নিজস্ব প্রতিবেদক : আমরা সবাই কমবেশি স্বপ্ন দেখি। অনেক পরিকল্পনা করি। কিন্তু এক সময় তা কল্পনাতেই উবে যায়। মূলত দৃঢ় সংকল্পের অভাবে শুরু করাটায় হয়ে ওঠে না অনেকের। আবার শুরু করলেও বৈরী পরিবেশে আঁতুর ঘরেই বিলীন হয়ে রয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সকল বাধাবিপত্তি দূর করার ব্রত নিয়ে আমাদের স্টার্টআপদের বিশ্বসভায় নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। তাই, টানা দ্বিতীয় বারের মতো এই আয়োজনে আইসিটি বিভাগ সরাসরি সংযুক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারস্থ জনতা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ‘সিড-স্টারস্ ওয়ার্ল্ড উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালের ৩ আগস্টে ডিজিটাল টাস্কফোর্সের প্রথম সভায় কাওরান বাজারস্থ জনতা টাওয়ারটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হিসেবে গড়ে তুলতে বরাদ্দ দেন। নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ কাওরান বাজারস্থ জনতা টাওয়ারকে বাংলাদেশের প্রথম সরকারি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হিসেবে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করার মহতী উদ্যোগের উদ্বোধন করেন। আর তরুণ উদ্যোক্তাদের সকল কারিগরি সহযোগিতাসহ মেন্টরশিপ প্রদানের লক্ষে কানেক্টিং স্টার্টআপ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত সেরা ৫০ স্টার্টআপ প্রতিযোগীকে চলতি বছরের ২৭ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে জনতা টাওয়ারেই বিনামূল্যে স্পেস বরাদ্দ দেয়া হয়। সে সব সেরা ৫০টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান এখন জনতা টাওয়ারে বসে দেশের জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছে, শত ভিতের ওপর দাঁড় করাচ্ছে দেশের ব্র্যান্ড-ভ্যালু। কিন্তু দেশের গণ্ডিতেই আবদ্ধ না থেকে আমরা আমাদের স্টার্টআপদেরকে বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। সে লক্ষে সিডস্টারস্ ওয়ার্ল্ডে বাংলাদেশের যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই ‘সিডস্টারস্ ওয়ার্ল্ড ২০১৬’র আয়োজন করা হচ্ছে।
দেশে স্টার্টআপ সংস্কৃতি চালুর বিষয়ে পলক বলেন, বর্তমানে পৃথিবীতে যতগুলো প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি রয়েছে সেগুলো একদিন স্টার্টআপ ছিল। সম্ভাবনাময় সে সব কোম্পানি ধীরে ধীরে নিজেদের উদ্ভাবন ও পরিশ্রমের ফলে পাকাপোক্ত আসন গাড়তে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এটা সত্য যে, স্টার্টআপগুলোর শুরুর যাত্রা কখনোই মসৃণ ছিল না। শুরুতে যদি সামান্য সহযোগিতাও পাওয়া যায়, তাহলে অনেক উদ্যোগ আলোর মুখ দেখে, আলোকিত করে বিশ্বকে। তাই শুরুর এই কাজটা সহজ করে তরুণ উদ্যোক্তাদের বিকশিত হবার সুযোগ করে দিতেই আমাদের সরকার দেশে স্টার্টআপ সংস্কৃতি চালু করেছে। টেকসই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় স্টার্টআপ প্রতিযোগিতার আসর সিডস্টারস্ ওয়ার্ল্ড।
পলক আরও বলেন, আজকের পৃথিবীতে সব বড় বড় কোম্পানিই হলো আইটি বেইজড এবং এক সময়কার স্টার্টআপ। বিশ্বে ব্র্যান্ডের শীর্ষ ১০ তালিকার ৬টিই আইটি বেইজড। বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় থাকা বিল গেটস, ল্যারি এলিসন, জেফ বেজোস, মার্ক জুকারবার্গ, লেরি পেইজ, সার্জে ব্রিন, জ্যাক মা, স্টিব বলমার, পাওয়েল জবস, মাইকেল ডেল সবাই একসময় স্টার্টআপ ছিলেন। উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে প্রযুক্তিকে ভিত্তি করে এদের সবাই শূন্য থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধনী হয়েছেন। পৃথিবীকেই পাল্টে দিয়েছেন।
দেশীয় প্রতিষ্ঠিত স্টার্টআপ কম্পানির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলোর দিকেই যদি আপনারা তাকান তবে দেখতে পাবেন, এক সময়কার স্টার্টআপগুলো আজকের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি। ৬০’র দশকের স্টার্টআপ স্কয়ার আজ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি। আমাদের রিভ সিস্টেমস্, ডাটা সফট, বিকাশ ইত্যাদি কিন্তু এই পথ ধরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এগিয়ে যাচ্ছে ওয়ালটনও। তারা এখন দেশে ল্যাপটপ উৎপাদন শুরু করছে।
প্রতিমন্ত্রী দেশের তরুণদের নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমরা আশা করছি, প্রতিযোগিতামূলক ও অংশীদারিত্বমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের উদ্যোমী ও উদ্যোগী তরুণেরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে তাদের বেড়ে ওঠা ও টেকসই ক্ষমতা নিশ্চিত করবে। একদিন আমাদেরই কোনো স্টার্টআপ পুরো পৃথিবীকে নাড়িয়ে দেবে। গৌরবে এগিয়ে নেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত রক্তস্নাত লালসবুজের পতাকা।
তিনি বলেন, এজন্য আমাদের দুয়ার সবসময় খোলা থাকবে। সক্ষমতা প্রমাণের মাধ্যমে নিজেদেরকে ব্র্যান্ড হিসেবে উপস্থাপনের মঞ্চ এখন প্রস্তুত, এবার শুধু কুশীলবদের উপস্থাপনার অপেক্ষা। আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তরুণ স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোগগুলো সারা বিশ্বে দেশের পতাকাকে গৌরবান্বিত করবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিডস্টারস্ ওয়ার্ল্ডের এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি নিক ফেনেক, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক এসএম আশরাফুল ইসলাম, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, বেসিসের সহ-সভাপতি মো. এনামুল কবির, বেটার স্টোরিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনহাজ আনোয়ার, বেসিসের স্টার্টআপ স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান সামিরা জুবেরি হিমিকা, লিভারেজিং আইসিটি প্রকল্পের স্টার্টআপ বিভাগের দলনেতা সামি আহমেদ এবং সিডস্টারস্ ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম লিড শাহরিয়ার রহমান।