মাঠে নামছে বিএনপিদীর্ঘ বিরতির পর আবারো রাজপথে ফিরছে বিএনপি। সবদলের অংশগ্রহণে একটি নতুন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে খুব শিগগিরই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গণসংযোগের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি। পবিত্র হজ পালন শেষে তিনি বর্তমানে সপরিবারে মদিনায় অবস্থান করছেন। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন।
৭ সেপ্টেম্বর রাজকীয় অতিথি হিসেবে পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন সৌদি যান। লন্ডন থেকে তার বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সপরিবারে হজ কাফেলায় যোগ দিয়েছেন। চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে ফিরে দুই একদিন বিশ্রাম নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকবেন। নীতি নির্ধারণী ফোরামে আলোচনার পর ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন। এরপর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন।
অপর একটি সূত্র জানায়, নতুন কর্মসূচির প্রাথমিক ধাপে গণসংযোগের কথাই বিবেচনা করা হচ্ছে। নতুন নির্বাচন আদায়ের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার পূর্বে আন্দোলনের নতুন কৌশল হিসেবেই গণসংযোগের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে জনসভা, পথসভাসহ অন্যান্য গণসংযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা সাজানো হবে। গণসংযোগের পর পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করতে চাইছেন বিএনপি হাইকমান্ড। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য মানবকণ্ঠকে বলেন, আমাদের দল পুনর্গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে আমাদের দলের নতুন জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে রাজপথের কর্মসূচি নিয়েও আমরা মাঠে নামতে চাই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের সংকট নিরসনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। কিন্তু বর্তমান সরকার সে ধরনের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ?ব্যাপারে মোটেও আন্তরিক নয়। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই সরকারকে হঠাতে হবে। ফ্যাসিস্ট একটি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা কঠিন। তাই বলে আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। তিনি জানান, শিগগির বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মাঠে নামবেন। দেশব্যাপী তিনি গণসংযোগ শুরু করবেন। আর এই গণসংযোগের মধ্যদিয়েই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু হবে। আন্দোলনের কৌশলে এবার ভিন্নতা থাকবে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, দেশে জঙ্গিসহ যেসব সংকট চলছে তা কেবল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে কেটে যাবে। বিএনপি সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। মধ্যবর্তী নির্বাচন নয়, এই মুহূর্তে নির্বাচন চায়। তবে এ নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। তাহলে বোঝা যাবে জনগণ কোন দিকে। কীভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায় এজন্য আলোচনা করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের পর থেকেই বিএনপি ও তার রাজনৈতিক জোটের শরীকদের নিয়ে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। বিএনপির আন্দোলনের মধ্যেই ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনেই ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি লাগাতার দেড় মাসের বেশি সময় হরতাল-অবরোধের সহিংস কর্মসূচি চালায়। এর পরের বছরও ৫ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক বছর পূর্তির দিনটিকে সামনে রেখে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচির ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে ওই কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি আবারো দেশব্যাপী লাগাতার হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি চালায়। কিন্তু দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে আন্দোলনে বিরতি দিয়ে স্থানীয় সরকারের সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। পাশাপাশি দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে। অবশেষে ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলের পর সাড়ে চারমাস সময় নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের জাতীয় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করেছেন। একই সঙ্গে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের অস্থিরতা কাটাতে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদবঞ্চিতদের জায়গা দেয়া হবে অঙ্গসংগঠনগুলোতে। খুব শিগগিরই বিএনপির অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠন সম্পন্ন হবে।
এ দিকে নতুন নির্বাচন নিয়ে আন্দোলনে নীরবতার কারণে রাজনৈতিকভাবে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মী ও সর্মথকরা এক ধরনের হতাশার মধ্যে রয়েছে। ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও আন্দোলন নিয়ে বিএনপির নীরবতায় নাখোশ। রাজপথের আন্দোলন শুরুর বিষয়ে জোট ও দলের নেতাকর্মীদেরও চাপ রয়েছে।