g মানব সেবা : মহৎ জীবনের পাঠ | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শনিবার, ২১শে অক্টোবর, ২০১৭ ইং ৬ই কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

মানব সেবা : মহৎ জীবনের পাঠ

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ১১, ২০১৭
news-image

---

মোঃ কায়ছার আলী : “জীবে দয়া করে যে জন, সে জন সে বিছে ঈশ্বর।” বাঙালী সাধক স্বামী বিবেকানন্দের এ মহান কালজয়ী উক্তি দিনে ২২ ঘন্টা কঠোর পরিশ্রম করে এক বিস্ময়কর প্রশান্তি অর্জন করে “সেবাই ধর্ম” এ মর্মবাণীকে বড় প্রেরণা মনে করে নিজ জীবনকে মানবতার জন্য সারা জীবন উৎসর্গ করে গেছেন তিনি হলেন আধুনিক নার্সিং এর প্রবর্তক মমতাময়ী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। এক মুহূর্তের জন্যে ও তাঁর স্বভাবের কোন বিরক্তি, কোন ব্যস্ততা, ব্যবহারে কোন বিভ্রান্তি প্রকাশ করত না। খাদ্য, বিশ্রাম বা গরম তাঁর মহান কাজে কখনো বাধার সৃষ্টি করতে পারত না। ১৮২০ সালের ১২ই মে জমিদার ধনী, বৃটিশ বাবা মায়ের কণ্যা ইটালির ফ্লোরেন্স শহরে ভ্রমনের সময় জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থান ফ্লোরেন্স শহরের নামানুসারেই তাঁর নাম রাখা হয়েছিল। ছোটবেলা থেকে পারিবারিক স্বচ্ছলতার কারণে কোন কিছুর চাহিদা অপূর্ণ রাখেননি তাঁর পরিবার। ১৭ বছর বয়সে তিনি যে অন্তর থেকে অনুভব করতে শুরু করলেন মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁকে দিয়ে কিছু করাতে চান। কিন্তু কি বিষয় সেটা উপলব্ধি করতে করতে পেরিয়ে গেল বেশ কয়েক বছর। তাঁর ছোটবেলা ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ার অঞ্চলে তাঁদের পুরনো বাড়িতে কেটেছে। নাইট ক্লাবে যাওয়া বা কেতাদুরস্ত জীবন কখনো কোমল মনের অধিকারী ফ্লো কে ভালো লাগত না, বরং গ্রাম্য পরিবেশ আর দুস্থ-অসহায় মানুষের পাশাপাশি হাঁস, মুরগি,ভেড়া অসুস্থ হলে তিনি সেবা করতেন। অপরিসীম মমতা থাকার কারণে তিনি মানুষের দুর্ভাগ্যকে নিজের দুর্ভাগ্য হিসেবে মনে করতেন। আহত মানুষের কথা শুনলে তাঁর চোখ গভীর মমতায় ছলছল করে উঠত। তাদের জন্য কিছু করার একটা তাগাদা সববসময় অনুভব করতেন। নিজের মহল্লার মধ্যে কোন আহত বা অসুস্থ মানুষের কথা শুনলে কালবিলম্ব না করে ছুটে যেতেন সেই ছোট্ট বয়সেই। চেষ্টা করতেন কিভাবে সেবা করা যায়? ফলে আশেপাশের সামাজিক পরিবেশে তিনি সকললের প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। বাল্যকালেই দেখলেন একদিন এক নির্দয় বালক একটি কুকুরকে পাথর দিয়ে ঢিল মেরে আহত করলেন। তিনি দেখলেন যে আহত কুকুরটি হাঁটতে পারছে না। তিনি কুকুরটিকে তুলে আনলেন এবং সেবা করে সুস্থ করে তুললেন। এ ঘটনা তাঁর মনকে সেবিকা হওয়ার পেছনে অনুপ্রেরণ যোগায়। ২০ বছর বয়সেই তিনি সঙ্গীত, ছবি আঁকার পাশাপাশি গ্রীক, ল্যাটিন, জার্মানি, ফ্রেঞ্চ ভাষা আয়ক্ত করে ফেললেন। পিতার পাশাপাশি পড়াশোনা বিষয়ক প্রকৃত গাইড হিসেবে ছিলেন