রঙিন বসন্ত রাঙালো প্রাণ
‘আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী; চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি’-কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর গানের মতোই বসন্তকে বরণের আয়োজন চারপাশে।
শীত শেষে ঝরছে গাছের জীর্ণ-শীর্ণ পাতা। জন্ম নেয়া কচি পাতা প্রকৃতিতে প্রাণ সঞ্চারের প্রতীক। আর এর উদযাপনে সকাল থেকেই নগর-গ্রামে উৎসবে মেতেছে মানুষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে সকালে শুরু হয় বসন্তবরণের আনুষ্ঠানিকতা। তরুণীদের বাসন্তি রঙের শাড়ি আর মাথায় ফুল, বাবার হাত ধরে হলুদ পাঞ্জাবি পড়া ছোট্ট শিশুর ভিড়ে চারপাশ হয়ে উঠে অপরূপ।
গাছে গাছে ডাকছে কোকিল, সেই সঙ্গে বসন্ত বরণে রাগ সঙ্গীতের আবাহন। সঙ্গে বন্ধুদের সঙ্গে প্রাণ খুলে আড্ডা আর আনন্দ ভাগাভাগি। আয়োজনরা বলছেন, এটা মিলনের উৎসব। প্রাণের সঙ্গে প্রাণের, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতিক মিলনের উৎসব।
উৎসবের আহ্বানেও আছে মিলনের ডাক। এবার স্লোগান ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় দিনব্যাপী এবং ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ, লক্ষ্মীবাজারস্থ বাহদুর শাহ্ পার্ক এবং উত্তরার তিন নং সেক্টরের রবীন্দ্র স্মরণীর উন্মুক্ত মঞ্চে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত উৎসবে মাতোয়ারা থাকবে মানুষ।
চারুকলার বকুলতলায় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে শুরু হয় উৎসবের মূল পর্ব। পরিবেশিত হয় দলীয় সঙ্গীত, নৃত্য, প্রীতিবন্ধনী বিনিময়, দলীয় সংগীত, আবৃত্তি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবেশনা।
সাড়ে ১০টার দিকে চারুকলার বকুলতলা থেকে বের হয় বসন্ত শোভাযাত্রা। শেষ হয় সকালের উৎসবের মূল পর্ব।
বিকাল চারটায় আবার দ্বিতীয় পর্বেও রোখা হয় নানা আনুষ্ঠানিকতা।
কাউকেই দাওয়াত দেওয়া হয়নি এই উৎসবে। কিন্ত সবাই একত্র হয়েছে প্রাণের টানে। মেয়েদের বাসন্তী রঙের শাড়ির সঙ্গে কপালে লালটিপ। গালে রঙ সঙ্গে মাথায় ফুলের চাক। ছেলেদের হলুদ পোশাকেও ছিল বসন্তের ছোঁয়া।
বসন্তের প্রথম দিনটিতে পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে ফুল। কারও মাথায়, কারও হাতে। সব মিলিয়ে চারপাশ রঙে রঙে রঙিন।
বেসরকারি চারিজীবী সুদিপ্ত চারুকলায় এসেছেন পরিবার নিয়ে। সবার পরনেই বাসন্তী রঙের পোশাক। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। কোন বসন্ত উৎসবই আমি মিস করি না। আজ আমি অফিসে ছুটি নিয়ে এসেছি। আসলে এখন আর সংস্কৃতি আগের মতো নেই। কেউ ছুটছেন পাশ্চাত্তের দিকে। আবার কেউ এক দিনের বাঙালি। এর মধ্যে আমাদের বাঙালি হয়ে উঠার যে দিনগুলো থাকে তার একটি তো বসন্ত উৎসবই।’
তামান্না ইসলাম মাথায় পড়েছেন ফুলের টিটলি, বান্ধবীদের নিয়ে একের পর এক সেলফি তুলে স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টা চলছে ভোর থেকেই। তামান্না বলেন, ‘অনেক ভালো লাগছে। ছবি তুলে দিনটিকে ধারণ করে রাখলাম। আজ সারা দিন থাকবো। বিকালে যাবো বই মেলায়।’
চারুকলায় ফুলদিয়ে সাজানো দোলনায় দোল খাচ্ছিলেন সানজিদা আর তার বন্ধু ছবি তুলছেন। সানজিদাকে তার বন্ধু বলছিলেন, ‘তুমি যেমন প্রাণ খুলে হাসো, তেমনি ভাবে হাসো না।’ তার এই দোল খাওয়ার সময় লাইন ধরে ছিলেন অন্যরা। তারাও দোলনায় চড়ে ছবি তুলতে চায়।
বসন্তের প্রথম দিন ‘বসন্তবালা’ নামে বই হাতে ছবি তুলতে দেখা গেলো তরুণীদের কয়েকজনকে। পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন লেখক সালমান শাহ লালন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘বসন্তবালাআমার প্রথম কবিতার বই। আমি সরকারি চাকরি করি। কবিতা লেখাও আমার পেশা বলা যায়। আজকাল প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে বইটি।’