বিদেশে গিয়ে অনেক নারী যা করতে বাধ্য হচ্ছেন (ভিডিও)
---
লোভনীয় কাজের প্রস্তাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রায়ই গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশি নারীদের নিয়ে যাওয়া হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ ভালো অবস্থায়, কেউ আবার দুর্ভাগ্যে জড়িয়ে পড়েন। বিদেশের মাটিতে কি হয়, কীভাবে তারা বেঁচে থাকেন, তা হয়তো আমরা কেউই আঁচ করতে পারি না। তবে এসব দেশে যাওয়ার পর অনেক নারীদের ওপর যে মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালানো হয়, তার একটি চিত্র ফুটে উঠেছে সেখান থেকে দেশে ফেরা নির্যাতনের শিকার এক নারীর বক্তব্যে। ইতিমধ্যে তার এ বক্তব্যটি একটি নাটিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছে ইউটিউবে। মূলত বিদেশগামী নারীদের সচেতনতা বাড়াতে প্রকাশিত হয়েছে ভিডিওটি। এরপরই তোলপাড় শুরু হয়েছে ফেসবুকসহ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ভিডিওতে দেখা যায়, এক বাংলাদেশি নারী মধ্যপ্রাচ্যের কোনো এক দেশে (ভিডিওতে উল্লেখ নেই)কাজের সন্ধানে যায়। তাদের বিদেশে যেতে সহায়তা করে বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের সেই দেশটিতে বাস করা নাজমা নামের এক নারী। এরপর ওই নারীকে নাজমা কাজের কথা বলে এক বাসিন্দার কাছে দুই লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। যদিও সেটা বুঝতে পারেনি নির্যাতিতা ওই নারী। তখন নাজমা ওই নারীকে বলে, তাকে বাড়িতে লোকটির ছেলে-মেয়ে স্কুলে নিয়ে আসা ও তার বৃদ্ধ বাবাকে দেখাশুনা করা। এরপর গাড়িতে করে লোকটি তাকে নিয়ে যায়।
ওই দেশের মানুষ গৃহকর্মীদের সামনে বসতে দেয় না। কিন্তু মানুষরূপী নরপশুটি তাকে সামনে বসিয়ে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। ওই লোকটির বাসায় গিয়ে দেখা যায় কেউ নেই, মেয়েটি জিজ্ঞাসা করলেও উত্তরে লোকটি জানায় তার ছেলে-মেয়ে কিংবা বাবা কেউ নেই। তিনি একাই বাসায় থাকেন। এরপর তার জামাকাপড় খোলা শুরু করে লোকটি। কিন্তু মেয়েটি রাজি না হওয়ায় তাকে মেরে বিছানায় ফেলে দেয়। জ্ঞান ফিরে মেয়েটি দেখতে পান লোকটি তার পাশে শুয়ে আছে, আর তার গায়ে কোনো পোশাক নেই। তখন কী ঘটেছিল মেয়েটি কিছুটা আঁচ করতে পারে। পরে তাকে ছোট ছোট পোশাক পরিধান করতে বলা হয়, তা পরার পর আবারও শুরু হয় নির্যাতন। নরপশুর হাত থেকে বাঁচতে মেয়েটি জুব্বা পরিহিত লোকটির পা পর্যন্ত ধরে, তবে তার মন গলাতে পারেননি।
একদিকে নির্যাতন, অন্যদিকে মেয়েটিকে খেতে দিতো না লোকটি। এভাবে থাকতে থাকতে একদিন জ্বরে আক্রান্ত হয় মেয়েটি। এরপরও তার দিকে সহানুভূতির হাত বাড়ায়নি লোকটি। উল্টো সে সময় তার আরও দুই সহযোগীকে বাড়িতে নিয়ে এসে মেয়েটির নির্যাতন চালায়। এতে মেয়েটির লিপস্টিক লোকটির মুখমণ্ডলসহ সারা জুব্বায় লেগে যায়। তখন সে ওয়াসরুমে গেলে, মেয়েটি ছুরি নিয়ে হাত কাটতে শুরু করে, এটা বুঝতে পেরে লোকটি তাড়াতাড়ি এসে তার হাত থেকে ছুরিটা কেড়ে নেয় এবং হাতে ব্যান্ডেস করে দেয়। অতঃপর একজনকে ফোন করে, মেয়েটিকে আর তার ফ্ল্যাটে রাখা যাবে না বলে জানিয়ে সেখানে পাঠিয়ে দেয় লোকটি। সেখানকার যুবকটিকে