বন্ধ কারখানাগুলো খোলার উদ্যোগ নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক : আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় আবার চরম পরীক্ষায় পড়েছে দেশের তৈরী পোশাক শিল্প খাত। তাজরীনে অগ্নিকাণ্ড, রানা প্লাজা ধস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা হারানো, একের পর এক বিদেশী নাগরিক খুন এবং সর্বশেষ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হত্যাকাণ্ডের পর নতুন করে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে রফতানি আয়ে ৮২ শতাংশ অবদান রাখা এ খাতটি। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে গত পাঁচ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে ৫৯টি কারখানা। অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে আরো বেশকিছু কারখানা। সঙ্কট ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের কারখানায়ও। স্বাভাবিক কারণেই স্টক লটসহ নানামুখী সমস্যায় জড়াচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিভিন্ন পর্যায়ের মালিক ও শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, আশুলিয়ার বন্ধ কারখানাগুলো আবার চালু করার ব্যাপারে উভয় পক্ষই আগ্রহী। তবে আবার অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কায় কোনো পক্ষই দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। কারখানার মালিকেরা বিষয়টি চাপিয়ে দিচ্ছেন বিজিএমইএর ওপর। আর বিজিএমইএ চাচ্ছে, শ্রমিকেরা স্বেচ্ছায় এসে বলুক, তারা কাজ করতে চান। তখনই কারখানা খুলে দেয়া হবে। অন্য দিকে শ্রমিকদের আশঙ্কা, কাজ শুরু করার কথা বলতে গেলেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারে। এমনই একটি ত্রিমুখী সঙ্কটে পড়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পথ দিন দিন কঠিন হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কারখানার মালিকেরা জানান, কারখানা বন্ধ থাকায় তারা বড় ধরনের আর্থিক তির সম্মুখীন হবেন জেনেও সব কিছু মেনে নিয়ে কারখানা বন্ধ রেখেছেন। কারণ শ্রমিক আন্দোলনে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। বৃহত্তর স্বার্থে ুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করছেন তারা। এমন অবস্থায় শিল্পাঞ্চলে ছোট ও মাঝারি কারখানার মালিকেরা ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার কথা ভাবছেন। এতে চাকরি হারাবে হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক। শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি এবং শ্রমিকদের কাজে ফিরে আসার আগ্রহ দেখে বিজিএমইএ কারখানাগুলো ফের চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বিজিএমইএ নেতারা জানান, সাশ্রয়ী দাম, ভালো মানের পোশাক ও কর্মপরিবেশের সংস্কারসহ নানান উদ্যোগের ফলে এ বছর রফতানি আদেশ তুলনামূলক বেশিই পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী বসন্ত মওসুমকে কেন্দ্র করে ইউরোপ ও আমেরিকান বায়ারদের কাজ এখন পুরোদমে চলছে। পোশাক কারখানাগুলোতে চলছে রাত-দিনের ব্যাপক উৎপাদন কর্মযজ্ঞ। ঠিক এ রকম মুহূর্তে আশুলিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে ভালো মানের কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের কর্মবিরতি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। তাদের আশঙ্কা, এ অবস্থায় পোশাক খাতে আকস্মিক কর্মবিরতির ফলে রফতানির অনেক আদেশ বাতিল হয়ে যেতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পোশাক খাতের অগ্রযাত্রা নস্যাৎ করার জন্য কিছু অসাধু শ্রমিক নেতা ষড়যন্ত্র করছেন। সাথে যুক্ত হয়েছেন কিছু রাজনৈতিক নেতাও। গোয়েন্দারা তাদের শনাক্ত করছেন। ষড়যন্ত্রের পেছনে গোয়েন্দারা কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম পেয়েছেন। তারা নিশ্চিত হয়েছেন, আন্দোলনের নামে ওই সব নেতা শ্রমিকদের উসকে দিয়ে পোশাক খাতে অরাজকতা সৃষ্টি করছেন। ইতোমধ্যে সাতজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
আটক শ্রমিক নেতারা হলেনÑ তৃণমূল গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শামিম খান, গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্ট সভাপতি সমিত্র কুমার দাস, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্ট কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি আল কামরান, টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজান, বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্ট কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল খান। আরো কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের পুলিশ খুঁজছে বলে জানা গেছে।
অন্য দিকে শ্রমিক আন্দোলন উসকে দেয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় আটক বিএনপির সহযোগী সংগঠন মহিলা দলের নেতা ও সাভার উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিনি আক্তার ঊর্মীসহ ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়ার বিষয়ে আজ সোমবার আদালতে শুনানি হবে। একই মামলার মামলায় ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ডা: দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবুকেও পুলিশ হণ্যে হয়ে খুঁজছে।