ত্র, পপলার এন্ড লাইম হাউজ), আবু নওশাদ (স্বতন্ত্র, ইয়ার্ডলি, বার্মিংহাম), ব্যারিস্টার মির্জা জিল্লুর (স্বতন্ত্র, ইস্টহাম), আফজল চৌধুরী (ফ্রেন্ডস পার্টি, ইস্টহ্যাম)। |
লেবার দলের বাঙালি প্রার্থীরা

রুশনারা আলী: বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন ও বো আসন থেকে লড়ছেন রুশনারা আলী। এর আগেও দুইবার এই আসন থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যান এই বাঙালি কন্যা। সর্বশেষ নির্বাচনে প্রায় ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
রুশনারা ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যান।

সিলেটের বিশ্বনাথে ১৯৭৫ সালে জন্ম নেওয়া রুশনারা মাত্র সাত বছর বয়সে বাবা-মার সঙ্গে লন্ডনে পাড়ি জমান। দর্শন,রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ডিগ্রিধারী রুশনারা পরামর্শক সংস্থা ইয়ং ফাউন্ডেশনের সহযোগী পরিচালক।
ব্রিটেনের তরুণ রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রভাবশালী রুশনারা আলী অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করেছেন ফিলসফি, পলিটিক্স ও ইকোনমিক্স (পিপিই) বিষয়ে। লেবার পার্টির ছায়া সরকারে শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

টিউলিপ সিদ্দিক: লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে গতবার ১ হাজার ১৩৮ ভোটের ব্যবধানে কনজারভেটিভ পার্টির প্রভাবশালী এক প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হন বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। পরে তিনি বিরোধী দলনেতা জেরমি করবিনের ছায়া মন্ত্রিসভারও সদস্য হয়েছিলেন।
শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকীর মেয়ে টিউলিপ লন্ডনের মিচামে জন্মগ্রহণ করেন।

টিউলিপের শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্মেন্ট বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গে কাজ করেন টিউলিপ, যিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হন।
২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাঙালি নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন টিউলিপ। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে স্থানীয় পার্টির সদস্যদের ভোটে টিউলিপ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে লেবার পার্টির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার টিকেট পান।

রূপা হক: লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হওয়ার লড়াইয়ে আছেন রূপা হক। গত নির্বাচনে তিনি মাত্র ২৭৪ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। রূপা হক কেমব্রিজে পড়েছেন রাজনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন বিষয়ে। কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছেন সমাজ বিজ্ঞান, অপরাধ বিজ্ঞান, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি অধ্যয়নের মতো বিষয়। সংসদ সদস্য হওয়ার আগে তিনি ডেপুটি মেয়র হিসাবে স্থানীয় কাউন্সিলেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রার্থী হয়েছিলেন রূপা। এছাড়া ২০০৫ সালে চেশাম ও এমারশাম আসন থেকে তিনি লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেলেও নির্বাচিত হতে পারেননি।
১৯৭২ সালে ইলিংয়ে জন্ম নেওয়া রূপা হক ১৯৯১ সালে লেবার পার্টির সদস্য হন।

মেরিনা আহমদ: লন্ডনের বেকেনহাম আসন থেকে ফের লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন মেরিনা মাসুমা আহমেদ। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ নাগরিক দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে লেবার পার্টির সঙ্গে আছেন।
নারায়ণগঞ্জে জন্ম নেওয়া মেরিনা আহমদ ৬ মাস বয়সে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে আসেন। মেরিনার স্বামী ইমরুল কায়েস একজন চিকিৎসক।
ইউনিভার্সিটি অফ সারে থেকে ইংরেজি ও ইতিহাসে স্নাতক মেরিনা পরে সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা নেন। তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বর্তমান সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে কেবিনেট অফিসে কাজ করেছেন। ১৯৮০ সালে তিনি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করেন।
আনওয়ার বাবুল মিয়া: ওয়েলউইন অ্যান্ড হ্যাটফিলড আসনে দ্বিতীবারের মতো লেবার পার্টির মনোনয়নে লড়ছেন আনওয়ার বাবুল মিয়া। গত নির্বাচনে তিনি কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান ও মন্ত্রী গ্রান্ট শপের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।
রওশন আরা: সাউথ থেনেট আসন থেকে প্রথমবারের মতো লেবার পার্টির প্রার্থী হয়েছেন রওশন আরা। ব্রিটেনের ডানপন্থি দল ইউকিপ এই আসনে কাউন্সিল নিয়ন্ত্রণ করছে।
ফয়সল চৌধুরী এমবিই
ফয়সল চৌধুরী এমবিই: স্কটল্যান্ডের এডিনবারা সাউথ ওয়েস্ট আসন থেকে লেবার পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ফয়সল চৌধুরী এমবিই। ব্যবসায়ী ফয়সল এর অাগে এডিনবরা অ্যান্ড লথিয়ান রিজিওনাল ইকুইলিটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দাযিত্ব পালন করছেন।
এডিনবারা মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা ও ভাইস চেয়ারের দায়িত্ব পালনকারী ফয়সল চৌধুরী এমবিই কমিউনিটি সংগঠন বাংলাদেশ সমিতি এডিনবারার চেয়ারম্যানও।
আবদুল্লাহ রুমেল খান: পোর্টসমাউথ নর্থ আসন থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী হয়েছেন আবদুল্লাহ রুমেল খান। তিনি লুটনে বাংলাদেশ ইয়ূথ লীগের চেয়ারপারসন।
অন্যান্য দলের বাঙালি প্রার্থীরা
সাজু মিয়া: ডিস্ট্রিক কাউন্সিলর সাজু মিয়া ওয়াইর ফরেস্ট আসন থেকে এবারের নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সলিসিটর সাজু মিযা ওযাইর ফরেস্ট ডিস্ট্রিক কাউন্সিল থেকে ২০১৬ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলার হন।
আফজল চৌধুরী
আফজল চৌধুরী: ইস্টহ্যাম আসনে ফ্রেন্ডস পার্টির প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি আফজল চৌধুরী।
এছাড়া বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে আজমল মাশরুর, পপলার অ্যান্ড লাইম হাউজ আসনে অলিউর রহমান, বার্মিংহামের ইয়ার্ডলি আসনে আবু নওশাদ এবং ইস্টহ্যামে ব্যারিস্টার মির্জা জিল্লুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।