‘শিগগিরই আকাশে উড়ছে স্বপ্নের ন্যানো স্যাটেলাইট’
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের তথ্যপ্রযুক্তির ইতিহাসে সূচনা হলো আরেকটি নতুন অধ্যায়ের। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে তিন শিক্ষার্থী তৈরি করেছেন বাংলাদেশের প্রথম স্বপ্নের ন্যানো স্যাটেলাইট ‘অন্বেষা’।
স্যাটেলাইট প্রকল্পের উদ্যোক্তারা হলেন রায়হানা শামসইসলাম, আবদুল্লা হিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মনোয়ার। এটি আকাশে উড়বে খুব শিগগিরই।
স্যাটেলাইটটি তৈরি করেছে জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (কেআইটি)। ন্যানো স্যাটেলাইট প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ মো. খলিলুর রহমান।
বুধবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব জাপানের কিতাকিউশুতে অবস্থিত কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (কেআইটি) থেকে স্যাটেলাইটি বুঝে নেন।
ওই অনুষ্ঠানে ন্যানো স্যাটেলাইটটি আনুষ্ঠানিকভাবে জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির কাছে মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য হস্তান্তর করা হয়।
জাপা্নের কিতাকিউশু থেকে বাংলাদেশের স্থানীয় সময় দুপুরে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাখালীস্থ ক্যাম্পাসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড ন্যাচারাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডঃ জিয়াউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ডঃ শাজাহান মাহমুদ, বাংলাদেশে জাপানের দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি তোশিয়ুকি নোগুচি, বুয়েটের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ডঃ কায়কোবাদ।
ভিডিও কনফারেন্সে আরও উপস্থিত ছিলেন কিউশু’র প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইউজি অই ও কিউশু’র ল্যাবরেটরি অফ স্পেসক্রাফট এনভারনমেন্ট ইন্টারাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিচালক মেংগু চো।
এসময় বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ডঃ শাজাহান মাহমুদ ন্যানো স্যাটেলাইট প্রকল্পের উদ্যোক্তা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী রায়হানা শামস্ ইসলাম, আবদুল্লা হিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মনোয়ারকে তাঁদের অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানান।
তিনি বিটিআরসিতে ন্যানো স্যাটেলাইটটির উপর একটি ওয়ার্কশপ আয়োজনের এবং এই শিক্ষার্থীদেরকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পেও কাজ করার আহ্ববান জানান।
অধ্যাপক ডঃ জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করে।’ তিনি দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লা হিল কাফি জাপান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জানান, মহাকাশসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করাই হবে ন্যানো স্যাটেলাইটটির এর অন্যতম কাজ। এছাড়াও এটি কৃষিকাজ, দুর্যোগ মোকাবেলা, নগরায়ণসহ নানা বিষয়ে গবেষণার জন্য উচ্চমানের ছবি তুলে পাঠাবে এবং মহাকাশে বিশেষ বিশেষ দিনে জাতীয় সংগীত বাজাবে। ন্যানো স্যাটেলাইটটি পৃথিবী হতে ৪০০ কিলোমিটার ওপরে অবস্থান করবে এবং পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করে আসতে ৯০ মিনিট সময় নিবে। এটি বাংলাদেশের উপর দিয়ে দিনে ৪ থেকে ৬ বার উড়ে যাবে।
২০১৬ সালের জুনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ন্যানো স্যাটেলাইট নির্মাণ ও মহাকাশে তা উৎক্ষেপণের জন্য জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সঙ্গে চুক্তি করে। নকশা তৈরি, উপকরণ সংগ্রহ, তারপর ন্যানো স্যাটেলাইট বানানো সব কাজই করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই তিন শিক্ষার্থী। রায়হানা, কাফি ও মনোয়ার।
তবে জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির মাধ্যমে ন্যানো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কাজ হলেও ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণের গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন হচ্ছে বাংলাদেশেই। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক দল শিক্ষার্থী, মোজাম্মেল হক, সানন্দ জগতি, বিজয় তালুকদার ও আইনুল হুদা স্টেশন তৈরির কাজে রয়েছেন।
গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণে সার্বক্ষণিক সহায়তা করছে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থা (স্পারসো)।