নিউজ ডেস্ক : নব্য জেএমবির পাঁচ সদস্য এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। এই পাঁচজন হলো নুরুল ইসলাম মারজান, রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাষ গান্ধী ওরফে গান্ধী, মো. বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট বাশার ওরফে চকলেট, রিপন ও খালিদ। পাঁচজন বাইরে তৎপর থাকায় এই জঙ্গি সংগঠনটিকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। তারা যেকোনও ধরনের হামলা ও নাশকতা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তবে, নব্য জেএমবির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষমতা ক্ষয় হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার ঘটনা তদন্ত করে গিয়ে অনেকের নাম পেয়েছি। নব্য জেএমবির অনেকে পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযানে নব্য জেএমবির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষমতা ক্ষয় হয়েছে। তবে এখনও এই জঙ্গি সংগঠনের কমান্ডিং পর্যায়ের বেশ কয়েকজন বাইরে রয়েছে। তাদের মধ্যে মো. নুরুল ইসলাম মারজান, মো. বাশারুজ্জামান ওরফে বাশার চকলেট, রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাষ গান্ধী ওরফে গান্ধী, রিপন ও খালিদ অন্যতম।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রফেসর রেজাউল করিম হত্যার পর গত এপ্রিলের শেষ দিকে ভারত পালিয়ে যায় রিপন ও খালিদ। তারা আর দেশে আসেনি।’
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে খুন করে জঙ্গিরা। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল ওই দুই জঙ্গি।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১ জুলাই সংঘটিত গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনাটি তদন্ত করছে সিটিটিসি। আমরা আগেই বলেছি এটি একটি লার্জার পিকচার। হলি আর্টিজানে যারা ঢুকেছিল এবং যারা পেছনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। কেউ কেউ ধরা পেড়েছে। অভিযানে নিহত হচ্ছে। কেউ গ্রেফতার হচ্ছে। গুলশান ও ৭ জুলাই সংঘটিত শোলাকিয়ার ঘটনার পর চারটি আমাদের অভিযানে আবু রায়হান তারেক কল্যাণপুরে সে নিহত হয়েছে। সে গুলশানের হামলাকারীদের প্রশিক্ষক ছিল। রিগ্যান নামে একজনকে আমরা জীবিত ধরেছি। সে কোরআনের শিক্ষা দিত। এছাড়া মিরপুরের রূপনগরে কথিত মেজর মুরাদ পুলিশি অভিযানে মারা গেছে। সেও প্রশিক্ষক ছিল। মূলত গুলশান ও শোলাকিয়ার প্রশিক্ষক ছিল মুরাদ ও তানভীর। সবকিুছুর সমন্বয়ক ছিল তামীম চৌধুরী। সেও নারায়ণগঞ্জে মারা গেছে। আরেকজন বসুন্ধরায় বাসাভাড়া নিয়েছিল আব্দুল করীম নামে। সেও আজিমপুরে মারা গেছে। আরও কিছু নাম আসছে। অর্থের উৎসটা কিছুটা জানতে পেরেছি। অস্ত্রের গতিপথের তথ্য পেয়েছি।’
রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাষ গান্ধী ওরফে গান্ধী নব্য জেএমবি’র উত্তরবঙ্গের কমান্ডার ছিল। গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলায় সে সন্ত্রাসী পাঠিয়েছিল। যখন কোনও হামলায় দক্ষ সন্ত্রাসীর প্রয়োজন হয়, তখন সে তা সরবরাহ করত উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গুলশানে দুজন এবং শোলাকিয়া একজন সন্ত্রাসী সে পাঠিয়েছিল।’
সর্বশেষ র্যাবের প্রকাশিত নিখোঁজের তালিকার ১৮ নম্বরে ছিল বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট বাশার ওরফে চকলেট। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার লালপুরে। সে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল। তার নিখোঁজের ঘটনায় কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট বাশার ওরফে চকলেট নব্য জেএমবির শীর্ষ কমান্ডারদের মধ্যে অন্যতম। সে ও মারজান দেশেই আছে বলে জানিয়েছে মনিরুল ইসলাম। তাদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সবচেয়ে কমবয়সী কমান্ডার মারজান (২৩)। সাংগঠনিক কার্যক্রমে তার দক্ষতা, সদস্য সংগ্রহ এবং কাউন্সিলিং করে আত্মঘাতী হামলায় শিক্ষিত তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শিতার কারণে সে এই কমান্ডিং পদবি পেয়েছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ইতোমধ্যে তার বিষয়ে নাগরিকদের কাছে তথ্য চেয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলে জেএমবির তৎপরতা সম্পর্কিত আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের প্রধান ছানোয়ার হোসেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত অক্টোবর থেকে জেএমবির তিন থেকে চারজন ন্যাশনাল কমান্ডার পরিবর্তিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মারজান নব্যজেএমবি’র অপারেশন ও ন্যাশনাল কমান্ডার। সে অত্যন্ত ধূর্ত ও জঙ্গি সাংগঠনিকতায় দক্ষ। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কয়েকজন কমান্ডার নিহত হওয়ার পর তার কাঁধে দায়িত্ব বর্তায়।
সূত্রটি জানায়, দলে উচ্চশিক্ষিত নতুন সদস্যদের জেএমবিতে ভেড়ানোর মূল চাবিকাঠি তার হাতে। সে সমন্বয় করে থাকে। গুলশানের ঘটনায় শিক্ষিত একটি শ্রেণীকে নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং অভিযানে পাঠানোর পেছনে তার ভূমিকা অগ্রগণ্য। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার ওপর আরও ২/৩ জন থাকলেও অপারেশন কমান্ডার হিসেবে মারজান দলের চাবিকাঠি নাড়ায়।
জেএমবির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শক্তি খর্ব করা হয়েছে উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে ৪টি ঘটনায় নব্য জেএমবির কমান্ডিং পর্যায়ের নেতা, সমন্বয়কারী এবং প্রশিক্ষক নিহত হয়েছে। এর মধ্যে কল্যাণপুরের অভিযানে ৪ জন কমান্ডিং পর্যায়ের নেতা, মিরপুরের রূপনগরে প্রশিক্ষক জাহিদুল ইসলাম (মেজর মুরাদ), জঙ্গিদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া করে দেওয়ার সমন্বয়কারী জঙ্গি তানভীর (করিম) এবং মূল সমন্বয়কারী তামিম চৌধুরী নারায়ণগঞ্জে নিহত হয়েছে।’
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ‘গুলশান এবং শোলাকিয়া হামলায় জেএমবি সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেছে। এসব হামলায় হুন্ডির মাধ্যমে ১৪ লাখ টাকা এসেছে। অর্থ যে পাঠিয়েছে তার পরিচয় আমরা পেয়েছি, তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের গায়ে প্রস্তুতকারী দেশের নাম না থাকায়, তা কোন দেশের অস্ত্র বলা যাচ্ছে না। তবে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এসব অস্ত্র ভারত হয়েই এসেছে।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু মারজান ও বাশারের মত জেএমবির সদস্য এখনও বাইরে রয়েছে তাই আমাদের অব্যাহত অভিযানের মাধ্যমে তাদের গ্রেফতার করা হবে।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন