শনিবার, ২২শে এপ্রিল, ২০১৭ ইং ৯ই বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

‘দেশ আজ সমৃদ্ধির সোপানে’

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ১৯, ২০১৭

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ আজ সমৃদ্ধির সোপানে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ আজ নিম্ন আয়ের স্তর থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের কাতারে উন্নীত হয়েছে। পদ্মা সেতু আজ কল্পনা নয়। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জঙ্গিবাদ দমন, ক্ষুধা দারিদ্র দুরীকরণসহ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে।

বুধবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমার্বতনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, নজরুল আমাদের জাতীয় কবি, গানের কবি, বিদ্রোহী কবি। তাঁর নামে এই বিশ্ববিদ্যালয় কবির বিস্ময়কর সৃষ্টিশীল কর্ম যেমন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেবে, তেমনি তাঁর প্রতি আমরা সত্যিকারার্থে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবো। বিশ্ব পাঠশালার এক ধীমান সাহসী যোদ্ধা নজরুল। জীবন সত্য অন্বেষণে কবি ছুটেছেন নিরন্তর। নজরুলের সাথে ত্রিশালের ছিল গভীর সম্পর্ক। কবি ত্রিশালকে দেখেছেন তীর্থস্থান হিসেবে।

রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, সামন্তবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন নজরুল। হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নজরুলের চেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী কোনো কবির আবির্ভাব ঘটেনি। জাতি, ধর্ম, গোত্র, শ্রেণি, সম্প্রদায়ের নামে যে বিচ্ছিন্নতা ও পারস্পরিক ঘৃণার সৃষ্টি করা হচ্ছে তা থেকে মুক্তির উপায় নজরুলের কবিতা ও সাহিত্য। কবির সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল মানবসৃষ্ট দেয়ালগুলো ভেঙে ফেলা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, কবি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। জাগরণের কবি, অসম্প্রদায়িক চেতনার কবি নজরুল ক্ষুরধার লেখনীর স্ফূলিঙ্গ যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়েছে তেমনি তাঁর বাণী ও সূরের অমীয় ঝর্ণাধারা সঞ্চিত করেছে বাঙালির হৃদয়। পরাধীন ব্রিটিশ আমলে সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কবি বাংলা ও বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে কবির গান ও কবিতা অনিঃশেষে প্রেরণা জুগিয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস নতুন প্রজন্ম নজরুল চর্চার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে এবং দেশপ্রেম, সততা, নিষ্ঠা দিয়ে সুখী সমৃদ্ধি সোনার বাংলা গড়তে অর্থবহ অবদান রাখবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক চেষ্টা ও আগ্রহে ১৯৭২ সালে ২৪ মে কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে কবি ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি বাড়ি বরাদ্দ দিয়ে দেন। নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম, ইমেরিটাস প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম, ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বক্তব্য দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে ১ হাজার তিন’শ ৯৯জন গ্র্যাজুয়েট অংশগ্রহণ করেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সর্বোচ্চ নম্বরধারী ২৯ জন শিক্ষার্থীকে ৩২টি স্বর্ণপদক দেয়া হয়।

গ্র্যজুয়েটদের উদ্যেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ সমাবর্তন যেমন শিক্ষার্থীদের সাফল্য অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়েছে তেমনি তাদের ওপর পরিবার, দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েশনগণ তাদের মেধা, দেশ প্রেম ও মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে ভবিষ্যত দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবে।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ৯ মে’, দুখু মিয়ার স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহ শহরের অদূরে ত্রিশালে প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। এ শিক্ষালয়টি দেখতে দেখতে ১১ বছরে পা রাখলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ২০১৭ সনেই প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হলো।

এ জাতীয় আরও খবর