১০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া জঙ্গিবাদের সমর্থক : জরিপ
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণদের প্রতি ১০ জনের একজন জঙ্গিবাদকে সমর্থন করছে বলে বেরিয়ে এসেছে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপে। ইস্টওয়েস্ট ইউনির্ভার্সিটির আইন বিভাগের পক্ষ থেকে করা জরিপে এও বের হয়ে এসেছে যে, তরুণদের ৮৪ শতাংশই মনে করে, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সন্ত্রাসবাদে জড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে।
দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে এক অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। মোট ৩০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক হাজার জনের ওপর এই জরিপ চালায়। এতে অংশ নেয়াদের মধ্যে ৬৬৩ জন পুরুষ এবং ৩৩৭ জন নারী।
সন্ত্রাসবাদ ও তারুণ্য বিষয়ক জরিপটিতে মোট ২০টি প্রশ্ন ছিল। এতে সন্ত্রাসবাদের কারণ ও উত্তরণের উপায় চিহ্নিত করার বিষয়ে প্রশ্ন জানার চেষ্টা করা হয়েছে।
জরিপে ১০ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করলেও কী কারণে তারা এই মনোভাব পোষণ করেন, সে বিষয়ে তথ্য দেননি।
জরিপ অনুযায়ী সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ছে এমন তরুণদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ উচ্চ বা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। আর ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ নি¤œ বা নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য।
সন্ত্রাসবাদের কারণ
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের মধ্যে নয় জনেরও বেশি মনে করেন, পারিবারিক অসচেতনতা বা উদাসীনতা সন্ত্রাসবাদে যুক্ত হওয়ার মূল কারণ। তারা মনে করেন, পরিবারের সদস্যরা নজরদারি করলে কোনো স্বজনের সন্ত্রাসে জড়িত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
সন্ত্রাসবাদের রাজনৈতিক কারণও চিহ্নিত করা হয়েছে জরিপে। অংশ নেয়া ৯০ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই মনে করে রাজনৈতিক উস্কানি সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্ররোচিত করে।
তৃতীয় প্রধান কারণ হিসেবে বেকারত্বকে চিহ্নিত করেছে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৯ দশমিক ১ শতাংশ। তারা বলছেন, বেকার জনসংখ্যা যে কোনো কারণে সন্ত্রাসবাদে যুক্ত হচ্ছে।
সন্ত্রাসবাদের কারণ হিসেবে সামাজিক অস্থিরতা, ধর্মীয় অজ্ঞতা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও চিহ্নিত করেছে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। সন্ত্রাসবাদ দমনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর কড়া আইনি ও সামাজিক নজরদারির সুপারিশ করেছে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা।
শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গেও সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র আছে বলে বের হয়ে এসেছে এই জরিপে। অংশগ্রহণকারীদের ৭১ শতাংশ মনে করেন, শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দিচ্ছে। সব ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাতেই সন্ত্রাসবিরোধী মনোভাব তৈরির পরিবেশ, পাঠ্যক্রম ও পাঠদান গ্রহণ করা আবশ্যক বলে মনে করেন অংশগ্রহণকারীরা।
সন্ত্রাসবাদের প্রভাব
জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশই মনে করে সন্ত্রাসবাদ আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বা ফেলতে পারে। তারা মনে করেন, সন্ত্রাসবাদের উত্থান রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিও ক্ষতি করে।
জরিপে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় তরুণদের অসন্তুষ্টিও ফুটে উঠেছে। ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় তারা খুশি নয়।
সন্ত্রাসবাদের সমাধান
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮০ দশমিক ৮ শতাংশ মনে করে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে সময়োপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন ৮৭ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী।
পারিবারির সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। ৫১ দশমিক ১ শতাংশ মনে করেন, পরিবার ও সমাজ সচেতন হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হয়।
এ ছাড়া যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা রোধে উদ্যোগী হওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কার্যকর প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম দেয়া, সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার ব্যবস্থা করা, আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা বৃদ্ধি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি এবং দ্রুত বিচারের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ এসেছে জরিপে।
অতিথিরা যা বলেছেন
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবাহান চৌধুরী বলেন, ‘জরিপে এসেছে ৯০ শতাংশ তরুণ সন্ত্রাসকে ঘৃণা করে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের। তবে হতাশার ১০ শতাংশ তরুণ সন্ত্রাসকে সমর্থন করছেন। কেন করছেন সেই কারণ খুঁজে বের করতে হবে। কারণ খুঁজে বের করতে পারলে এর সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।’
এই গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছেন। তবে কিছু আল বদর আল শামস মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেননি। তবে বেশিরভাগ মানুষ মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করায় আমরা মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়েছি। এখনও যেহেতু বেশিরভাগ তরুণ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না, সেহেতু এই সমস্যা মোকাবেলা আমাদের পক্ষে কঠিন হবে না।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ^বিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারপারসন ফরাস উদ্দিন বলেন, যারা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছেন, তাদেরকে কল্যাণের পথে ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত পড়ার চাপ সন্ত্রাসবাদের অন্যতম কারণ।
কেবল সন্দেহের কারণে কেউ যেন সাজা না পায়, সে দিকে নজর দিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করেন এই অর্থনীতিবিদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের জঙ্গি বিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টোরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একজন বা দুইজন রিক্রুটার পুরো ব্যবস্থাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। তারা কোরআনের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদেরকে সন্ত্রাসবাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কেবল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সন্ত্রাস দমন করা সম্ভব নয়। পরিবার লক্ষ্য রাখতে হবে ছেলে মেয়েদের আচরণগত কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না। যদি তারা উগ্রবাদে ধাবিত হয় তাহলে বোন-বাবা, মা-বাবাকেই তাকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে। ঢাকাটাইমস