সরাইলে সরকারি বিদ্যালয়ের জায়গা সভাপতির কবল থেকে উদ্ধার
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত সরাইল উপজেলা সদরের উচালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৪৬ বছর ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম ওরফে মনু মিয়া হঠাৎ ৬ শতাংশ জায়গা দখল করে ফেলেন। বাঁধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ। প্রতিকার চেয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুন নাহার সুলতানা হক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ১২ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষা অফিসের লোকজন ওই জায়গা সভাপতির কবল থেকে দখলমুক্ত করেছেন।
সরেজমিনে শিক্ষা অফিসের লোকজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের পাশে উপজেলা সদরে উচালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয় সংলগ্ন পশ্চিম পাশে সফর উদ্দিন গংদের বসবাস। মনিরুল ইসলামের চাচা সফর উদ্দিন প্রতিষ্ঠাকালে ওই বিদ্যালয়ের জন্য ৩৩ শতাংশ ভূমি দান করেছিলেন। সফর উদ্দিনের ভাইপো মনিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ওই বিদ্যালয়ের এস এম সি’র সভাপতি। পশ্চিম পাশের ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি পরিত্যাক্ত ওই ভবনের জায়গায় ৩১ লাখ টাকা ব্যায়ে তিন কক্ষের একটি নতুন ভবন পুননির্মাণের সকল পক্রিয়া সম্পন্ন করেছে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রকৌশল অধিদপ্তর। দরপত্র আহবানের পর ঠিকাদারও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে গত জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের পুরাতন ভবনটি অপসারণ করা হয়। মেসার্ম হাসান বিল্ডার্স নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গত এক মার্চ থেকে নতুন ভবনের মাটি কাটার কাজ শুরু করেন। সুযোগ বুঝে পর দিন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম কাজ বন্ধ করে দেন। তিন মার্চ রাতে মনিরুল ইসলাম বিদ্যালয়ের ওই জায়গার (প্রায় ছয় শতাংশ) চার দিকে বেড়া দিয়ে একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে নিজ দখলে নেন। এতে বন্ধ হয়ে পড়ে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মান কাজ।
এ ব্যাপারে গত নয় মার্চ প্রধান শিক্ষক শামছুন নাহার সুলতানা হক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত সোমবার উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় এ দখল নিয়ে আলোচনা হয়। অধিকাংশ সদস্য এ দখলকে সম্পূর্ণ অবৈধ উল্লেখ করে অতিসত্বর দখলদার সভাপতির কবল থেকে স্কুলের জায়গা উদ্ধারের জোর দাবী জানান। অবশেষে দখলের ১২ দিন পর গতকাল কর্তৃপক্ষ থানা পুলিশের সহায়তায় সভাপতির দেয়া বেড়া ও নির্মিত ঘর ভেঙ্গে অপসারণ করেন। এ সময় দখলদারদের কেউ বাঁধা দিতে আসেননি। মনু মিয়ার স্ত্রী নাজনিন আক্তার মুঠোফোনে বলেন, এ জায়গার উপর মামলা রয়েছে। আমরা আবারও দখল করব। এ ব্যাপারে মনিরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে দানকৃত ৩৩ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন আমার বাবা আফাল উদ্দিন, চাচা সফর উদ্দিন ও ফয়েজ উদ্দিন। কিন্তু জমি দলিল করে দিয়েছেন শুধু সফর উদ্দিন। আমার বাবা ওই জমি লিখে দেননি। তাই আমি শুধু আমার বাবার জায়গা দখলে দিয়েছি।
উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে ইসরাত বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়ে যথাযথ আইনি পক্রিয়ায় বিদ্যালয়ের জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। জুনের মধ্যে কাজ শেষ করব।