নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস জুলাই-সেপ্টেম্বরে (প্রথম প্রান্তিক) রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হয়নি বাংলাদেশ। আলোচ্য সময়ে ৮০৭ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করে আয় করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৬ কোটি ৭২ লাখ ডলার বা ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ কম। প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৯৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। এতে দেখা যায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিগত তিন মাসের হিসেবে প্রায় সব পণ্যই রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে রপ্তানির আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাকেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ফলে সামগ্রিক রপ্তানিতে এর প্রভাব পড়েছে। আর রপ্তানির এ নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় সন্তোষজনক নয়। প্রথম তিন মাসের কোন মাসেই উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি নেই এ খাতে। নিট ও ওভেন খাতে ৭৩৪ কোটি ৫১ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৬৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।
তৈরি পোশোকের নিট খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৪০ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৭৩ শতাংশ কম। একই সঙ্গে ওভেন খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩২৬ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ কম।ভাটা চলছে পাট ও পাটপণ্য খাতেও। অন্যতম বড় এ রপ্তানি খাতে তিন মাসের আয় ২০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ২৬ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
একই সঙ্গে পাট খাতে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি কমেছে দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ সময় কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছে ৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের এবং সুতা রপ্তানির আয় ১১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার।
তৈরি পোশাক ও পাটের পাশাপাশি ফুল, রাবার, পেট্রোলিয়াম উপজাত, সিল্ক, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য, জাহাজ, আসবাব, কম্পিউটার সেবাসহ বেশির ভাগই রয়েছে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়া পণ্যের তালিকায়। তবে এ সময় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়া পণ্যের তালিকায় রয়েছে চামড়া, চিংড়ি, হস্তশিল্প পণ্য, ওষুধ, কসমেটিক ও গলফ স্যাফট ইত্যাদি।
ইপিবির হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ২৩৭ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কম। সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
একই সঙ্গে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সেপ্টেম্বরে আয় কমেছে ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ।উল্লেখ্য, গেল ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। এর উপর ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তিন হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার।
এদিকে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাতের পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৬৬৬ কোটি ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫২ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা; যা এ সময়ের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। তবে গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় এবার এ খাতের পণ্য রপ্তানি আয় ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে।
ইপিবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর মেয়াদে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩৪০ কোটি ৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। একই সময়ে ওভেন গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩২৬ কোটি ৫১ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার।
এতে আরও জানানো হয়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছিল এক হাজার ৩৩৫ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ওই বছরের প্রথম তিন মাসে আয় হয়েছিল ৩২৫ কোটি এক লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আলোচ্য খাতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৪১৬ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ের মধ্যে এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ৩৪০ কোটি ৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ কম। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য খাতের রপ্তানি আয় ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ওভেন গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছিল এক হাজার ৪৭৩ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ওই অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আয় হয়েছিল ৩১৮ কোটি ৯১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আলোচ্য খাতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৬২১ কোটি মার্কিন ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মেয়াদে ওভেন গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৯১ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। এই সময়ের মধ্যে এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ৩২৬ কোটি ৫১ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ কম। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য খাতের রপ্তানি আয় ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে।