নাশকতার রসদ আনতে নৌপথ ব্যবহারের পরিকল্পনা জঙ্গিদের : র্যাব
নিজস্ব প্রতিবেদক : নৌপথে দেশের অভ্যন্তরে নিরাপদে রসদ আনার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারী জাহাজে কর্মরত ব্যক্তিদের নিজ দলে ভিড়িয়ে তাদের সহায়তায় এ কাজ করতে চেয়েছিল তারা। কয়েকজনকে নব্য জেএমবিতে ভেড়াতেও সক্ষম হয়েছিল জঙ্গিরা। আজ শুক্রবার কারওয়ান বাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান।
উল্লেখ্য, গতকাল রাতে সাভারের রাজফুলবাড়ীয়া বাসস্ট্যান্ডে একটি বাস থেকে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, গুলি, প্লাস্টিক বিস্ফোরকসহ আইইডি তৈরির সরঞ্জামাদি, চাপাতি, ফোল্ডিং চাকু ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ধর্মান্তরিত তামিম দ্বারী ওরফে আব্দুল্লাহ আল হাসান ওরফে আজিজুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ আল জাফরি ওরফে আমীর হামযা ওরফে আল হুযাইফা ওরফে শ্রী গৌরাঙ্গ কুমার মন্ডল (৩২), কামরুল হাসান ওরফে কাজল ওরফে নুরউদ্দিন (২৬) ও মো. মোস্তফা মজুমদার ওরফে শিহাব ওরফে হামজা (৩২)।
মুফতি মাহমুদ জানান, তামীম দ্বারী একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম। সে নব্য জেএমবির অন্যতম নেতা তামীম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা ছিলেন। তামীম ২০০৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর তার পরিচয় হয় তানভীর কবিরের সঙ্গে। তানভীর তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যান এবং তার বাবা তামীমকে পালক সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর মেরিন একাডেমি থেকে পাস করে ২০১০-২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বাংলার কাকলিসহ বিভিন্ন জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করেন। একই জাহাজে একাডেমিক জুনিয়র আবু বক্করও কর্মরত ছিল। ২০১৩ সালে ‘বাংলার কাকলি’ জাহাজ নিয়ে পাকিস্তানে যাওয়ার সময় বিশ্বে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে একজন মুসলিম হিসেবে তার করনীয় কী, সে বিষয়ে আবু বক্করের সঙ্গে তার আলোচনা হয়। আবু বক্কর তখন জিহাদের কথা বলেন। এরপর তামীম জিহাদ বিষয়ে আগ্রহী হন। ওই বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে আবু বক্কর মিরপুর ১১ নম্বরে তামীম চৌধুরীর সঙ্গে তামীম দ্বারীর পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় তামীম চৌধুরী তাকে সশস্ত্র জিহাদের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেন।
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে জানুয়ারিতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় তামীম চৌধুরীর সঙ্গে তামীম দ্বারীর দেখা হয়। এ সময় তামীম দ্বারী জঙ্গি নেতা তামীম চৌধুরীকে বাংলার দূত জাহাজ ঘুরিয়ে দেখান। তখন তামীম চৌধুরী নৌপথে পরিবহনের জন্য বিশ্বস্ত লোকের প্রয়োজনের কথা বলেন। এসব জাহাজে করেই বিদেশ থেকে নাশকতার রসদ আনার পরিকল্পনা হয়। এরপর তারা ভুয়া পাসপোর্ট, ভিসা তৈরি করে তাদের মানসিকতার তরুণদের জাহাজে চাকরি দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে তামীম চৌধুরীর সঙ্গে ফের মিরপুরের একটি বাসায় দেখা করেন তামীম দ্বারী। সেখানে মীর ফরহাদ, আশরাফ, হিমেল, আব্দুল্লাহ, আবু বক্কর এবং অজ্ঞাত আরও ২/৩ জন জঙ্গি ছিল। তখন দেশের ভেতরে নাশকতার পরিকল্পনা করেন তারা। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তামীম দ্বারী হিজরতের উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন।
তার সহযোগী কামরুল হাসানের বাবা বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত। তার বাবা বিডিআরের হাবিলদার ছিলেন। তার সাত বছরের সাজাও হয়েছে। মোস্তফা মজুমদার ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি ২০০৭ সালে পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশে কুমিল্লা জেলায় কর্মরত ছিলেন। তিনিও হিজরতে ছিলেন। মুফতি উসমান ও জনৈক ডা. ইকবালের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলেও জানায় র্যাব।