তাঁর বোন প্যানথেনোপ। তাঁদের পিতা অভিজাত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হওয়ায় বিভিন্ন মন্ত্রী, বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি তাঁদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। গতানুগতিক শিক্ষার প্রতি তিনি সামান্যতম আকর্ষন অনুভব করতেন না। বরং তাঁর ইচ্ছা ছিল কিভাবে সেবাকে জীবনের ব্রত হিসেবে পালন করা যায়। সে সময় সেবাকে কোন পেশা হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হত না। হাসপাতালগুলোর অবস্থা ছিল যেমনি ভয়াবহ তেমনি করুন। সেবিকা হওয়ার ইচ্ছার কথা শুনে তাঁর পিতা-মাতা চমকে উঠলেন। আপত্তির ঝড় উঠল সামাজিক ও পরিবারিক পর্যায়ে। মেয়ের ইচ্ছার যেন পরিবর্তন হয় তাই তাঁকে দেশ ভ্রমণে পাঠিয়ে দিলেন। ভ্রমনে গিয়ে তিনি রোমান ক্যাথলিক কনভেন্টে সন্ন্যাসিনীদের সেবামূলক কাজ দেখে উৎসাহিত হলেন। তিনি সেখানে (জার্মানে) তিন মাস প্রশিক্ষণ নিলেন এবং ভাবলেন ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে এ ধরনের একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন।২৮ বছর বয়সে ৩৮ বছরের সম্ভান্ত, সুঠাম চেহারার সিডনি হার্বাটের সাথে ইউরোপ ভ্রমনের সময় প্রগাড় বন্ধুত্ব হয়। তিনি জানতেন বিয়ে করলে সেটা সেবার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ইউরোপের হাসপাতালের কাজকর্ম কাজের পদ্ধতি তিনি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলেন। হাসপাতাল ছিল রীতিমতো আতঙ্কের জায়গা। সেখানে যেতে লোকেরা ভয় পেত। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর, দূষিত পরিবেশ, বিভিন্ন রোগের আক্রান্তদের গাদাগাদি করে একসঙ্গে রাখা স্যাঁতস্যাঁতে ছাতা পরা মেঝে, ভ্যাপসা গন্ধ এগুলো ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে এলে তাঁর পিতামাতা মনে করলেন তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে। কিন্তু তিনি আবার বললেন আমি সেবিকা হতে চাই। পুনরায় মেয়ের কথা শুনে বাবা-মা চমকে উঠলেন। বিভিন্ন ভাবে বাধা দিয়ে ব্যর্থ হলেন এবং পরিশেষে অশ্রুসিক্ত চোখে মেয়ের ইচ্ছার সম্মতি দিলেন। ১৮৫৪ সাল। তখন ব্রিটিশ সেনাবাহিনী পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তারা কোন যুদ্ধে হারবে না এটা প্রত্যেক ব্রিটেন বাসী মনে করে। ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং তুর্কির সাথে জোট বেঁধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল। ঝকমকে ইউনিফর্ম পড়া সৈন্যরা জাহাজে ঊঠেছে, যে জাহাজ তাদের নিয়ে যাবে কৃষ্ণ সাগরের এক উপদ্বীপ ক্রিমিয়ায়। রোদে ঝলমল করছে পতাকা, ব্যান্ড বাজছে, প্যারেডের পুরোভাগে গর্বিত ভঙ্গিত ড্রাম বাজছে। এই দৃশ্যটা ইতিহাসের সোনালি পাতায় আজও লেখা রয়েছে অবরুদ্ধ তুর্কিদের সাহায্য করতে উত্তরের দিকে জাহাজ নিয়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী অগ্রসর হল। তখনও কেউ ভাবতে পারেনি তারা পর্যদুস্ত হবে রোগ, বিশৃঙ্খলা, ঠান্ডার প্রকোপ আর ক্ষুধার কাছে। যুদ্ধ শিবিরে হঠাৎ ভয়ানক কলেরা মহামারীর আকারে রূপ নিল। ব্রিটিশ সেনারা শুনতে লাগল পানিতে মৃতদেহ ছুড়ে ফেলার ঝপাং ঝপাং শব্দ। