‘আ.লীগ ক্ষমতায় না থাকলে টাকাপয়সা নিয়ে পালাতে হবে’
নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বলেছেন, ক্ষমতা বেশি দিন থাকে না। তাই ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। এটা ভালো নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে টাকাপয়সা নিয়ে পালাতে হবে। কী, সেটা কি ভাবেন না? পার্টি যদি ক্ষমতায় থাকে, এখন যে টাকাপয়সা রোজগার করছেন, এই টাকা নিয়ে তখন পালিয়ে বেড়াতে হবে।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ওবায়দুল কাদের এই মন্তব্য করেন। শনিবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
প্রতিনিধি সভায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা দলের সাংগঠনিক চিত্র তুলে ধরেন। তবে কেউ দলের বিভক্তি বা দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বলেননি। তৃণমূল পর্যায়ের সব নেতার লিখিত বক্তব্য নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের কাছে জমা দিতে হয়েছে। প্রতিনিধি সভায় সুশৃঙ্খলভাবে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা নিজেদের ইউনিটের সাংগঠনিক চিত্র তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে পতেঙ্গা-হালিশহর আসনের সাংসদ এম এ লতিফের নাম উচ্চারিত হলে তৃণমূলের নেতারা চিৎকার করে ওঠেন।
নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিনের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নাছিরের বিরোধ মিটিয়ে যাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা অসাধ্য সাধন করেছেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা ভুটানে যাচ্ছিলেন। ঢাকা বিমানবন্দরে পত্রিকার পাতায় আপনাদের দুজনের পাশাপাশি হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখে নেত্রীর চোখেমুখে যে হাসি ছিল, সেটা অকুণ্ঠ মনোযোগে আমি লক্ষ করেছি। চট্টগ্রাম ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি। চট্টগ্রাম ঐক্যবদ্ধ থাকলে সারা বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ থাকার চিন্তা করে।’
কাদের বলেন, ‘আজকে চট্টগ্রাম বিভাগের মুরব্বি মহিউদ্দিন ভাই, যাঁরে আমি মুরব্বি মনে করি। দলকে আপনারা ঐক্যবদ্ধ রাখেন, শৃঙ্খলায় রাখেন। এটা আপনাদের কাছে কামনা করি। আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত দল হিসেবে গড়ে তোলেন।’
চট্টগ্রামের শীর্ষ দুই নেতার উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, যা হওয়ার হয়ে গেছে। সামনে আর বিভেদের দিকে যেতে চাই না। আমি তো নাছিরকে বলি, তিনি (নাছির) মহিউদ্দিন ভাইয়ের ছেলের মতো। নাছির ভুল করলে আপনি (মহিউদ্দিন) ঘরে নিয়ে শাসন করবেন। সেই অধিকার আপনার আছে। কিন্তু আমরা এভাবে ঘরের কথা পরকে বলতে পারি? কেউ না। কেউ ধৈর্য ধরতে পারেনি। এই ধৈর্য ধরা উচিত ছিল।’
চাটুকারদের কাছ থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, ‘আমি মন্ত্রী, খারাপ কাজ করি না। কিন্তু আমার আশপাশের লোকেরা খারাপ কাজ করলে দায় আমাকে নিতে হবে।’
হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘আমরা হেফাজতের সঙ্গে কোনো চুক্তি করিনি। একটা শিক্ষাব্যবস্থাকে মূলধারায় নিয়ে এসেছি। ৭০ হাজার কওমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৪ লাখ ছাত্র। এদের কোনো ঠিকানা নেই, ভবিষ্যৎ নেই। এরা ভবিষ্যতে চাকরি পাবে—এর কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় এদের ফিরিয়ে এনেছি।’
অনুষ্ঠানে গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দলের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকবে। সেটা আমরা বসে ঠিক করব। তবে নির্বাচনের বাকি দেড় বছর। ভুল–বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে কেউ আমাদের ঠেকাতে পারবে না।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আজকের প্রতিনিধি সভায় প্রমাণিত হয়েছে, এই আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। আগামী নির্বাচনে এই তৃণমূলের নেতারা আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনবে।
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ঐক্য ও সংহতির কোনো বিকল্প নেই। আজকে সেটা চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ করে দেখিয়েছে।