শনিবার, ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং ১৩ই ফাল্গুন, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

বাঞ্ছারামপুরের কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোর বেহাল দশা নেই সঠিক রক্ষণা-বেক্ষণ

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭

ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর : ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো গ্রামীণ জনপথের মানুষের চিকিৎসায়  কতখানি  অবদান রাখতে পেরেছে তা  নিয়ে সাধারণ মাঝে অনেক প্রশ্ন, কষ্ট আর ক্ষোভ।খোজঁ নিয়ে জানা যায়,  গ্রামে বসবাস করা দরিদ্র শ্রেণির লোকদের সেবার দেওয়ার  জন্য সরকারি ভাবে করা এই হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর চার দেয়ালের মর্ধ্যে সবকিছু মিলিয়ে তাদের সেবা, ডাক্তারদের সময়মত উপস্হিতি, রোগীদের জন্য সরকারি বরাদ্দ কৃত ঔষুধ কতটুকু পাচ্ছে তা  নিজের চোখেঁ না দেখলে আসলে বুঝা যায়না। উপজেলার কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকগুলো অবকাঠামোগত সমস্যাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত অবস্থায় রয়েছে। আর এসব কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লাখো মানুষেরা রোগের  সেবা নিতে গিয়ে উল্টো নানা -দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সরকার কর্তৃক এসব ক্লিনিক গুলোতে ২৮ প্রকার ওষুধ প্রদান ও সপ্তাহে ৬দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম চলার কথা থাকলেও কোথাও বাস্তবে এই চিত্র পাওয়া যাচ্ছেনা।উপজেলার হেলথ ক্লিনিকগুলোতে দায়িত্ব্যরত চিকিৎসকরা সরকারি ভাবে ট্রেনিং নিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষকে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় করে ঔষুধ দেওয়ার কথা থাকলে বাস্তবে তারা ক্লিনিকগুলোতে সময় মত হাজির হচ্ছেনা। মনগড়া মত দিনের এক সময়ে অফিসে(ক্লিনিক) হাজির হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন। আর অনেক ডাক্তারের  গ্রামের বাজারে ঔষুধের দোকান রয়েছে। তারা সরকারি বেতন নিয়ে সুকৌশলে নিজের ঔষুধের দোকান চালাচ্ছে বেশ দাপটের সাথেই। যখনি তাদের ক্লিনিক গুলোতে সরকারি ডাক্তারে অডিট টিম যাচ্ছে আগের দিন জানতে পারে তখন ঐদিন তাদের দায়িত্ব পালনে কোনধরণের ফাকঁ-ঝোকর থাকেনা। এই হল আসল চিএ। দুস্হ রোগীদের জন্য আর সরকারি বরাদ্দ কৃত অনেক ঔষুধ রোগীরা পাচ্ছেনা ঠিকমত তাহলে ঔষুধ গুলো যায় কোথায়? এরকম প্রশ্ন অনেক ভুক্তভোগী রোগীর।

তার মর্ধ্যে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনগুলোর ভিতরে অব্যস্হা অনেক নাজুক।অনেক ক্লিনিকে নেই বিদ্যুতের ব্যবস্হা  আবার রোগীদের ব্যবহারের জন্য শৌচাগার গুলো পুরোটাই অনুপযোগী এছাড়া অনেকগুলোতে নেই নলকূপ আবার থাকলে ও তা অকেজো। চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। ক্লিনিকগুলোতে শৌচাগার ও বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে রোগীদের চরম কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের  সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬-২০০১ তৎকালীন সরকারের সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের আওতায় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে  ভবন নির্মাণ করে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। মাঝখানে সাত বছর এ প্রকল্পটি বন্ধ থাকায় ভবনগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েছিল। আবার ২০০৯ সালে ওই ভবনগুলোর ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকগুলোতে (সিএইচসি) নিয়োগ দেয় সরকার। বর্তমানে বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক প্রায়২৯টি। অনেক গুলোতে সিএইচএম ভবন না থাকায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসা নিতে আসা ফরিদ মিয়া, মিলন সরকার ও নাজমা বেগম  বলেন, এ ক্লিনিকগুলোর কারণে আমাদের মাইলের পরম মাইল দৌড়ে হাসপাতালে যেতে হয়না। তবে এখানে সময় মত দায়িত্বরত ডাক্তার না থাকা, রোগীদের বসার জায়গা, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ সংকট থাকায় আমাদের সবকিছু মিলিয়ে কষ্ট  পোহাতে হচ্ছে, তাই রোগীদের মর্ধ্যে চরম ক্ষোভ রয়েছে।
উপজেলার কয়েকটি ক্লিনিকে দায়িত্ব্য রত  ডাক্তাররা  বলেন, প্রায় ভবনেই বর্ষাকালে ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, দেখা দিয়েছে  বিভিন্ন স্থানে দেয়ালে ফাটল। তাছাড়া ভিতরে  আলমারি গুলো ভাঙ্গা,  ওষুধ ও জরুরি প্রয়োজনীয় খাতাপত্র রাখা যাচ্ছেনা। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক বার লিখিতভাবে পত্র পাঠানো হয়েছে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, অচিরেই ক্লিনিক গুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতরে লিখিত আবেদন করা হবে। এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ নিশিত  নন্দি মজুমদার বলেন,  আমি সদ্য এই পদে যোগদান করেছি। তবে ইতিমর্ধ্যে জেলার  বেশ কয়েকটি উপজেলার হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আমি পর্যবেক্ষক করেছি। অচিরে আমি বাঞ্ছারামপুরের কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো পরিদর্শনে যাব। সেখানে সমস্যাগুলি সমাধানে চেষ্টা করব।