সোমবার, ২৩শে জানুয়ারি, ২০১৭ ইং ১০ই মাঘ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

মামলায় আছে, ফরেনসিক প্রতিবেদনে নেই

AmaderBrahmanbaria.COM
জানুয়ারি ২০, ২০১৭

নিজ ঘরে বসেই ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমনার সেই ছবিটি পোস্ট করেছিলেন আলোচিত রসরাজ দাস (৩০)। পুলিশের করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযক্তি (আইসিটি) আইনের মামলায় রসরাজ ছবি পোস্টের কথা এভাবেই স্বীকার করেছেন বলে উল্লেখ রয়েছে।

তবে ঘটনার এক মাস পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া রসরাজের মোবাইল ফোন ও এর মেমোরি কার্ডের ফরেনসিক প্রতিবেদন ঘটনাকে অন্যদিকে মোড় দেয়। পুলিশ এখন বলছে, ধর্মীয় অবমাননার সেই ছবিটি রসরাজের মোবাইল ফোন থেকে নয় অন্য কোথাও থেকে পোস্ট করা হয়েছে।

পিবিআই’র দেয়া ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়ার পর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন সেসময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, পিবিআই’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পুলিশের জব্দকৃত রসরাজের মোবাইল ফোন থেকে ধর্ম অবমাননার ছবিটি পোস্ট করার আলামত পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ছবি পোস্টের সময় রসরাজ মাছ ধরতে বিলে ছিলেন বলে লোকজন মারফত জানা গেছে। এটা প্রমাণিত হলেই বোঝা যাবে রসরাজ এর সঙ্গে জড়িত নন।

তবে রসরাজের বিরুদ্ধে নাসিরনগর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কাউছার হুসাইনের দায়ের করা আইসিটি আইনের সেই মামলায় বলা হয়, রসরাজ জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, সে তার নিজ ঘরে বসেই গত ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টা ১৬ মিনেটে ধর্মীয় অবমাননাকর সেই ছবিটি পোস্ট করে।

রসরাজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ধর্মীয় অবমাননার সেই ছবি পোস্টের স্ক্রিনশট এর হার্ডকপিও সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া রসরাজ তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবা শরীফের উপর হিন্দুদের শিব মূর্তি বসিয়ে ছবি পোস্ট করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার দায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারায় অপরাধ করেছে বলেও মামলাটিতে উল্লেখ রয়েছে।

এদিকে, নিজেকে নির্দোষ দাবি করা রসরাজ গত ১৬ জানুয়ারি আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইসমাঈল হোসেন পুলিশের পরবর্তী প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত রসরাজের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর রসরাজের আইনজীবীর পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এস.এম ইউসূফও বলেন, বিভিন্ন তদন্তে দেখা গেছে রসরাজ ষড়যন্ত্রের শিকার। তার মাধ্যমে এ ধরনের কর্মকাণ্ড (ধর্মীয় অবমাননার ছবি ছড়ানো) করা সম্ভব নয়। সে ফেসবুক চালাতে জানে না।

Rasraj

পরে ১৭ জানুয়ারি দুপুরে রসরাজ জেলা কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে সাংবাদিকদের জানান, ধর্ম অবমাননার সেই ছবিটি তিনি পোস্ট করেননি এবং তিনি এখনো পর্যন্ত সেই ছবি দেখেননি। তিনি মাছ ধরার জন্য এক সপ্তাহ বিলে ছিলেন। বিল থেকে উঠে তীরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ৫-৬ জন লোক তাকে মারধর করে ধরে নিয়ে যায়।

রসরাজ আরও জানান, ফেসবুকে ছবি দেখার জন্য ঘটনার মাস তিনেক আগে চাচাতো ভাই হৃদয়কে দিয়ে ফেসবুক আইডি খুলিয়েছেন তিনি। ফেসবুকের পাসওয়ার্ড কী জিনিস সেটিও তিনি জানেন না।

রসরাজের প্রতিবেশী অনুকুল দাস ওরফে মনা মাস্টারের ছেলে আশুতোষ দাস রসরাজের ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জানেন এমন খবর এলাকায় চাউর হওয়ার পরই আশুতোষ ভারতে গা ঢাকা দেন। পরে ৯ জানুয়ারি কৌশলে পুলিশ আশুতোষকে দেশে ফিরিয়ে আনেন।

এরপর রসরাজের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলার সাক্ষী হিসেবে ১১ জানুয়ারি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আশুতোষ। জবানবন্দিতে আশুতোষ কী বলেছেন সেটি স্পষ্ট করে জানা না গেলেও রসরাজের ফেসবুক আইডি থেকে তার খুব ঘনিষ্ঠজন ধর্মীয় অবমাননার সেই ছবিটি পোস্ট করেছিল বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আশুতোষ জানিয়েছিলেন।

সাক্ষী হিসেবে আশুতোষের জবানবন্দি গ্রহণের পর থেকেই রসরাজের ছোট ভাই পলাশের খোঁজে নামে পুলিশ। তবে পলাশ এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন। পলাশকে ধরতে পারলেই ছবির রহস্যের জট পুরোপুরি খুলে যাবে বলে পুলিশের ধারণা। যদিও পুলিশ সরাসরি পলাশকে খোঁজার ব্যাপারে মাঠে নামার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। জাগো নিউজ