গ্রামীণ নামে সরকারি অনুমোদন পেতে বড় কষ্ট : ড. ইউনূস
নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কোনো প্রকল্পে ‘গ্রামীণ’ নাম থাকলে তার সরকারি অনুমোদন সহজে পাওয়া যায় না। এসব জায়গায় আমাদের একটা মুশকিল হয়ে যায়, বলাও মুশকিল এসব কথা…। সরকারের অনুমোদন পেতে আমাদের বড় কষ্ট হয়। এখানে কেউ ‘গ্রামীণ’ নাম দেখলেই আর এটাতে হাত দিতে চায় না। …যেকোনো বিপদে পড়ি আবার। অনুমতির জন্য আমরা আটকে থাকি। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের গৌরবের ১৮০ বছর পূর্তি উপলে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধনকালে গতকাল প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
ইউনূস বলেন, কয়েক দশক আগে গ্রামীণ ব্যাংক সংক্রান্ত আইন করতে গিয়ে সরকারের সাথে সমস্যা শুরু হয়, যা এখনো তা চলছে। কার্যক্রম শুরু হলো ১৯৭৬ সালে, ১৯৮৩ সালে এটাকে ব্যাংকে রূপান্তর করলাম। নাম দিলাম গ্রামীণ ব্যাংক। আইডিয়া হলো মালিক হবে সদস্যরা। এটা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চলবে। লাভের টাকা ঋণগ্রহীতাদের কাছেই ফিরে যাবে। বাইরের কেউ পাবে না। আইন করতে যখন গেলাম মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলো, এভাবে তো পারবেন না। সরকারকে কিছু শেয়ার দিতে হবে। পড়লাম বিপদে। ওই যে বিপদে পড়লাম, বিপদ থেকে এখনো মুক্ত হইনি। সেই চক্কর এখনো চলতেছে।
ব্যাংকের মালিকানা এবং কর্তৃত্ব নিয়েই এই সঙ্কট জানিয়ে এর জন্য সরকারকে দায়ী করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘আমি বললাম যে, ঠিক আছেÑ ৫ শতাংশ দিই, ১০ শতাংশ দিই। তারা যখন আইন বানাল ৭৫ ভাগ মালিকানা সরকারের, ২৫ ভাগ মালিকানা সদস্যদের। আমি বললাম, এটা তো হবে না। চাচ্ছিলাম ব্যাংক পুরোপুরি গরিবের মালিকানায় হবে।
শনিবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে জাতীয় পতাকা ও স্কুলের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েটসের সভাপতি ও আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, ১৮০ বছরপূর্তি উৎসব ও উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, সদস্যসচিব মো: মোস্তাক হোসাইনসহ স্কুলের হাজারো সাবেক শিার্থী।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, পুনর্মিলনী অকৃত্রিম একটি বিষয়। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এলে এ জন্য আনন্দ লাগে। এখানে স্কুলের নানান স্মৃতিকথা মনে পড়ে। স্কুলে বন্ধুদের একেকজনকে একেক নামে ডাকতাম। সুমইননা, কুদ্দুছইচ্ছা, ইউনূসইয়া। নাম বিকৃত করতে স্যারেরাও বাদ থাকতেন না। আজ অবধি আমরা ওই নামে বন্ধুদের চিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি বকশিরহাটের ছেলে। কাজেই বকশিরহাট থেকেই রোজ আমাকে কলেজিয়েট স্কুলে আসতে হতো। বকশিরহাট থেকে হেঁটে আন্দরকিল্লায় আসতাম। ওইখানে তখন একটি পুলিশ বিট ছিল। তাকে বকশিরহাট পুলিশ বিট বলা হতো। ওখান থেকেই বাসে চড়ে কালীবাড়ি এলাকায় নামতাম। সেখান থেকে হেঁটে স্কুলে আসতাম। খুব বেশি সময় লাগত না। তখন বাসভাড়া ছিল দুইআনা। তিনি বলেন, ‘স্কুলে আসার সময় খুব মজা হতো। বাবা বাসভাড়া হিসেবে দুই আনা করে চারআনা আর টিফিন খরচের জন্য চারআনা দিতেন। চারআনা দিয়ে স্কুলের কাছে রুটি, মাখন আর চা খেতাম অথবা বেশি আনন্দ লাগলে উজালা সিনেমার পাশে ভাসমিয়া রেস্টুরেন্টে একটি সিঙ্গাড়া ও একটি চা খেতাম।’
গতকাল সকাল থেকেই কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক শিার্থীরা এসে জড়ো হতে শুরু করেন। পুরনো বন্ধুদের ফিরে পেয়ে অনেক সাবেক শিার্থী ক্যামেরাবন্দী হচ্ছেন সেলফিতে।