মঙ্গলবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০১৬ ইং

ফটিকছড়িতে চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড

CTGBDNEWS.COM
ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে অন্যান্য বাগানের মত ফটিকছড়ির ১৭টি চা বাগানেও এবার রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাগান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। অধিক পরিমাণ চা উৎপাদনের জন্য অনুকূল আবহাওয়ার পাশাপাশি এ বছরকে চায়ের উন্নত সার্কেল বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছর বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২২টি চা বাগানে ৯৪ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ফটিকছড়ির ১৭টি চা বাগানে ইতিমধ্যে ৮০ লাখ কেজি চা উৎপাদন করেছে। যা গত অর্ধশত বছরের রেকর্ড অতিক্রম করার সাফল্য। চট্টগ্রাম চা নিলাম কেন্দ্রে সর্বোচ্চ দরপ্রাপ্ত চা বাগান ও সারা দেশে এক মিলিয়ন কেজির বেশি চা উৎপাদনকারী বাগানে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফটিকছড়ির চা বাগান।

Loading...

এদিকে উৎপাদনের এ সাফল্য ধরে রাখতে সেচ সামগ্রীর আমদানি কর হ্রাস, স্বল্প সুদে ঋণ ও গ্যাস সুবিধার দাবি জানিয়েছেন বাগান মালিকরা। ফটিকছড়ি উপজেলার ১৭ টি চা বাগানের মধ্যে রয়েছে- পেড্রোলো গ্রুপের রামগড় চা বাগান, হালদাভ্যালী চা বাগান, এনজিও সংস্থা ব্র্যাক এর মালিকানাধীন কর্ণফুলী চা বাগান ও কৈয়াছড়া চা বাগান, টি.কে গ্রুপের মালিকানাধীন রাঙ্গাপানি চা বাগান, বারমাসিয়া চা বাগান ও এলাহী নূর চা বাগান, ইস্পাহানী গ্রুপের নেপচুন চা বাগান, এ.কে খান গ্রুপের আঁধার মানিক চা বাগান, মোস্তফা গ্রুপের উদালিয়া চা বাগান। ব্যক্তি মালিকানাধীন আছিয়া চা বাগান, পঞ্চবটি চা বাগান, নিউ দাঁতমারা চা বাগান, দাঁতমারা চা বাগান, নাছেহা চা বাগান, মা-জান চা বাগান ও মোহাম্মদ নগর চা বাগান।

চট্টগ্রাম চা নিলাম কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে সর্বোচ্চ দরপ্রাপ্ত চা বাগানের মধ্যে রয়েছে ফটিকছড়ির ব্র্যাক-কৈয়া ছড়া চা বাগান। তাদের উৎপাদিত চা ২৪৯ টাকা ৭ পয়সা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এই উচ্চ দরের তালিকায় কর্ণফুলী, নেপচুন, রামগড়, রাঙ্গাপানি, হালদা ভ্যালী, আছিয়া, পঞ্চবটি, মা-জান, উদালিয়া’সহ ফটিকছড়ির ১০টি চা বাগান রয়েছে। এক মিলিয়ন কেজির বেশি চা উৎপাদনকারী বাগানের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্র্যাক-কর্ণফুলী চা বাগান।

চট্টগ্রাম চা সংসদের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্টু বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২২টি বাগানে এবছর ৯৪ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা ৮৫ লক্ষ কেজির বেশি চা উৎপাদন করেছি। বছর শেষে এটি এক কোটি কেজিতে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

হালদা ভ্যালী চা ও রামগড় চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত বছর হালদাভ্যালী বাগানে মোট উৎপাদন হয়েছিল ছয় লাখ ২০ হাজার কেজি। চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় লাখ ২০ হাজার কেজি।এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জাতীয় ভাবে প্রতি হেক্টরে চা উৎপাদনের পরিমান ১২৭০ কেজি। কিন’ হালদাভ্যালীতে এবার উৎপাদন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৩২০০ কেজি।

এবার রামগড় চা বাগানে এবার সাত লক্ষ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় এক লক্ষ কেজি বেশি। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্র্যাক কর্ণফুলী চা বাগান সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে এ বাগানের উৎপাদন ছিল ১৩ লাখ ৬২ হাজার ২শ কেজি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ বছর উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ ২৫ হাজার কেজি। বছর শেষে এ উৎপাদনের পরিমান প্রায় ১৮ লাখে কেজিতে উন্নীত হওয়ার আশা সংশ্লিষ্টদের।

নেপচুন চা বাগানে গত বছর উৎপাদন ছিল সাত লাখ ৯৬ হাজার কেজি। চলতি বছরে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এটি দাঁড়িয়েছে প্রায় নয় লাখ ৯৯ হাজার কেজি। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ১১ লাখ কেজির চা উৎপাদনের আশা তাদের। রাঙ্গাপানি চা বাগানের, গত বছর উৎপাদন ছিল তিন লাখ ৩৪ হাজার ১৯০ কেজি। এব বছর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় চার লাখ ৫২ হাজার ১৩৭ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। বছর শেষে পাঁচ লাখ কেজি অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।

টি.কে গ্রুফের চা বাগানের আবাসিক প্রধান বাবুল বিশ্বাস বলেন, বাগানগুলোতে সেচের ব্যবস্থা করার সুবিধার্থে সেচ সামগ্রী আমদানি কর হ্রাস করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, পূর্বে এ কর এক শতাংশ ছিল, যা বৃদ্ধি করে এখন ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া সেচের পাইপের জন্য আলাদা শুল্ক করের দাবি করা হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। চা পুনরায় বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উঠাতে হলে উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। বাগানগুলোর বেদখল হওয়া ভূমি সরকারি সহায়তার মাধ্যমে উদ্ধার করে সেখানে চা গাছ রোপন করতে হবে। প্রোগ্রেচিং পদ্ধতিতে সহজ সুদে ঋণ দিতে হবে। ফটিকছড়ির বাগানগুলোর জন্য গ্যাস সুবিধা দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সিলেট, শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জ অঞ্চলের চা বাগানগুলোর ৯০ ভাগ গ্যাস সুবিধা পাচ্ছে। এতে তাদের চা প্রক্রিয়ার খরচও অনেক কম হয়। তিনি খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির সিমুতাং গ্যাস ফিল্ড থেকে ফটিকছড়ির চা বাগানগুলোতে গ্যাস সুবিধা দেয়ার দাবি জানান।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে চা চাষাবাদ হয়েছে। তৎমধ্যে ১২টি চা বাগান এক কোটি ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২০৬ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর দিয়েছে এ বছর। এছাড়া চায়ের বিক্রয় মূল্যের শতকরা এক শতাংশ চা বোর্ডকে দেয় বাগানগুলো। কিন্তু সরকার বা চা বোর্ড থেকে আশানুরূপ সহায়তা না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাগান মালিকরা।

More from my site

  • সরাইল ও নাসিরনগরে বজ্রপাতে নিহত-১, দগ্ধ-৩
  • এবছরের অস্কার ‘বাহুবলীর’ ?
  • সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি কোর্স চালুর সিদ্ধান্তসব বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত
  • বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির প্রথম স্ত্রী, অতঃপর…
  • আখাউড়ায় ভারতীয় ৩শ পিস শাড়ী জব্ধ
  • বিরিয়ানির প্যাকেটে ডিম নেই বলে রেস্তােরাঁ ভাঙচুর

More from my site