g মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সহিদুল ইসলাম প্রতি আস্থা নেই প্রবাসীদের | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বৃহস্পতিবার, ২০শে জুলাই, ২০১৭ ইং ৫ই শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সহিদুল ইসলাম প্রতি আস্থা নেই প্রবাসীদের

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ২০, ২০১৭

---
শামীম সরকার, মালয়েশিয়া : ছোট্ট ভবন থেকে আলিশান হয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। প্রতিশ্রুতি ছিল সেবার মান বৃদ্ধির, কিন্তু কমে গেছে কয়েকগুণ। বলা চলে শূন্যের কোঠায়।
ঘুষ অথবা দালাল ছাড়া না-কি কোনই কাজ হয় না। পাসপোর্টের আবেদনের জন্য সারাদিন ধরনা দিতে হয়। কখনও কখনও একাধিক দিন পার হয়ে যায় আবেদন জমা করতেই। দূতাবাসে দিনে সর্বোচ্চ ১২’শ ‍প্রবাসীকে সেবা প্রদান করার রেকর্ড রয়েছে। আর এখন দিনে তিন থেকে চার’শতে আটকে আছে। প্রত্যেক দিনই শতশত প্রবাসী ফিরে যাচ্ছে সেবা ছাড়াই।
বাংলাদেশি প্রবাসী বসবাসের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনের সেবায় কেউ সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। এখানে কাউন্টার রয়েছে মোট আটটি। এর মধ্যে একটিতে ভিসা প্রদান, একটি জন্মনিবন্ধন, একটিতে ট্রাভেল পাস ইস্যু ও একটিতে সংশোধনী করা হয়। এই চারটি কাউন্টার দুপুর ১২টায় বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অপর চারটি কাউন্টারে পাসপোর্টের আবেদন জমা নেওয়া হয়। কাউন্টারগুলো খোলা হয় সকাল নয়টায়। দুপুরে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে ঘড়ির কাঁটা ধরে বিকেল পাঁচটায় বন্ধ হয়ে যায়। সে হিসেবে পাসপোর্ট ইস্যুর চারটি কাউন্টারে একেকটি সাত ঘণ্টা করে উন্মুক্ত থাকে।
একটি পাসপোর্টে আবেদন প্রসেস করতে সময় প্রয়োজন হয় প্রায় পাঁচ মিনিটের মতো। সে হিসেবে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন’শ প্রবাসীর পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা পাওয়ার কথা। কিন্তু সার্ভার ডাউন থাকে প্রায় সময়েই। যে কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় কাজ করতে পারে না হাইকমিশনের লোকজন। তখন পাসপোর্ট সেবা প্রদানের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে।
এই ধীর গতি নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। অনেকেই স্মরণ করেন সাবেক প্রথম সচিব (পাসপোর্ট) এসকে শাহীনকে। তিনি যখন পাসপোর্ট উইংয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তখন দিনে ১২’শ পর্যন্ত প্রবাসীকে সেবা প্রদান করা হয়েছিল। ওই সময় বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত আবেদন জমা নেওয়া হতো। বিশেষ করে কেউ আকুতি জানালে তাকে ফিরিয়ে দিতেন না তিনি।
তাকে পাসপোর্ট উইং থেকে সরিয়ে মসিউর রহমানকে বসানো হয়েছে। এখন ঘড়ির কাঁটায় বন্ধ হয়ে যায় হাইকমিশন। এমনও দিন রয়েছে যেদিন তিন থেকে চার’শ প্রবাসী সেবা ছাড়াই ফিরে গেছেন। পরদিন তাকে আবার ধরনা দিতে হচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে দালালদের মহড়া।
প্রবাসীরা অনেকেই থাকেন রাজধানীর বাইরে। তিন-চার’শ মাইল পাড়ি দিয়ে আসেন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। ভোর পাঁচটায় দীর্ঘ লাইন জমে যাচ্ছে। সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেককে শূন্যহাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। অনুরোধ কিংবা বিপদের কথা বলেও হাইকমিশনের লোকজনের মন গলাতে পারছেন না তারা।
দূর থেকে সেবা নিতে আসা অনেকে ফুটপাতে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে দু’দিন ছুটির পর সোমবার প্রথম কার্যদিবসে জমে যাচ্ছে দীর্ঘ লাইন। গত সোমবার (১৭ এপ্রিল) প্রায় দেড় শতাধিক প্রবাসী ফিরে যেতে বাধ্য হন। যারা সারাদিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বাকী বিল্লাহ নামের এক প্রবাসী থাকেন কুয়ানতান সিটিতে। পাসপোর্ট তোলার জন্য সোমবার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু দিন পার হয়ে গেলেও তিনি ‍কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছতে ব্যর্থ হন। অনেক অনুরোধ করেছিলেন কোন কাজ হয়নি।
হোটেল ভাড়া করে থাকার মতো অবস্থা ছিল না। সে কারণে বাধ্য হন ফুটপাতে রাত কাটাতে। প্রতিনিয়ত অসংখ্য প্রবাসী এ রকম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আর সেবা বঞ্চিত হওয়ার সব ক্ষোভ পড়ছে সরকার প্রধানের উপর।
হাইকমিশনের সামনে ভেতরে যাওয়ার টোকেনের জন্য যে লাইনে দাঁড়াতে হয়।  সেখানে পৃথক লাইন করা হয় না। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, জন্ম নিবন্ধনের জন্য একজন এসেছেন। টোকেন প্রদান পয়েন্টে পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। টোকেন প্রদান পয়েন্টে যাওয়ার পর জানতে পারছেন, তিনি যে সেবা গ্রহণ করতে এসেছেন সেই কাউন্টার অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। আগে থেকে ‍জানাবার কোন ব্যবস্থা নেই সেখানে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে দালালদের মহড়া।
তবে দালাল ধরলে সবকিছুই নাকি পানির মতো। প্রায় শতাধিক দালাল সারাদিন চারদিকে ঘুরঘুর করে। কেউ গেলেই তাদের ফুসলিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন ঘাম ঝরানো পয়সা। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া ব্যাংক ড্রাফট ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সহজ সরল প্রবাসীদের। প্রায়ই দালালদের হাতে মারপিটের শিকারও হচ্ছেন প্রবাসীরা।  তারা চোখের জল মুছতে মুছতে ফিরে যাচ্ছেন।
প্রবাসীরা অভিযোগ করেছেন রাষ্ট্রদূত সহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না তিনি। যে কারণে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দালালরা।

এ জাতীয় আরও খবর