প্রশ্ন : আমাদের অঞ্চলে ঘরে ঘরে ও মসজিদে যে মিলাদ হয়, তা কি বিদআত?
উত্তর : ধন্যবাদ আপনাকে। ঘরে ঘরে মসজিদে সবখানেই তো মিলাদ হয় এখন। আমাদের প্রত্যেকটা কাজেরই মূল ইবাদতটা হয়ে গিয়েছে মিলাদ। এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি। রাসুল (সা.) করেছেন, এর কোনো প্রমাণ নেই। তার পরবর্তী সময়ে সাহাবিরা করেছেন এরও কোনো প্রমাণ নেই। এর পরবতী সময়ে তাবেয়িরা করেছেন, এমন প্রমাণ নেই। আইমাতুল ইসতেহাদ ইমাম আবু হানিফা (র.), ইমাম মালেক (র.), ইমাম হাম্বলি (র.) ও ইমাম শাফেয়িসহ (র.) যাঁরা মাশহুর ও প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কেরাম ছিলেন, তাঁরাও এটা করেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই। মূলত এই কাজটি একেবারেই নতুন আবিষ্কৃত একটি বিষয়। দ্বীনের মধ্যে এ ক্ষেত্রে রাসুল (স.)-এর কোনো নির্দেশনা নেই। আবার এটা ইবাদতের উদ্দেশে করা হচ্ছে সওয়াবের জন্য। তাই এটি বিদআত হওয়ার ক্ষেত্রে সামান্যতম কোনো সন্দেহ নেই বা সামান্যতম কোনো আপত্তি নেই।
এখানে যে বিভ্রাট তৈরি হয়েছে, সেটা হলো মিলাদের যে ফরম্যাট তৈরি করা হয়েছে, এই ফরমেটের মধ্যে দরুদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন দরুদকে অন্তর্ভুক্ত করে এই সন্দেহ তাদের মধ্যে জাগ্রত হয়েছে যে, আমরা তো দরুদ পড়তেছি। এখানে অসুবিধার কী আছে! কিন্তু দরুদ পড়ার পদ্ধতি তো রাসুল (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন। দরুদ আমরা কীভাবে পড়ব, সেটা কি রাসুল (সা.) শিক্ষা দেননি? তাহলে আমাদের এ কথা স্বীকার করতে হবে যে রাসুল (স.) আমাদের শিক্ষাই দিয়ে যাননি।
আর এর মধ্যে যে কথাগুলো আলোচনা করা হয়ে থাকে বা বলা হয়ে থাকে সেগুলো যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আবিষ্কার করেছেন, তাঁরা এর মধ্যে এমন কথা ঢুকিয়ে দিয়েছেন যার বেশির ভাগ বক্তব্যই গর্হিত বা গ্রহণযোগ্য নয় এমন বক্তব্য। এমনকি কোথাও কোথাও শিরক পর্যন্ত রয়েছে এবং আবেগের সবচেয়ে বেশি উপস্থাপনা বা প্রাধান্য রয়েছে।
এ জন্য এই কাজটি মূলত দরুদের পদ্ধতিকে সম্পূর্ণরুপে ডিঙিয়ে গিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর শেখানো দরুদের যে পদ্ধতি রয়েছে সেটাও এখানে অনুসরণ করা হয় না। যেমন : এখানে দরুদে ইব্রাহিমই পড়া হয় না। রাসুল (সা.) যে দরুদ শিক্ষা দিলেন, যেটি শ্রেষ্ঠ দরুদ, যেটাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সালাতের মধ্যে পড়তে বলেছেন, প্রতিদিন এবং প্রত্যেক সালাতে পড়তে বলেছেন, সেই শ্রেষ্ঠ দরুদ পর্যন্ত এখানে নেই। বরঞ্চ এমন কতগুলো জিনিস রয়েছে যেগুলোর সঙ্গে দরুদের কোনো সম্পর্ক নেই বরং আবেগ রয়েছে আর অতিরঞ্জন রয়েছে।
অথচ রাসুল (সা.) হাদিসের মধ্যে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তোমরা আমার ব্যাপারে অতিরঞ্জন করো না, যেমনিভাবে ঈসা ইবনে মারিয়ামের ব্যপারে খ্রিস্টানরা সীমালঙ্ঘন করেছে।’ অতিরঞ্জন করতে করতে একপর্যায়ে তাঁকে আল্লাহর পুত্র বানিয়ে দিয়েছে।
সুতরাং এই সীমালঙ্ঘন করা আল্লাহর রাসুল (সা.) কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। আর এখানে সেই সীমালঙ্ঘনই রয়েছে। তাই এই কাজটি কোনোভাবেই শরিয়াহ সম্মত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে দেখা গেছে যে ইসলামের ইতিহাসে মূলত যারা সত্যিকার অর্থে আল্লাহর রাসুলের অনুসরণ করেছে, তারা কেউ কোনো যুগে এই কাজকে অনুসরণ করেনি বা এই ধরনের কাজ করেনি। কিন্তু যখন আমরা ইসলাম সম্পর্কে জাহিল হয়ে গিয়েছি, ইসলামের বিধান সম্পর্কে জাহিল হয়ে গিয়েছি, শয়তান তখন সব কাজেই আমাদের লিপ্ত করে দিয়েছে, ফলে আমরা সবাই এ কাজের মধ্যে লিপ্ত হয়েছি এবং আমরা মনে করছি এটা একটা ভালো কাজ বা সওয়াবের কাজ।
কিন্তু না। সওয়াবের কাজ হলে অবশ্যই আল্লাহর নবী (সা.) করতেন, তাঁর সাহাবারা করতেন। আমরা তো আল্লাহর নবী (সা.)-এর থেকে বেশি মুত্তাকি হতে পারব না।