নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে বিভিন্ন প্রযুক্তির টেলিযোগাযোগ সেবার তরঙ্গ ব্যবহারে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা বা টেকনোলজি নিউট্রালিটি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ফলে যেকোনো তরঙ্গে যেকোনো প্রযুক্তির সেবা দিতে পারবে মুঠোফোন অপারেটররা। সুবিধাটি দিতে দ্বিতীয় প্রজন্মের (টুজি) টেলিযোগাযোগ সেবায় ব্যবহৃত ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গ নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিটিআরসি।
যেকোনো তরঙ্গ ব্যান্ডে যেকোনো প্রযুক্তির সেবা দিতে পারার সুবিধাকে বলা হয় প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা। বর্তমানে বাংলাদেশে এই সুবিধা না থাকায় মুঠোফোন অপারেটরদের টুজি ও থ্রিজি প্রযুক্তির মতো সেবা দিতে বিভিন্ন ব্যান্ডের তরঙ্গ ব্যবহার করতে হয়। টুজির জন্য বাংলাদেশে নির্ধারিত ব্যান্ড হলো ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ। আর তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) টেলিযোগাযোগ সেবার নির্ধারিত ব্যান্ড হলো ২১০০ মেগাহার্টজ। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার ফলে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) টেলিযোগাযোগ সেবা দিতে এই তিন ব্যান্ডের প্রতিটিই এখন ব্যবহার করতে পারবে অপারেটররা। তবে এ জন্য আলাদা লাইসেন্স নিতে হবে অপারেটরদের। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে মুঠোফোন অপারেটররা বিটিআরসির কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল।
বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন বৈঠকে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে নীতিমালা সংশোধন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ এই দুটি ব্যান্ড দিয়ে এখন টুজির পাশাপাশি থ্রিজি বা ফোরজি সেবা দিতে পারবে অপারেটররা।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে তরঙ্গ ব্যবহারে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ব্যান্ড দিয়ে অপারেটররা এখন থ্রিজি ও ফোরজি সেবা দিতে পারবে। তবে এ জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে অপারেটরদের আলাদা লাইসেন্স নিতে হবে।
গ্রামীণফোনের প্রধান করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বলেন, তরঙ্গ ব্যবহারে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চালু আছে। বাংলাদেশে এ সুবিধা চালু হলে সেটি অপারেটর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সরকার ও গ্রাহক— সব পক্ষের জন্যই লাভজনক হবে। ফলে অপারেটরদের দক্ষতা বাড়বে, গ্রাহক অপেক্ষাকৃত উন্নত সেবা পাবেন, সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাড়তি আয়ও নিশ্চিত হবে।
মুঠোফোন অপারেটর সূত্রে জানা গেছে, ফোরজি সেবা চালুর জন্য বাংলাদেশে সবচেয়ে উপযোগী ব্যান্ড হলো ১৮০০ মেগাহার্টজ। কারণ এ ব্যান্ডের তরঙ্গের প্রযুক্তি ব্যবস্থা (ইকোসিস্টেম) সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় আছে। তবে বিটিআরসির কয়েকজন কর্মকর্তা মনে করেন, অপারেটররা ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ফোরজি চালু করলে ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গের ব্যবহার অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে। কারণ তখন তারা নতুন করে ৭০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনতে আর আগ্রহী হবে না।
তবে বিটিআরসির এ চিন্তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে গ্রামীণফোনের মাহমুদ হোসেন বলেন, যে হারে দেশে মুঠোফোন ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে অপারেটরদের আরও তরঙ্গের প্রয়োজন হবে। তাই ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড অপারেটররা কিনবে না, এমন চিন্তা যুক্তিযুক্ত নয়।
১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে বাড়তি ১০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামের মাধ্যমে বিক্রির জন্য গত বছর উদ্যোগ নিয়েছিল বিটিআরসি। এ ব্যান্ডের প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের দাম প্রথমে তিন কোটি ডলার নির্ধারণ করা হলেও পরে তা কমিয়ে আড়াই কোটি ডলার করা হয়। এখন প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা যুক্ত হলে এই ব্যান্ডের তরঙ্গ নিলাম মূল্য আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিটিআরসির কর্মকর্তারা।