প্রবাসী আয় আরো কমার আশঙ্কা
নিউজ ডেস্ক : আগামীতে প্রবাসী আয় আরো কমে যাওয়ার শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিন কারণে এই আয় কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন। অর্থমন্ত্রী গতকাল জাতীয় সংসদে অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এ শঙ্কা ব্যক্ত করেন। এই প্রতিবেদনটির নামকরণ করা হয়েছে, ‘চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন।’ এতে বলা হয়েছে, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় মোট ব্যয় হয়েছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাস আয় লেনদেন ভারসাম্যে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে যেমন বহিঃখাতকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখে, তেমনি অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে জুন ২০১৬ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রবাস (শ্রমিক) নিয়োগ হলেও প্রবাস আয়ে গতিশীলতা আসেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে প্রবাস আয়ের প্রবাহ ছিল তিন হাজার ২৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিগত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল তিন হাজার ৯৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এ সময়ে প্রবাস আয়ের ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ কমেছে।’
এর কারণ হিসেবে অর্থমন্ত্রী তিনটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ধীর গতি, তেলের মূল্য হ্রাসের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও ডলারের বিপরীতে তুলনামূলকভাবে টাকার মূল্য শক্তিশালী থাকায় প্রবাস আয়প্রবাহ কমতে পারে বলে মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। আপনি জানেন, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইনÑ এ ছয়টি দেশ থেকে প্রবাস আয়ের প্রায় ৫৮ শতাংশ আসে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর নাগাদ বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবাস নিয়োগ বৃদ্ধি সত্ত্বেও এসব দেশ থেকে একই সময়ে প্রবাস আয় কমেছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। তেলের মূল্য কিছুটা স্বাভাবিক হলে এসব দেশ থেকে প্রবাস আয়প্রবাহও স্বাভাবিক হবে বলে আমি মনে করি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসীরা অপেক্ষাকৃত কম বেতনে চাকরি নিয়ে কর্মস্থলে বহাল রয়েছেন, কিন্তু তাদের রেমিট্যান্স কমাতে হয়েছে।’ অর্থমন্ত্রী তার প্রতিবেদনে অর্থনীতির কিছু ইতিবাচক পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন কর রাজস্ব আদায় ১৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট সরকারি ব্যয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আইএমইডির সূত্র মতে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিগত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের ছয় হাজার ৫০২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৯ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা হয়েছে।
রফতানি আয় বিগত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের সাত হাজার ৭৫৯ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে আট হাজার ৭৯ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আমদানি ব্যয় ১৭ দশমকি ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১১ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। আমদানি ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তির প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ১০ দশমিক ১৬ এবং ১৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়েছে (সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৬)। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে প্রায় ৩১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বর ২০১৫-এর ৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৬ সময়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।’
রাজস্ব আয় পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা (জিডিপির ১২.৩৬ শতাংশ)। প্রথম প্রান্তিকে আহরিত রাজস্বের পরিমাণ ৪৩ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা, যা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার এক-পঞ্চমাংশের চেয়ে কম অর্জিত হয়েছে, তাই রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জনে আমাদের তৎপরতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন।’