অচল ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্বাস্থ্য বিভাগ : ২ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না কর্মচারীরা
---
আমিরজাদা চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জনের চেয়ার দখলমুক্ত হয়নি একমাসেও। চেয়ার আকড়ে বসে আছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব) নেতা ডাক্তার মো: শাহআলম। অন্যদিকে মন্ত্রনালয় থেকে দায়িত্ব পাওয়া ডা.আবু ছালেহ মো. মুসা খান দায়িত্ব বুঝে নিতে নিয়মিত অফিসে যাচ্ছেন। কিন্তু তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছেনা। এদিকে সিভিল সার্জনের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেয়ায় গত দু-মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে সিভিল সার্জন অফিসসহ এর অধীনস্থ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে গত ২৭ শে ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.আবু ছালেহ মো. মুসা খানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জনের চলতি দায়িত্বের আদেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারী হয়। এতে ৩১/১২/২০১৬ তারিখের পর যোগদান করতে বলা হয় তাকে। অন্যদিকে ২৯ শে ডিসেম্বর অবসরজনিত ছুটিতে যাওয়া সিভিল সার্জন হাসিনা আক্তারের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও জেলা স্বাচিবের সাধারন সম্পাদক মো: শাহআলম। মন্ত্রনালয়ের আদেশ নিয়ে মুসা খান ২ রা জানুয়ারী সিভিল সার্জন অফিসে যোগদান করতে গেলে শুরু হয় তালবাহানা। দায়িত্বে থাকা সিভিল সার্জন মো. শাহ আলম মুসা খানের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে নিজের দখলে রাখেন চেয়ার। ব্যর্থ হয়ে ২রা জানুয়ারী স্বাস্থ্য সচিবের কাছে যোগদানপত্র পাঠিয়ে দেন মুসা খান। এখন পর্যন্ত তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ না করা এবং বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব করার অভিযোগ তুলে মুসা খানকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছেনা। অন্যদিকে চেয়ার দখলে রাখা ডাক্তার মো: শাহআলমগত ২৯ শে ডিসেম্বর দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম দু-সপ্তাহে অফিস করেছেন মাত্র ১ দিন।
ডাক্তার মুসা খান বলেন- দায়িত্ব পেতে তিনি নিয়মিত অফিসে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছেনা তা তিনি বুঝতে পারছেননা। তিনি বলেন ড্যাব বা এধরনের কোন সংগঠনের সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন হাসিনা আক্তার গত ২৯ শে ডিসেম্বর অবসরজনিত ছুটিতে যান। তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলে ঐদিন আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মো. শাহ আলমের কাছে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। সাধারনত সিভিল সার্জন কোথাও গেলে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকেই দায়িত্ব দেয়া হয়। এক্ষেত্রে মুসা খান সদর উপজেলার কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। খোজ নিয়ে জানা গেছে স্বাচিব নেতা ডাক্তার শাহআলম সিভিল সার্জনের চেয়ার তার দখলে রাখায় কর্মচারীরা ডিসেম্বর মাসের বেতন পাননি। জানুয়ারী মাসের বেতনও আটকা থাকবে একই কারনে। এদিকে মুসা খান সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। আবার সিভিল সার্জনের দায়িত্বও পাচ্ছেননা। তিনি বলেন এই অবস্থায় আমারও বেতন হবেনা।
অভিযোগ রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্বাচিব নেতা ডাক্তার আবু সায়ীদ মুসার দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। এরআগে ২০১৪ সালের জানুয়ারীর প্রথম দিকে ডাক্তার নারায়ন চন্দ্র দাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করতে এলে তাকেও বাধা দেয়া হয়। দু-সপ্তাহ পর্যন্ত তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এসময় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছেন নারায়ন। তখন ডাক্তার আবু সায়ীদ নিজেই সিভিল সার্জনের চেয়ারে ছিলেন। নারায়ন চন্দ্র দাশ পরে স্থানীয় সংসদ সদস্যের দারস্থ হলে তার নির্দেশে জেলা প্রশাসক বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। এরপর ওই বছরের ১৫ ই জানুয়ারীতে যোগদান করতে পারেন ডাক্তার নারায়ন। যোগদানের পর নিয়োগে ডাক্তার সায়ীদের মনরক্ষা না করায় ওই বছরের ৭ ই আগষ্ট ডাক্তার আবু সায়ীদ তার লোকজন নিয়ে নারায়নের সরকারী বাসায় গিয়ে চরাও হন। সঙ্গে নিয়ে যান তার অনুগত জেলা সদর হাসপাতালের ওয়ার্ড মাষ্টার আনোয়ার,এনাম ও অস্থায়ী ভিত্তিতে ঝাড়–দার পদে নিয়োজিত বিল্লাল নামের একজনকে। প্রত্যক্ষদর্শী সুত্র জানায়-এরমধ্যে বিল্লাল জুতা নিক্ষেপ করেন সিভিল সার্জনকে লক্ষ্য করে। সায়ীদ থুথু মারেন নারায়নের ওপর। এরপর রাতেই নারায়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে চলে যান। সুত্র জানায়- সামনে একটি বড় নিয়োগ হতে পারে। এই নিয়োগ কব্জা করতে এবারো স্বাচিব নেতারা পুরনো পন্থা অবলম্বন করছেন।