শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ায় ‘লঙ্কাকাণ্ড’
স্পোর্টস ডেস্ক : শেষ ওভার। ৬ বলে শ্রীলঙ্কার দরকার ৬ রান। প্রথম বলে কোনো রান নেই, পরের তিন বলে তিনটি সিঙ্গেল। ২ বলে দরকার ৩ রান। পঞ্চম বলে ২ রান নিয়ে সমীকরণটাকে ‘১ বলে ১ রান’—এ নামিয়ে আনলেন চামারা কাপুগেদারা। এরপর…নাটক!
পারলে ১১ জন ফিল্ডারকেই ৩০ গজের ভেতর এনে রাখতেন এই ম্যাচে ‘খণ্ডিত অস্ট্রেলিয়া’র অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। নিয়মের কারণে যাঁদেরকে রাখলেন বৃত্তের বাইরে, তাঁরাও আসলে বলতে গেলে বৃত্ত রেখার ঠিক বাইরেই দাঁড়ানো। যে করেই হোক, সিঙ্গেল ঠেকাতে হবে।
কিন্তু পারল না অস্ট্রেলিয়া! অ্যান্ড্রু টাই বলটা করলেন অফ স্টাম্পের বাইরে, ফুল লেংথে। কাপুগেদারা হয়তো এত সহজ বল আশাই করেননি। একেবারে ক্রিকেট ব্যাকরণ মেনে ফ্রন্ট ফুটে খেললেন কাভার ড্রাইভ…চার! অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতে গেল লঙ্কানরা। অস্ট্রেলিয়ার ১৬৮ রান পেরিয়ে গেল ৫ উইকেট হাতে রেখেই।
কদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হারলেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে শ্রীলঙ্কা। এবার উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য আরেক বড় পরীক্ষার জায়গা অস্ট্রেলিয়াতেও সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিতল। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণটাই যেন এখন লঙ্কানদের সবচেয়ে প্রিয় হয়ে উঠেছে।
তবে এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জয়ের পেছনে ‘খণ্ডিত অস্ট্রেলিয়ার’ও অবদান আছে। টেস্ট সিরিজে খেলতে ওয়ার্নার-স্মিথদের নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়ার ‘মূল’ দল তো এখন ভারতে। আজ মেলবোর্নে তাই টি-টোয়েন্টি অভিষেকই হলো তিনজনের। শুধু এই সিরিজের জন্য আলাদা কোচিং প্যানেলও আছে, তবে সেখানে নামগুলো বিখ্যাত! রিকি পন্টিং…জাস্টিন ল্যাঙ্গার…জেসন গিলেস্পি!
এই ম্যাচ অবশ্য আরেকটা কারণে শুরুর আগেই ছিল আলোচিত—ফিরেছেন লাসিথ মালিঙ্গা! গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিই ছিল লঙ্কান পেসারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। প্রায় এক বছর ফিরে কেমন করেন, তা দেখার ব্যাপার ছিল। তবে শুরুতেই চমক! এ কোন মালিঙ্গা! বোলিং অ্যাকশন একই আছে, চুলও একই। কিন্তু দৌড়ে আসছেন বিশাল ভুঁড়ি নিয়ে! বলের গতিও কমে গেছে অনেক! তবে কার্যকারিতা খুব একটা খারাপ নয়, ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।
মালিঙ্গাদের সামলে অস্ট্রেলিয়া ২০ ওভারে করেছে ১৬৮ রান। শুরুর তিন ব্যাটসম্যানেরই অবদান তাতে বেশি। অধিনায়ক ফিঞ্চ করেছেন সর্বোচ্চ ৪৩ রান। তাঁর ওপেনিং সঙ্গী মাইকেল ক্লিঙ্গার ৩৬ বছর ২২৮ রান দিন বয়সে প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে করেছেন ৩৮ রান। ত্রিশের ঘরে রান তিনে নামা ট্রাভিস হেডেরও (৩১)।
তবে শেষ ওভারে নাটকের আগে শ্রীলঙ্কার জবাব দেওয়ার ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছেন তিন ও চারে নামা দিলশান মুনাবীরা ও আসেলা গুনারত্নে। ওপেনার নিরোসান ডিকভেলার সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৭৪ রানের জুটি গড়েছেন মুনাবীরা। ২৫ বলে ৩০ রান করার পথে ডিকভেলাও খেলেছেন দুর্দান্ত কিছু শট। মুনাবীরা তো আরও আক্রমণাত্মক, ৪৪ রান করেছেন ২৯ বলে, যাতে চার ৬টি। চারে নামা গুনারত্নেও কম কী! ফিফটি করেছেন। ৭ চারে ৩৭ বলে করেছেন ৫২ রান। ডিকভেলা-মুনাবীরা যদি দাঁড় ধরে থাকেন, তো তাতে পাল তুলেছেন মুনাবীরা, আর শেষ ওভারের নাটকীয়তার পর দলকে জয়ের বন্দরে নোঙর করিয়েছেন কাপুগেদারা। ক্রিকইনফো।