মন্ত্রীদের ৪০ দামি গাড়ি পড়ে আছে
---
নিউজ ডেস্ক : ক্যামব্রি হাইব্রিড কার। কালো রঙের বিলাস বহুল গাড়ি। প্রতিটি গাড়ি ৭৫ লাখ টাকায় কেনা। বর্তমান বাজার মূল্য এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদের ব্যবহারের জন্য এ রকম ৫০টি গাড়ি কেনা হলেও সরকারি পরিবহনপুলে এক বছর ধরে ৪০টি গাড়ি পড়ে রয়েছে। কারণ মন্ত্রীরা তাদের জন্য কেনা এসব গাড়ি ব্যবহার করেন না। তবে গাড়ির বিপরীতে বরাদ্দ জ্বালানির টাকা চলে যায় তাদের বেতনের সঙ্গে। তারা ব্যবহার করেন বিভিন্ন দফতর, অধিদফতর ও প্রকল্পের গাড়ি। পুলে পড়ে থাকতে থাকতে গাড়িগুলো এখন বিকল হওয়ার উপক্রম। সূত্র জানায়, গাড়িগুলো ঠিক রাখতে ওগুলোকে মাঝেমধ্যে পুলের ভিতরেই ঘুরপাক খাওয়ানো হয়। এর বাইরে এই গাড়ি ও তার চালকদের কোনো কাজ নেই।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেয়। তাদের জন্য বরাদ্দ গাড়িগুলো পুরনো হয়ে যাওয়ায় ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রিসভার সদস্যরা নতুন গাড়ির দাবি জানিয়েছিলেন। তাদের দাবি ছিল জিপ গাড়ির। প্রধানমন্ত্রী জিপ গাড়ির প্রস্তাব নাকচ করে হাইব্রিড কার কেনার অনুমোদন দেন। সরকার ২০১৬ সালে জুন মাসে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে জাপান থেকে কেনে ৫০টি হাইব্রিড ক্যামব্রি সিডন কার। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্রয় করা গাড়ি জুলাই মাসেই দেশে আসে। এর পরপরই গাড়িগুলোর রেজিস্ট্রেশন হয়। নম্বর পড়ে ঢাকা মেট্রো ভ-১১-১৮০১ থেকে ১৮৫০ পর্যন্ত। ব্যস এই পর্যন্তই! গাড়িগুলো পরিবহন পুলেই পড়ে থাকল। সূত্র জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই এত দামি ও বিলাসবহুল গাড়ি মন্ত্রীদের জন্য দেওয়া হয় না।
সূত্র জানায়, নতুন এসব গাড়ি আসার পর শুরু থেকেই সরকারের হাতে গোনা কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী তাদের নামে বরাদ্দকৃত গাড়ি নিয়মিত ব্যবহার করছেন। এদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তাদের নামে বরাদ্দকৃত গাড়িগুলো নিয়মিত ব্যবহার করছেন। এর বাইরে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন সিকদার ও উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় মাঝেমধ্যে ব্যবহার করেন। পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, পরিকল্পনামন্ত্রী আ. হ. ম. মুস্তফা কামাল ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। তারা কখনই সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন না।
সূত্র জানায়, প্রতিটি গাড়ির জন্য দৈনিক ১৮ লিটার জ্বালানি বা অকটেন বরাদ্দ। সেই হিসেবে প্রতিটি গাড়ি বাবদ (প্রতি লিটারের মূল্য ৮৯ টাকা ১৮) হিসাবে মাস শেষে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদের বেতনের সঙ্গেই তাদের ব্যাংক হিসাবে ৪৮ হাজার ৬০ টাকা জমা হচ্ছে। এই টাকায় আর তেল কেনা হয় না। প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহারের কারণে তেল তো প্রকল্পই কিনে দিচ্ছে। বিভিন্ন দফতর, অধিদফতর, সংস্থা ও প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার করছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীরা। তাই তাদের সরকারি গাড়ির চালকরা ‘বেকার’ বসে থাকছেন। তাদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিবহন পুলেই আড্ডা, ক্যারম খেলে অলস সময় পার করতে হচ্ছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের চাপা অসন্তোষ আছে বলে জানা গেছে। বিডি-প্রতিদিন