সেনাপ্রধানের নিয়োগ নিয়ে ভারতে জোর বিতর্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :দু’জন সিনিয়রকে ডিঙিয়ে ভারতের সেনাপ্রধান পদে জেনারেল বিপিন রাওয়াতের নিয়োগ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। রাওয়াত কার্যভার গ্রহণ করবেন আগামী ৩১ ডিসেম্বর।
নোট বাতিল ইস্যু নিয়ে ভারতে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণের ঠেলায় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনই যখন পণ্ড হবার যোগাড়, তখন আবার শুরু হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিপিন রাওয়াতের নিয়োগ নিয়ে মোদী সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের পালা।
বিপিন রাওয়াত বর্তমান প্রধান দলবীর সিং সুহাগ-এর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। কংগ্রেস, বামদল ও সমাজবাদী পার্টিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, দু’জন সিনিয়ার সেনা অফিসারকে ডিঙিয়ে কী করে তাঁদের থেকে অপেক্ষাকৃত একজন জুনিয়ার জেনারেলকে সেনাপ্রধান করা হলো?
কংগ্রেসের তরফে সংবাদমাধ্যমকে বলা হয়, নতুন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের ঊর্ধতন দু’জন জেনারেল কি তাহলে অযোগ্য? তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারের কি কোনো অভিযোগ আছে? তাঁদের পেশাদারিত্ব নিয়ে সরকারের মনে কি কোনো সংশয় আছে? এই ধরনের বেছে বেছে ‘চেরিফল’ তোলা কতটা ন্যায়সংগত?
কংগ্রেস নেতা মনিশ তেওয়ারির প্রশ্ন, এটা কি পক্ষপাতিত্ব, নাকি মোদী সরকারের প্রতি আনুগত্যের পুরস্কার? সরকারের উচিত বিষয়টি খোলসা করা।
কমিউনিস্ট পার্টির ডি. রাজা বলেন, এর আগে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআই-এর প্রধান, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, বর্হিবিভাগীয় গোয়েন্দা সংস্থা, কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের প্রধান – সব জায়গাতেই মোদী অনুগত ব্যক্তিদের বসানো হয়েছে, যেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
একই অভিযোগ সিপিআই দলের৷। একইভাবে সমাজবাদী পার্টির বক্তব্য, শীর্ষপদে নিজেদের লোক বসিয়ে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজের হাতে রাখতে চাইছে স্টহাঙ্গুলোক।
এ সব নিয়োগের সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরিও।
অন্যদিকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগে বিজেপি মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাখবি বলেন, সেনাপ্রধান নিয়োগের জন্য সরকারকে কি সোনিয়া গান্ধীর অনুমতি নিতে হবে?
তাঁর কথায়, প্রথমত, সরকার যেটা করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়ম-নীতি মেনেই করেছে। দ্বিতীয়ত,বর্তমান পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জেনারেল রাওয়াতকেই সরকারের কাছে সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে হয়েছে। চীন সীমান্তে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে জঙ্গি তত্পরতা এবং পশ্চিম সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় সন্ত্রাস মোকাবিলায় দশ বছরের বিশেষ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দু’টোই জেনারেল রাওয়াতের আছে। এমন একজনকেই প্রয়োজন ছিল।
তিনি বলেন, তাছাড়া ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীতে এই ধরনের নিয়োগ তো এই প্রথম নয়। কংগ্রেসের কি মনে নেই, ১৯৮৩ সালে কংগ্রেস জমানাতেই ইন্দিরা গান্ধী সিনিয়ার জেনারেল এস. কে সিনহাকে টপকে সেনাপ্রধানের পদে বসিয়েছিলেন এ. এস বৈদ্যকে?
উল্লেখ্য, ৮০-র দশকে খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শায়েস্তা করতে অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে সেনা অভিযান চালানো হয়েছিল ওই জেনারেল বৈদ্যের নেতৃত্বে।
বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র কংগ্রেসের সমালোচনার জবাবে বলেন, সেনাপ্রধানের নিয়োগ নিয়ে যাঁরা রাজনীতি করছেন, তাঁরা আসলে জাতীয় নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে অবিবেচকের মতো কথা বলছেন। কারণ, সব দিক বিবেচনা করেই বিপিন রাওয়াতকে সেনাপ্রধান করা হয়েছে। সূত্র : ডয়চে ভেলে