স্টাফ রিপোর্টার সরাইল : সরকারের দেওয়া দুঃস্থ ও অতিদরিদ্রদের ভিজিএফ কর্মসূচির চাল পাচারকারীদের রক্ষার তদবিরে নেমেছেন ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা। পেছনে থেকে সুইচ টিপছেন মন্ত্রী এমপি’র পদ লেহনকারী ২/১ জন চামচা। সবকিছু জেনেও বারবার থেমে যাচ্ছে প্রশাসন। সাড়ে ৪ টন চাল কোথা থেকে এসেছে ? কোথায় যাওয়ার কথা ? প্রশ্ন গুলোর উত্তর জেনেও ধীরে ধীরে নিরব হয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। তাই ঘটনার আদ্যপান্তা জান্তা ট্রাকের চালক আহিদ মিয়াকে রহস্যজনক কারনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে না প্রশাসন। আর এ জন্যই ঘটনার ৪৫ দিন পেরিয়ে গেলেও মূল পাচারকারীরা রয়েগেছে আজও অধরা। থানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দুদকে প্রেরন করছি, করব বলেই কাটিয়ে দিয়েছেন একমাস। গতকাল শুকবার সকালে একজন বলছেন দুদকে পাঠিয়ে দিয়েছি। সাথে সাথে আরেকজন বলছেন না। পক্রিয়াধীন আছে।
নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চাল পাচারের বিষয়টি জানতে পেরে প্রশাসন ও সাধারন লোকজন বিকাল ৫টার দিকে সরাইল বেপারী পাড়া ব্রীজের উপর ট্রাকটি আটক করে চ্যালেঞ্জ করেন। হতকচিত হয়ে চেহারা বিমূর্ষ হয়ে পড়ে চালক হেলপার ও জনৈক আরোহীর। চালক তার নিজের নাম অহিদ মিয়া ও গাড়ির মালিক জামাল মিয়া বলে জানান। দৌড়ে পালিয়ে যান জনৈক আরোহী। অহিদ মিয়া বলেন, চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদে যেখান থেকে ভিজিএফের চাউল বিতরন করা হচ্ছে। সেখান থেকেই চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা দাঁড়িয়ে থেকে চাউলের বস্তা গুলো তুলে দিয়েছেন। আরও বলেছেন সরাইলের নান্নু মিয়া চাউল গুলো গ্রহন করবে। এর বেশী কিছু বলতে পারি না। বলেই কাঁপতে থাকেন চালক।
কথোপোকথনের এক ফাঁকে লোক চক্ষুর অন্তরালে দ্রুত ট্রাক ফেলেই পালিয়ে যায় চালক ও হেলপার। ঘটনাস্থলে দ্রুত হাজির হন নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি চাউল গুলো ভিজিএফের এ বিষয় নিশ্চিত হয়ে জব্দ করেন। পরে ট্রাকসহ সেই চাউল পুলিশের সহায়তায় থানায় পাঠিয়ে দেন ইউএনও। চুন্টা ইউনিয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত টেক অফিসার মোঃ হাসিনুর রশিদ বলেন, আমি ১টা পর্যন্ত উপস্থিত থেকে ৫’শ কার্ডধারী লোকের মধ্যে বিতরন করেছি। এর মধ্যেও অনেক অনিয়ম পেয়েছি। সাড়ে ৪ টন চাল জব্দের বিষয়টি জেলা থেকে শুরু করে সারা দেশে আলোচনার জন্ম দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে টিভি ক্রলে প্রচার হতে থাকে। পরের দিন ৮ সেপ্টেম্বর সকল জাতীয় পত্রিকায় ব্যপকভাবে প্রচার হয়। কিন্তু পাচারকারীদের রক্ষার তদবিরে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা। আবার পেছন থেকে ধাক্কা দিতে থাকেন মন্ত্রী এমপি’র পদ লেহনকারী এখানকার বাসিন্ধা ২/১ জন চামচা। আবার দম্ভ করে বলেও বেড়াতে থাকেন এটা কোন বিষয় না। স্যারকে বলে খেয়ে ফেলুম। কিন্তু এ অপকর্মের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য বারবার নির্দেশ দেন স্থানীয় এমপি। মনের অজান্তেই তৈরী হয়ে যায় দুটি পক্ষ। প্রথমে গরম হলেও পরে থমকে দাঁড়ায় প্রশাসন। সকলের মধ্যেই চলে আসে একটা গা ছাড়া ভাব। ঘটনার ১১ দিন পর ইউএনও অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লিখিত নির্দেশ দেন। এরপর থেকেই পুলিশ শুধু বলছে বিষয়টি দুদকে প্রেরন করছি, করব। কিন্তু আদৌ দুদকে প্রেরন করেননি। স্থানীয়দের বক্তব্য হচ্ছে, দুদকে প্রেরন করার বিষয়টি হচ্ছে আরেকটি শুভঙ্করের ফাঁকি। ট্রাক চালক অহিদ মিয়ার বক্তব্য ধরে এগুলেই তো সব বেরিয়ে আসে। প্রশাসন কি কারনে ঘটনার ৪৫ দিন পরও নিরব? কেনই বা ট্রাক চালককে এ বিষয়ে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের তদবিরের কারনে কি পাচারকারীরা থেকে যাবে অধরা ? তাহলে আইনকি শুধু বিরোধী দল ও দূর্বলদের জন্য ? এমন সব প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে গোটা সরাইলে। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুপক কুমার সাহা বলেন, চাল আটকের মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নিবে। ট্রাক চালক অহিদকে এখনো আটক করেননি কেন ? এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি। কিন্তু পরক্ষণেই থানার আরেক কর্মকর্তা বলেন, চালের বিষয়টি এখনো দুদকে যায়নি। তবে পক্রিয়াধীন আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, একমাস পূর্বে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য থানাকে নির্দেশ দিয়েছি। কি করেছেন জানি না। তবে খুজ খবর নিয়ে দেখছি।