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই সমগ্র সেনাবাহিনী প্রায় অকেজো হয়ে পড়ল। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী কৃষ্ণ সাগর পেরিয়ে সেবাস্তোপোলের দিকে শুধুমাত্র সৈন্যদের নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। মালবাহী পশু, তাঁবু, উনুন, ঔষধপত্র, হাসপাতাল, বিছানা অন্যান্য জিনিসপত্র সব পরে রইল খোলা মাঠে জন্তু-জানোয়ারের নাদিমাখা খড়ের উপর। চিকিৎসা ব্যবস্থা তছনছ হয়ে গেল। ব্রিটিশ পত্রিকায় এমন খবর প্রকাশ হলে জনগনের চাপে সরকার বাধ্য হয়ে আহত অসুস্থ সৈন্যদের তত্ত্বাবধান করবার মত কেউ না থাকায় আত্মীয় পরিজনের সব বাধা উপেক্ষা করে ফ্লোরেন্স নাইপিঙ্গেল ৩৮জন মহিলার একটি দল তৈরী করে যুদ্ধক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য রওনা হলেন। তিনি সেখানে পৌঁছে দেখলেন খোলা বারান্দা, নোংরা ওয়ার্ড, পাঁক ভর্তি ডোবা আর রাবিশে ভরা চারিদিক। চার মাইল লম্বা বিছানার সারি ফুটাখানেক তফাতে আহতরা শুয়ে আছে। সংক্রমক রোগ আর কীট-পোকা অনায়াসে বিচরণ করছে সেনা নিয়ন্ত্রিত হাসপাতালে। পরিকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে, মূল্যবান খাদ্য সামগ্রী নষ্ট হয়ে পঁচে যাচ্ছে সংরক্ষনের অভাবে। নেই অপারেশন টেবিল, ঔষধপত্রের যোগান, আসবাবপত্র, নার্সদের ঘরে ছিল ইঁদুর আর নীল মাছির উৎপাত কোন স্যসপেন বা কেটলি নেই। যে পাত্রে মাংস ফোটানো হয়েছে। সেই পাত্রেই চা তৈরী হচ্ছে। প্রয়োজনীয় লন্ঠন ও মোমবাতি নেই, রাতে শোনা যেত ইঁদুর চলাফেরার শব্দ। রুগ্ন ও আহতদের এক বিশাল তরঙ্গ আছড়ে পড়ল স্কুতারির উপর। নিকটবর্তী ছাউনিটি পরিবর্তিত হল আবর্জনার একস্তুপে মৃতদেহ, আর কেটে বাদ দেয়া হাত-পা ভাসতে লাগলো সেই তরঙ্গহিন সমুদ্রে। দুর্গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে উঠল। প্রচন্ড শীত, গরম খাবারের অভাব, ঠান্ডায় জমে যাওয়া মাটি ছাড়া শোবার কোন জায়গা নেই। চারদিকে অসুখ আর গ্রাংগ্রীণ- সেএক নারকীয় অবস্থা। বাঁধ ভাঙা পানির মত অসুস্থদের ঢেউ আর ঢেউ। মেঝের প্রতিটি ইঞ্চি ভরে গেল মানুষে। বালিশের অভাবে জুতা মাথায় দিয়ে তারা খালি তক্তার ওপরেই শুয়ে পড়ত। কুড়িটি বিষঠা পাত্র থাকলেও অন্তত এক হাজার মানুষ ভুগছিল পেটের রোগে। কথায় আছে “মরার উপর খড়ার ঘা”। নভেম্বরের ১৪ তারিখে এল এক প্রবল ঝড়। সৈন্য বাহিনীর সব তাঁবু উড়ে গেল। শুধু লোকগুলো পড়ে রইল একেবারে খোলা আকাশের নীচে। প্রতিটি জাহাজ ডুবে গেল। সদ্য জাহাজে আসা অতি প্রয়োজনীয় গরম কাপড় ও জিনিসপত্র সেটিও বাদ রইল না। সেই আতঙ্কজনক পরিস্থিতিকে “বিপর্যয়ের ইতিহাসে তুলনাহীন বিপর্যয়” বলা হয়। মানুষের অবিশ্বাস্য