বৃহস্পতিবার, ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং ২০শে মাঘ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

আজ শুরু হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৭

আজ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) শুরু হচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকালে এই মেলার উদ্বোধন করবেন।

আর এর মধ্য দিয়ে শুরু হবে লেখক-প্রকাশক-পাঠকের মাসব্যাপী মিলনমেলা।

কাগজে-কলমে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ হলেও একুশে বইমেলা বা বইমেলা হিসেবেই এটি পরিচিত সারা দেশের মানুষের কাছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

ফেব্রুয়ারি মাস বাঙালির জীবনে নিয়ে এসেছিল ভাষার অহংকার। এ মাসের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল বাঙালি জাতি। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার এই আয়োজন সেই প্রাপ্তিরই পূর্ণতার স্বাদ দেয় বাঙালি জাতিকে।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এই বইমেলার যাত্রা শুরু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর থেকেই। জানা যায়, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন বাংলাদেশে প্রকাশনা শিল্পের অন্যতম পথিকৃৎ চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি একাই বইমেলা চালিয়ে যান। ১৯৭৬ সালে অন্য প্রকাশকরাও অনুপ্রাণিত হন এই আয়োজনে অংশ নিতে। বাড়তে থাকে মেলার পরিসর।

১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন সম্পন্ন করেন। কিন্তু স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দুজন ছাত্র নিহত হন। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর ওই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়।

এরপর থেকে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এই মেলা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণ ও বর্ধমান হাউস ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০১৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমির মুখোমুখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়েছে এই মেলার পরিধি।

বাংলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির মূল চত্বর ও একাডেমিসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৪ লাখ বর্গফুট জায়গা নিয়ে এবারের গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়েছে। একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ”এখন পুরো মেলা প্রাঙ্গণে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। গ্রন্থমেলার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১২টি চত্বরে সজ্জিত করা হয়েছে। ”

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জানান, এবার একাডেমি চত্বরে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ১১৪টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪৯টি ইউনিটসহ মোট ৪০৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা সংস্থাকে মোট ৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এক শ লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউসের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু কর্নারকে এবারও আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, ”৬০ ইউনিট নিয়ে গড়া চত্বরটি রংবেরঙের লাইটিংয়ে সাজানো হয়েছে। শিশুদের জন্য খেলার সামগ্রীও থাকবে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও শুক্র ও শনিবার থাকবে শিশু প্রহর। ”

শামসুজ্জামান খান জানান, বাংলা একাডেমি ৩০ শতাংশ ও মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে মেলায়। এছাড়া জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে প্রকাশিত বই বিক্রি ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান তিনি।

অমর একুশে বইমেলায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো মেলাপ্রাঙ্গণ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রাখা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। মঙ্গলবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলাপ্রাঙ্গণ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। এ দিন নিরাপত্তা মহড়াও দেওয়া হয় মেলাপ্রাঙ্গনে।

মেলা চত্বরে নিরাপত্তা সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ”আমরা সিটি কপোরেশন, বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ফায়ার সার্ভিসকে নিয়ে একাধিক বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছি। খুঁটিনাটি আলোচনা করে সুদৃঢ় নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশকে ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ”

প্রকাশকরা বলছেন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে মানুষ নিরাপদ বোধ করবে বলে মেলা জমজমাট হবে বলে আশা করছেন তারা। ২০১৩ সাল থেকে লেখক-প্রকাশকদের হত্যা ছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাব বইমেলায় পড়েছে। এবার সে ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না বলে আশা প্রকাশ করছেন প্রকাশকরা।