নিজস্ব প্রতিবেদক : আবারও নাসিরগরের হিন্দুপাড়ার একজন হিন্দু ব্যক্তির জাল রাখার ঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটিকে রহস্যজনক বলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এলাকাবাসী ও কিছু জনপ্রতিনিধি। এ ঘটনায় এ বাড়ির মালিক, তার ছেলেসহ আরেকজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুক্ত করে দিয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৫টায় পশ্চিমপাড়ার ছুট্টু দাসের জাল রাখার ঘরটিতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নাসিরনগর থানার ওসি আবু জাফর। তিনি জানান, খবর পেয়ে আমি পৌনে ছয়টার সময় পৌঁছে দেখি আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
এ আগুন জন্ম দিয়েছে নতুন প্রশ্ন। কেননা, একদিকে এ ঘটনার আনুমানিক ১০ মিনিট আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত ৮ সদস্যের পাহারাদার টিম সারারাত পাহারা শেষে যার যার বাড়ি প্রবেশ করেন। এমনকি ছুট্টু মিয়ার ছেলে সুজিৎ দাসও ছিলেন পাহারার কাজে। তিনিও ঘটনার ১০ মিনিট আগে ঘরে প্রবেশ করেন। রোববার সকাল ১০টার দিকে তিনি সুজিৎ দাস বলেন, কিছুই তো বুঝলাম না। কেমনে কিতা হইল?
ছুট্টু দাস বলেন, আগুনে ফটফট কইরা আওয়াজ হইতাছিল। এইটা শুইনা আমি আগুনের টের পাই। পরে চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা আসে। সবাইরে নিয়াই আগুন নিভাই। আগুনে তার ২ লাখ টাকার জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় বাসিন্দা পাহারা থাকা ও গত তিন নভেম্বর দিবাগত রাতে নাসিরনগর সদরের ৫টি হিন্দু বাড়ির ছয়টি ঘরে ও গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় লোড শেডিং-এর পরপরই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেবের একটি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা, ছুট্টু দাসের জালের ঘরে আগুনের ঘটনাকে ব্যাপক রহস্যজনক করে ফেলেছে।
রহস্যজনক ভাবার আরেকটি কারণ হচ্ছে- ছুট্টু দাসের বাড়িতে আগুন লেগেছে জাল রাখার ঘরে, বসত ঘরে নয়। ৫টি বাড়ির যে ছয়টি ঘরে আগুন লেগেছিল, সেটিও ছিল রান্না ঘর, লাকড়ির ঘরে আগুন। ভাইস চেয়ারম্যানের বাড়িতে যে ঘরে আগুন দেওয়া হয়, সে ঘরের বারান্দায় রাখা পাটকাঠিতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ মানুষ পুড়িয়ে মারা বা হতাহতের উদ্দেশে আগুন দেওয়া হয়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, জাল রাখার যে ঘরটিতে আগুন লেগেছে, সে ঘরের উত্তর দিকে একটি পথ রয়েছে, এটি চলে গেছে, অতি সংলগ্ন লংগন নদীর তীরে। পশ্চিম দিকও অনেকটাই খোলা। ছুট্টু দাস ও তার ছেলে সুজিতের ধারণা- খোলা স্থান দিয়েই দুর্বৃত্তরা এ কাজ করে থাকতে পারে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব বলেন, হিন্দু ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলার পর যারা আরও আমার বাড়িসহ ছয়টি বাড়িতে আগুন দিয়েছে, তারাই এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। এসব ঘটনার মধ্যে কিছু মিল রয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল জ্যোতি দত্ত বলেন, কী বলব, বলার ভাষা নেই। প্রকৃত ঘটনার বিচার বাধাগ্রস্ত করতে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
তিনি এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে বলেন, দ্রুত এসব দুষ্কৃতকারীদের যেন শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়। তিনি আরও বলেন, এভাবে যে আগুন দিচ্ছে, এতে তো পুরো পাড়াই জ্বলে পুড়ে যেতে পারে।
যে পাহারাদার দলের কথা ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, শুধু সেই দলই নয়, নাসিরনগর সদর ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে পাহারাদার দল গঠন করেছে পুলিশ। যাতে নাশকতা সহজে প্রতিরোধ করা যায় এবং দুষ্কৃতকারীদের ধরা যায়। যেহেতু শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৫টায় ছুট্টু দাসের বাড়িতে আগুন লাগার ১০মিনিট পূর্বে পাহারা শেষে ছুট্টু দাসের ছেলে সুজিৎ দাস ঘরে প্রবেশ করে এবং পরপরই আগুন লাগে, সেহেতু প্রথম সন্দেহের তীরবিদ্ধ হয় ছুট্টু দাস, সুজিৎ দাসসহ পুরো পাহারদারদের উপর। এজন্য পুলিশ ছুট্টু দাস, সুজিৎ দাস ও আরেক পাহারাদার নির্মল দাসকে থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু সন্দেহজনক কিছু না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান নাসিরনগর থানার ওসি আবু জাফর। সম্পাদনা: আনোয়ার