রকমের ভালোবাসা ফ্লোরেন্সকে প্রেরণা জুগিয়েছিল। তিনি যেমনি দয়ার প্রতিমূর্তি তেমনি কাজের ক্ষেত্রে কঠিন, কঠোর অর্থাৎ সামান্যতম বিশৃঙ্খলা বিচ্যুতি সহ্য করতে পাতেন না। কখনো কখনো আট ঘন্টা এক নাগাড়ে হাটুতে ভর দিয়ে ক্ষতস্থান পরিস্কার করে আহতদের ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছেন। কখনো তাদের পোশাক পড়িয়ে দিয়েছেন। নিজ হাতে রোগীদের জন্য খাবার তৈরী করেছেন এবং সহকর্মীর হাতে হাত লাগিয়ে হাসপাতালের আঙিনা পরিষ্কার করেছেন। যখন কারো অস্ত্রোপচার করতেই হতো তখন তিনি তার পাশে থাকতেন। তাদের মনে আশার সঞ্চর করতেন, তাদের সাথে কথা বলতেন হেসে হেসে। দিনে সম্ভব না হলে তিনি রাতে তুর্কি প্রদীপ হাতে নিয়ে সেই চার মাইল লম্বা বিছানার সারি ধরে ঘুরে দেখতেন। যখন আলো হাতে নিয়ে ঘুরে দেখতেন তখন রোগীরা মুদ্ধ বিষ্ময় চোখে তাঁকে দেখত। তাদের মনে হত এক মূর্তিময়ী দেবী যেন তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তারা সব দু:খ যন্ত্রণা মুহুর্তে ভুলে যেতেন। একজন সৈনিক চিঠিতে লিখেছিলেন, যখন তিনি আমাদের পাশ দিয়ে হাঁটতেন, এক অনির্বচনীয় আনন্দে আমাদের মন প্রাণ ভরে উঠত, তিনি প্রত্যেকটি বিছানা অতিক্রমের সময় তাঁর ছায়া পড়ত আমাদের শয্যার উপর। সৈনিকরা পরম শ্রদ্ধার সাথে সেই ছায়াকে চুম্বন করত। প্লিজ পাঠকেরা ভাবুনতো এতবড় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পাওয়া কি কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব? এজন্যই তো তিনি মানব ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তখন তারা বলত, “দীপ হাতে রমনী” এই নামেই তিনি সমস্ত পৃথিবীর মাঝে অমর হয়ে রইলেন। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালের দুরত্ব কিন্তু কম ছিল না। তথাপি কোন দায়িত্ব ভার গ্রহণে তিনি অসম্মতি প্রকাশ করতেন না। প্রবল তুষারপাত বৃষ্টির মধ্যেই তিনি বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে বেড়াতেন। সেখানকার কাজের তত্ত্বাবধান করতেন। তাঁর আন্তরিক চেষ্টায় মুত্যুর হার হাজারে থেকে ষাটে এসে দাঁড়াল। যুদ্ধের পরে তাঁর কাজ শেষে ফিরে করে আসার সময় নিজ ডায়েরীতে লিখলেন “হায় আমার দুর্ভাগ্য সন্তানেরা, আমি অত্যন্ত দুষ্টু মায়ের মত তোমাদের ক্রিমিয়ার কবরে ফেলে রেখে নিজে ঘরে ফিরলাম। ছ’মাসে আটটা রেজিমেন্টার ৭৩ শতাংশই শুধু অসুখে মারা গেল – কে আর ভাবে এখন সে কথা”। ক্রিমিয়-জ্যোতি হিসেবে সারাদেশে ভরে গেল স্মারক, মগ, প্লেট, মাটির তৈরি আবক্ষ মূর্তি, কবিতা, রেসের ঘোড়ার নাম, লাইফ বোটের নাম আর জীবনীতে। তখন তাঁর মা ফ্যানি আবেগে অভিভূত হয়ে পড়লেন। ফ্লোকে তিনি চিঠিতে লিখলেন, মেয়ের জন্য আজ তার কত গর্ব। অতীতকে এক পাশে সরিয়ে রেখে ফ্লোরেন্স উত্তরে লিখলেন, “আমার খ্যাতি আমার কাছে আশীর্বাদ হয়ে আসেনি, তবু যদি তুমি খুশি হয়ে থাক, তাই-ই আমার অনেক।” ক্রিমিয়া যুদ্ধের (১৮৫৩ থেকে ১৮৫৬) পর নার্সদের