বৃথা গেল তামিমের সেঞ্চুরি
---
স্পোর্টস ডেস্ক : ব্যাট হাতে নিজেদের কাজটা করে দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা। ৩০৬ রানের টার্গেট মোটেও মামুলি নয়। বল হাতে শুরুতেই জেসন রয়কে ফিরিয়ে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। কিন্তু সেই আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হলো না। বাকী বোলারদের ব্যর্থতায় ৮ উইকেটের বড় জয় তুলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে শুভ সূচনা হলো স্বাগতিক ইংল্যান্ডের। হেলসের ৯৫, রুটের সেঞ্চুরি আর অধিনায়ক মরগ্যানের অর্ধশতাধিক রানের ইনিংসে সহজেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে গেল স্বাগতিকরা। বৃথা গেল তামিম ইকবালের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। রুট ১৩৩* এবং মরগ্যান ৭৫* রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন।
বৃহস্পতিবার লন্ডনের কেনিংটন ওভালে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ৩০৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। একপ্রান্তে ধীরস্থির খেলতে থাকেন তামিম। অপর প্রান্তে আস্তে আস্তে খোলস ছেড়ে বের হন সৌম্য। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৬ রান আসার পর ছন্দপতন! অলরাউন্ডার বেন স্টোকসের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান ৩৪ বলে ৪ বাউন্ডারি এবং ১ ওভার বাউন্ডারিতে ২৮ রান করা সৌম্য। সৌম্য সরকারের বিদায়ের পর খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। তার ব্যাটে দেখা যায় শটের ফুলঝুড়ি। সঙ্গী হিসেবে অনেকদিন পর পান ইমরুল কায়েসকে। ভালোই খেলছিলেন ইমরুল। কিন্তু দলীয় ৯৫ রানে প্ল্যাঙ্কেটের বলে মার্ক উডের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন তিনি। আউট হওয়ার আগে তিনি ২০ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৯ রান করেন।
দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালের প্রতিশব্দ হয়ে উঠছে ‘ধারাবাহিকতা’। নিয়মিত রান আসছে তার ব্যাটে। আজ ২ উইকেট হারানোর পর দলকে ভরসা দেন তিনি। প্ল্যাঙ্কেটকে সীমানাছাড়া করে ৭১ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ক্যারিয়ারের ৩৭তম ফিফটি করেন। এরপর তার যোগ্য সঙ্গী হয়ে আসেন মি. ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। দুজনে মিলে ইংলিশ বোলারদের ওপর নির্বিচারে আক্রমণ শুরু করেন। মুশফিক এদিন দেখা দেন বিধ্বংসী রূপে। ৪৮ বলে ৪ বাউন্ডারিতে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন। এরপরই ১২৪ বলে ১১ চার এবং ১ ছক্কায় ক্যারিয়ারের ৯ম সেঞ্চুরি পূরণ করেন তামিম।
অন্যাপ্রান্তে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকটে জুটিতে এসে গিয়েছিল ১৬৬ রান। এরপরেই ছন্দপতন ঘটে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। প্ল্যাঙ্কেটের বলে থামতে হয় তামিমকে। বাটলারের গ্লাভসবন্দী হওয়ার আগে তিনি ১৪২ বলে চার এবং ৩ ছক্কায় ১২৮ রান করেন। পরের বলে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিকুর রহিমও! তার ৭২ বলে ৮ বাউন্ডারিতে গড়া ৭৯ রানের ইনিংসটি শেষ হয় হলসের হাতে ধরা পড়ে। এরপর যথারীতি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে ১০ রানেই সাজঘরে ফিরেন সাকিব। সাব্বির ১৫ বলে ২৪ রান করে দলের রান ৩০০ পার করতে অবদান রাখেন। মাহমুদ উল্লাহ ৬ এবং মোসাদ্দেক ২ রানে অপরাজিত থাকেন।
এরপর বল হাতে নেমে দলকে শুরুতেই আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ইংলিশদের দলীয় ৬ রানেই বিপজ্জনক জেসন রয়কে (১) মুস্তাফিজের দারুণ ক্যাচে পরিণত করেন ম্যাশ। কিন্তু দ্রুত সেই বিপদ কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়ায় ইংলিশরা। দ্বিতীয় উইকেটে জো রুট আর অ্যালেক্স হেলসের ১৫৯ রানের জুটি গড়েন। বোলারদের বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেও সাফল্য পাচ্ছিলেন না মাশরাফি। এরপর সাব্বিরকে আনতেই ম্যাজিক! ৯৫ রানের আক্ষেপ নিয়ে সাব্বিরের প্রথম ওভারের শেষ বলে বদলি ফিল্ডার সানজামুলের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হলেন হেলস।
কিন্তু সাফল্য যেন আসছিল না। সাকিব, মুস্তাফিজ, রুবেল, মোসাদ্দেকরা ব্যর্থতার বোঝা ভারী করতে লাগেলন। এমন সময় ৩৬ তম ওভারে বল করতে এসে ইংলিশ অধিনায়ক মরগ্যানকে তামিমের ক্যাচে পরিণত করেন অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু মরগ্যানের আবেদনে থার্ড আম্পায়ার ডাকা হয়। ফুটেজে বোঝা যায়নি বলটি তামিমের তালুবন্দী হওয়ার আগে মাটিতে পড়েছে কিনা। তাই হয়তো বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়ে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ পেলেন মরগ্যান।
এরপর জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি ইংলিশদের। বল হাতে উইকেটশুন্য থাকলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব, রুবেল, কাটার মাস্টার খ্যাত মুস্তাফিজ, মোসাদ্দেক হোসেনরা। সাব্বির ১ উইকেট পেলেও ১৩ রান দেওয়ায় তাকে আর বোলিংয়ে আনেননি মাশরাফি। সৌম্য সরকারও ২ ওভার বল করে ১৩ রান দিয়ে উইকেটশুন্য। সর্বোপরি বোলিং ব্যর্থতায় হার দিয়েই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু হলো বাংলাদেশের।