সোমবার, ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং ১৫ই ফাল্গুন, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

কমিউটার ট্রেনে ভোগান্তি, ভেলকিবাজি

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর রহনপুর-রাজশাহী-ঈশ্বরদী রুটে চালু করা হয়েছিল একটি কমিউটার ট্রেন। চার বছর পর সেই ট্রেন এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোগান্তির কারণ।

 

নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে কাঙ্খিত যাত্রীসেবা দিতে পারছে না ট্রেনটি। এর উপরে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, ট্রেনটির টিকিট পরীক্ষকদের ভেলকিবাজির।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট জিয়াউল হাসান জানান, বর্তমানে ৭টি বগি নিয়ে ট্রেনটি রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রহনপুর ও ঈশ্বরদী রুটে চলাচল করছে। এর আসন সংখ্যা ৬৩২টি। কিন্তু এসব রুটে চলাচলের সময় ট্রেনের অর্ধেক টিকিটও বিক্রি হয় না।

স্টেশন মাস্টার আনিসুর রহমান জানান, প্রতিদিন সকাল ৭টায় ট্রেনটি ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ৯টা ৩০ মিনিটে ট্রেনটি রাজশাহী স্টেশন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে ছেড়ে যায়। দুপুর ১টায় ট্রেনটি আমনূরা হয়ে রাজশাহী আসে। বেলা ৩টার সময় ট্রেনটি আবারো রহনপুরের উদ্দেশ্যে রাজশাহী স্টেশন ছাড়ে। এরপর রাত ৭টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি আবারো রহনপুর থেকে রাজশাহী আসে। এরপর ঈশ্বরদী চলে যায়।

রাজশাহী রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী-ঈশ্বরদী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত চলাচলকারী কমিউটার ট্রেনটি প্রতিদিনই যাত্রীভর্তি থাকে। কিন্তু ট্রেনটির আসন সংখ্যার অর্ধেক টিকিটও বিক্রি হয় না। অথচ ট্রেনে আসন সংখ্যার বিপরীতে অধিক যাত্রী যাতায়াত করে। কিন্তু যাত্রীরা টিকিট না করায় লোকসান গুনতে হচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে।
রহনপুর-রাজশাহী রুটে কমিউটার ট্রেনে নিয়মিত চলাচল করেন নগরীর একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা ফাইজুল আলম। তিনি জানান, ট্রেনের বিভিন্ন বগির বসার আসনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। খসে পড়েছে কোনো কোনো বগির আসন। কোনো বগিতে আবার পুরো আসনই ভেঙে গেছে। এছাড়া ট্রেনে ফ্যানের ব্যবস্থা থাকলেও চলে না। তাই অধিকাংশ যাত্রী টিকিট করতে চান না। ভেতরে ও বাইরে যাত্রীর ঠাসাঠাসি থাকলেও তল্লাশির দিনগুলো ছাড়া কোনো দিনই ট্রেনের সব টিকিট বিক্রি হয় না।

যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রেনটি চালুর পর দীর্ঘ সময়েও এর ভেতরে তেমন কোনো সংস্কার না হওয়ায় তা মানুষের চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। রাতের বেলা আলোর জন্য লাগানো লাইটগুলোর অধিকাংশই নষ্ট হয়ে পড়েছে। আর ট্রেনের টয়লেটের অবস্থা ব্যবহারের অনুপোযোগী। সবমিলিয়ে ট্রেনের ভেতরের পরিবেশটি একেবারেই যাতায়াতের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পশ্চিমাঞ্চল রেলের এক কর্মকর্তা জানান, ওই ট্রেনে যারা যাত্রী হিসেবে চলাচল করেন তাদের অর্ধেকের বেশি দিনমজুর। ফলে তারা টিকিট না কেটেই যাতায়াত করেন। এ কারণে প্রতিদিন ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হলেও টিকিট বিক্রি হয় অর্ধেক। আর যারা টিকিট না কেটে ওঠেন তারা ট্রেনের টিকিট পরীক্ষককে ‘ম্যানেজ’ করে চলে যান। ফলে যাত্রী বেশি হলেও বিক্রি হয় না টিকিট। ট্রেনটি সুষ্ঠুভাবে চলাচল করলে লাভজনক হবে। তাই কর্তৃপক্ষের এসব তদন্ত করা প্রয়োজন।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের চিফ অপারেটিং অফিসার বেলাল হোসেন বলেন, ‘অর্ধেক টিকিট বিক্রির বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির জন্য ট্রেনটির বগিগুলো সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

এ জাতীয় আরও খবর