ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বহুল প্রতিক্ষীত ২০তম কাউন্সিলে প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ, পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীকে আনার সর্বাত্নক চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান পূর্বপশ্চিমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আগামী অক্টোবরের ২২-২৩ তারিখ আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন আন্তর্জাতিক অতিথিদের দায়িত্বে থাকা একটি প্রতিনিধি দল। ফারুক খানের নেতৃত্বে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যোগদানের জন্য ২৭ দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের ৮৫ জন নেতা, সাংবাদিক এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে নিশ্চিত করা হবে কারা কারা কাউন্সিলে যোগ দিতে বাংলাদেশে আসছেন।
আওয়ামী লীগের একটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫৭ জন আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। ভারত থেকে ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহকে যেকোনো মূল্যে কাউন্সিলে আনতে চায়। এছাড়া ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকেও আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে আনার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মমতাকে টেলিফোনে আমন্ত্রণ দেবেন বলে জানিয়েছে সূত্র।
ভারতের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি এবং দলের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একবার রাহুল গান্ধীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জাতিসংঘের অধিবেশন থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী নিজেও রাহুলকে ফোনে আমন্ত্রণ দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট গো ইয়ে জো ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রেডিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এবং মহাসচিব লতিফ খোসাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। লতিফ খোসা আসার আগ্রহ প্রকাশ করে ই-মেইল পাঠালেও এখনো নিশ্চিত করেননি আসিফ আলী জারদারি।
সাবেক ক্রিকেটার ও পাকিস্তানের উদীয়মান রাজনৈতিক নেতা তেহরিক ই-ইনসাফের সভাপতি ইমরান খানকে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে আনতে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, তিনিও যোগ দেবেন কাউন্সিলে। অপরদিকে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল জাফরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এছাড়া যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা জেরিমি করবায়েন, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির নেতা নিকোলাস স্টারজিওন, কনজারভেটিব দলের নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী থেরাস মে, লিবারেল ডেমোক্যাটিক পার্টির টিম ফারেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্টের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক সিনেটর টিম কেইন, প্রতিনিধি জো বাইডেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া রিপাবলিক দল থেকে পল রায়ান এবং কেভিন ম্যাকার্থিকে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সৌদিআবর, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপ, জাপান, জার্মানি, তুরস্কের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অতিথিদের মধ্যে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী কয়েকটি গণমাধ্যমের কর্মীদেরও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। মোট ২৭ দেশের ৮৫ জন বিদেশি প্রতিনিধির মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন বিশিষ্ট নাগরিক রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অধ্যাপক রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যোগ দিতে আসা বিদেশি প্রতিনিধিদের জন্য থাকা-খাওয়া এবং যাওয়া-আসার খরচ বহন করবে দলটি। এছাড়া সংসদের নতুন সদস্যদের কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করে বিদেশিদের নিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন নিদর্শন ঘুরিয়ে দেখানো হবে।