জন্য যা যা দরকার তা তাঁর চোখে পড়ল। তিনি উপলব্ধি করলেন, কিভাবে নাসিং কে একটি সম্মানজনক পেশায় পরিনত করা যায়? তার জন্য সংস্কার, নির্দিষ্ট আচরণ বিধি এবং সাফল্যের মাপকাঠি বা ব্যবস্থাপনা এ সম্পর্কে তাঁর চেয়ে আর বেশি কেউ জানত না। আজকের হাসপাতালের ফুলদানিরতে রাখা ফুল আর উজ্জ্বল, পরিচ্ছন্ন ও মনোরম ওয়ার্ড তাঁরই কাজের প্রত্যক্ষ ফল। ১৮৫৯ সালে তিনি “নোটস অন হসপিটালস” নামে একটি বই লিখলেন। এতে তিনি দেখালেন, কেন মানুষ হাসপাতালে যেতে ভয় পায় আর কিভাবে এ অবস্থার উন্নতি ঘটানো যায়? তিনি লিখেছেন জীবনযাত্রার ন্যুনতম মানই সৈনিকদের মুত্যুর কারণ। সুষম খাদ্যের অভাব আর বিভিন্ন রোগে ভোগে অযতœ অবহেলায় প্রতিবছর ১৫০০ জন মারা যায়। যদিও সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে শক্ত সামর্থ ছেলেদের ভর্তি নেওয়া হয়। অতিরিক্ত কাজের চাপে বা মন খারাপের ফলে (সাধরণত পারিবারিক কারণে) তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হল। তিনি প্রায় দুর্বলতা, ক্লান্তি আর শ্বাসকষ্টে ভুগতেন। ১৮৭৪ সালে এক কঠিনতম সময়ে তাঁর পিতার মৃত্যু হলে তিনি শোকে মূহ্যমান হয়ে যান। ক্রিমীয় থেকে আসার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁর সম্মানে একটি আলাদা জাহাজ পাঠাতে চাইলেন। কিন্তু সে অনুরোধ তিনি প্রত্যাখ্যান করে সকলের সাথেই দেশে প্রত্যাবর্তন করলেন। সমস্ত দেশ তাঁকে সম্মান জানানোর জন্য প্রস্তুত কিন্তু নাম নিয়ে হৈ চৈ করা তাঁর অপছন্দ ছিল। শুধুমাত্র মহারানী ভিক্টোরিয়ার দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি যোগদান করেছিলেন। ধীরে ধীরে তাঁর দৃষ্টিশক্তি কমতে কমতে প্রায় অন্ধ হয়ে গেলেন। ১৯০৭ সালে নভেম্বর মাসে ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম অ্যাডওয়ার্ড ফ্লোরেন্স নাইটঙ্গেলকে ‘অর্ডার অব মেরিট’ সম্মানে ভূষিত করলেন। ১৯১০ সালে মে মাসে অনুষ্ঠিত হল “নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল ফর নার্সেস” এর সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব। ১৯১০ সালে ১৩ আগষ্ট তিনি ৯০বছর বয়সে ঘুমে ঢলে পড়লেন- সে ঘুম আর ভাঙ্গল না। “দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প” এর নিজস্ব ইচ্ছা অনুযায়ী এম্বলিতে তাঁদের আদি বাড়ির কাছাকাছি শান্ত স্থানে, অনাড়ম্বরভারে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ করা হল। শুধু একটি ছোট্ট ক্রুশ স্মৃতিফলক হিসেবে চিহ্নিত করছে তাঁর সমাধি। এফ.এন. জন্ম ১৮২০, মৃত্যু ১৯১০ এর চেয়ে মহৎ কোন স্মৃতিসৌধ চাননি মহীয়সী মমতাময়ী, কোমলমতি, চির কুমারী এবং শ্রেষ্ঠ এই নারী।
লেখকঃ শিক্ষক, ০১৭১৭-৯৭৭৬৩৪, [email protected]
(বিস্তারিত) এম.এস.এস (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), বি.এড (১ম শ্রেণী)। সহকারী প্রধান শিক্ষক। ফরক্কাবাদ এন.আই স্কুল এন্ড কলেজ। বিরল, দিনাজপুর।

এ জাতীয় আরও খবর