ব্রিটিশ নির্বাচনে ফল নির্ধারণী ভূমিকায় সংখ্যালঘুরা!
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের আসন্ন নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ভোট চূড়ান্ত ফলাফলে নির্ধারক ভূমিকা রাখতে পারে। নির্বাচনে জিততে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট পেতে হবে। এ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ ও আদিবাসীরা (বিএমই)। নির্বাচনে দ্যোদুল্যমান কয়েকটি আসনে জয়লাভের ক্ষেত্রে এটা জরুরি বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
এসব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরর মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পাঁচ লাখ ভোটার রয়েছেন। যেসব আসনের এমপিরা বিরাট ব্যবধানে জিততে পারেননি সেগুলোতে এসব ভোটাররা ভোটের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপিদের মধ্যে লেবার পার্টির টিউলিপ সিদ্দিক ও রূপা হক এমন দুটি আসনের প্রার্থী। টিউলিপ সিদ্দিক মাত্র এক হাজার ১৮ এবং রূপা হক ২৭৪ ভোটে গত নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসন থেকে নির্বাচন করছেন। এখানে কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে টিউলিপের। লন্ডনেরই ইয়েলিং সেন্ট্রাল ও অ্যাক্টন আসনের প্রার্থী রূপা হককেও একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে ।
বিএমই কমিউনিটির প্রতিনিধিত্বকারী বড় বৃহৎ একটি অ্যাডভোকেসি গোষ্ঠী অপারেশন ব্ল্যাক ভোট (ওবিভি) সম্প্রতি তাদের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পাওয়ার অব দ্য ব্ল্যাক ভোট ইন ২০১৭ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ, বিরোধী দল লেবার পার্টি ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে জিততে হলে সংখ্যালঘুদের ভোট পেতে হবে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ১০টি আসনে বর্তমান এমপিকে হারিয়ে যে কোনও দলের প্রার্থী জিততে পারেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে এসব আসনে যারা জয়ী হয়েছিলেন তারা সংখ্যালঘুদের ভোট বেশি পেয়েছিলেন। এই ১০টি আসনের মধ্যে সাতটিতে সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যাই বেশি। কম ভোটের ব্যবধান থাকা আটটি আসনসহ ১৫টি আসনে ভারতীয় জনসংখ্যা ১৫ শতাংশেরও বেশি।
ওবিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে ২০১৭ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে জিততে হলে কনজারভেটিব, লেবার ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের বিএমই কমিউনিটির ভোট পেতে হবে। বিভিন্ন জনমত জরিপে থেরেসা মে’র দল এগিয়ে থাকলেও বিএমই ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন। ফলে থেরেসা মে যেমন আশা করছেন তেমন বিপুল ভোটে জয় নাও পেতে পারেন। লেবার পার্টির জন্য এবার বিএমই কমিউনিটির ভোট ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। গত নির্বাচনে ৩৪টি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে জিততে লেবার পার্টিকে বিএমই ভোটারদের ওপর নির্ভর করতে হয়েছিল।
প্রতিবেদনটির উপসংহারে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের ভোট ধরে রেখে কনজারভেটিভ পার্টির জয়লাভের সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে পারে লেবার পার্টি। আবার সংখ্যালঘুদের ভোট পেলে নিরঙ্কুশ বিজয়ও নিশ্চিত করতে পারবে থেরেসা মে’র রক্ষণশীল পার্টি।
গবেষণা অনুসারে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ২০০টির মধ্যে প্রায় অর্ধেক (৯৬) আসনে ভোটের চূড়ান্ত ফলে সংখ্যালঘুদের ভোট বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এসব আসনে সংখ্যালঘুদের ভোটই ফল নিশ্চিত করে দেবে বলে গবেষণায় উঠে আসে।
ওই গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ছয়টি আসনে এশিয়ান বংশোদ্ভূত ভোটারের সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি। এগুলো হচ্ছে- লিচেস্টার ইস্ট, ইলফোর্ড সাউথ, ব্র্যাডফোর্ড ওয়েস্ট, ইস্টহ্যাম, ব্রেন্ট নর্থ ও ইয়েলিং সাউথ হল। এছাড়া লন্ডনের হ্যারো ওয়েস্ট ও হ্যারো ইস্ট উভয় আসনেও বিপুল সংখ্যায় এশিয়ান মানুষ বাস করেছেন। শতাংশের হারে যথাক্রমে ৪২ ও ৪৫। লেবার ও কনজারভেটিভ পার্টি দুটি আসন ভাগাভাগি করেছে গত নির্বাচনে।
উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পারে এশিয়ান জনসংখ্যা এমন আরও কয়েকটি আসন রয়েছে লন্ডন ও ইয়র্কশায়ারে। এর মধ্যে লন্ডনের ব্রেন্টফোর্ড ও আইলেওয়ার্থ এবং হেন্ডন, ইয়র্কশায়ারের ডেউজবারি।
অপারেশন ব্ল্যাক ভোট-এর পরিচালক সাইমন উলেই বলেন, ব্রিটেনের ব্রেক্সিট, অভিবাসন ও ব্রিটিশ পরিচিতি ইস্যুর মাঝপথে রয়েছে। এসব ইস্যু ৮ জুনের নির্বাচনে কেমন প্রভাব রাখে তা দেশটির আগামী দিনের গতিপথ নির্ধারণ করবে। মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিতর্কে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কী পরিমাণে অংশ নেবেন।
ওবিভির এই প্রতিবেদন এমন সময় প্রকাশ করা হলো যখন আরও কয়েকটি বর্ণবৈষম্যবিরোধী সংস্থা ম্যানিফেস্টো ফর রেস ইকুয়ালিটি ইন ব্রিটেন প্রকাশ করেছেন। এই ইশতেহারে ২০টি বিভিন্ন বর্ণের মানুষের জোট গড়ে তোলা হয়েছে। এতে কর্মসংস্থান, আবাসন ও অপরাধীর বিচারে বর্ণবৈষম্য দূর করার নীতিও প্রস্তাব করা হয়েছে।
ব্রিটেনের সংখ্যালঘুদের ভোট সাধারণত লেবার পার্টির ঝুলিতেই যায়। কিন্তু ২০১৫ সালে এ প্রবণতায় বড় ধরণের বিপর্যয় ঘটে। ওই সময় দলের নেতা এড মিলিব্যান্ড সংখ্যালঘু ভোটারদের মাত্র ৬৮ শতাংশকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অথচ আগের বছরে এই হার ছিল ৮০ শতাংশ। এবারের ২০১৭ সালের আগাম নির্বাচনে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে সংখ্যালঘু ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।