হাত-পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানালে অনেকক্ষণ পর সম্মতি দেন তিনি। তারপর মেয়েটিকে ওই ছেলেটি একটি জিন্স ও গেঞ্জি পরতে দিয়ে গোসল করতে বলেন। এরপর সুযোগ পেয়ে ছাদ থেকে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করে মেয়েটি। কিন্তু ছেলেটি তাকে লাফ দেওয়ার আগেই থাবা দিয়ে ছাদে ফেলে দেয়। এর কয়েকদিন পর আবারও জ্বরে আক্রান্ত হয় মেয়েটি। তারপর তাকে নাজমার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানের নাজমার এক বোনও ছিল। একই সঙ্গে তাদের ঘরে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে আনা কয়েকজন নারীও ছিল। তখন নাজমা ওই মেয়েটির পরিবারের কাছে ভালো থাকার জন্য তা বাড়িতে ফোন করে বাজে কথা বলে। নাজমা তার মাকে বলে, ”আপনার মেয়েতো বড় খারাপ কাজ করছে, তার পেটে বাচ্চা।” এমন কথা শুনে মেয়েটির মা বলে, ”সে বিদেশে আছে, বিদেশে থাক। সে যেন বাড়িতে না আসে। এখানে আমার মান সম্মান আছে।”
এরপর যেকয়েকটা দিন সেখানে ছিল মেয়েগুলো, তাদের ঠিকমতো খেতে দিত না। তাদের দিয়ে বাড়ির সব কাজ করানো হতো, এমনকি তাদের দিয়ে পা টিপেও নেওয়া হতো ঠিকমতো খেতে দেওয়া হতো না। এক চামচ ভাতের সঙ্গে পঁচা তরকারি দেওয়া হতো। মাঝে মধ্যে নাজমা বাড়িতে যুবক ছেলেদের নিয়ে এনে মদ পান করতো। তাদের একজনকে একদিন ঘটনা খুলে বলে মেয়েটি। এরপর নাজমা তাদের বেদম প্রহার করে এবং মেয়েটির মাকে ফোন করে তার আত্মচিৎকার শুনিয়ে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু মেয়েটির মা বলে, দেখুন, আমি গরিব মানুষ, বাসা-বাড়িতে কাজ করে খাই। তখন ৮০ টাকা দাবি করে, না দিলে মেয়েটিকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। কিন্তু মেয়েটির মা ৪০ টাকা দিতে চাইলেও নাজমা রাজি হয়নি।
কয়েকদিন পর মেয়েগুলোকে ১০ জন লোকের কাছে বিক্রি করে দেয় নাজমা। যেদিন রাতে তাদের নিয়ে ওই যুবকদের আসার কথা, সেইদিন নাজমা বোনকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলে তারা কৌশলে তালা ভেঙে বাড়ি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশি এক স্কুলের অধ্যক্ষের কাছে যায়। তার কাছে ঘটনা খুলে বলার পর, তিনি ওই স্কুলে দুই দিন থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এরপর বাড়ি পাঠানোর জন্য বিমানের টিকিটও কেটে দেন। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় তাদের বাড়ি পাঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। তখন ওই মেয়েদের কাছ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে নাজমার বাসায় যান অধ্যক্ষ। প্রথমে রাজি না হলেও পুলিশের কথা বলতেই তারা পাসপোর্ট বের করে দেয়। এরপর তারা দেশে ফেরেন। সবশেষে মেয়েটির একটিই কথা, ভিক্ষা করে খেলেও যেন দালালের মাধ্যমে যেন কোনো নারী বিদেশ না যান।
বি. দ্র: বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ নারী শ্রমিক বিদেশে গিয়ে নিজেদের ভাগ্য উন্নোয়ন করছেন। এই ঘটনাটি শুধুমাত্র গুটিকয়েক দুর্ভাগা নারী শ্রমিকের চিত্র বহন করছে। মূলত, বিদেশগামী নারীদের সচেতনতা বাড়াতে প্রকাশিত হয়েছে ভিডিওটি।
https://youtu.be/u1OOm-cVfRg
ভিডিওটি সংগৃহীত
বিডি-প্রতিদিন