২রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ইং, শুক্রবার ১৮ই ভাদ্র, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ


আমদানি নিষিদ্ধ অবৈধ ডিটিএইচের ব্যবহারে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার


Amaderbrahmanbaria.com : - ২৭.০৮.২০১৬

 
নিজস্ব প্রতিবেদক : সংযোগ ছাড়াই স্যাটেলাইট টিভি দেখার উন্নত প্রযুক্তি ডাইরেক্ট টু হোম বা ডিটিএইচের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বৈধ কোম্পানি বা সংযোগ থাকা সত্ত্বেও এই প্রযুক্তিটির অবৈধ ব্যবসা করেই চলেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে সরকার বছরে শ’ শ’ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ডিজিটাল ক্যাবল টিভির জন্য সেট টপ বক্স (এসটিবি) ঢাকা ও চট্টগ্রামে বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছেন। কারণ এটা হলে প্রতি মাসে ৯ কোটি টাকা এবং বছরে ১০৮ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে সরকার।

 

অন্যদিকে অবৈধ পথে ডিটিএইচ এলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে সরকার। সরজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের টাটা স্কাই, রিলায়েন্স, ডিশ টিভি, এয়ারটেলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ডিটিএইচ ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডি ও বনানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে যাচ্ছেন কিছু ব্যক্তি। গত বছর র‌্যাবের অভিযানে অসাধু ব্যবসায়ীরা কিছুটা গা-ঢাকা দিলেও অনলাইনের শ্রেণিকৃত বিজ্ঞাপন সাইটে চক্রটি অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজধানীর অনেক বাড়িতে এসব ডিটিএইচ সংযোগ রয়েছে। বাড়িগুলোর ছাদে
অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করার ছোট আকারের ডিশ বা ছাতা দেখা গেছে।

জানা গেছে, রাজধানীতে ডিজিটাল ক্যাবল টিভি সেবার ক্রেতার সংখ্যা ১০ হাজারের মতো। গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিয়েলসন বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে প্রায় দেড় কোটি বাড়িতে কমপক্ষে একটি করে টিভি সেট রয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ বাড়িতে আছে ক্যাবল টিভি সংযোগ। সেই হিসাবে ১ কোটি ১০ লাখ বাড়িতে ক্যাবল টিভি সংযোগ রয়েছে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৪০০ ক্যাবল অপারেটর রয়েছে। ক্যাবল অপারেটরদের সংগঠন কোয়াবের মতে, ঢাকায় প্রতি ৫ জনের জন্য গড়ে ১টি করে টিভি সেট রয়েছে। সেই হিসাবে প্রায় ২ কোটি জনবসতির শহর ঢাকায় প্রায় ৪০ লাখ টিভি সেট আছে।
সূত্র জানায়, গত বছর অক্টোবর মাসে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এলাকায় আমদানি নিষিদ্ধ ডিটিএইচ ব্যহারের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় র‌্যাবের একটি দল। ওই সময় বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ডিটিএইচ ‘টাটা স্কাই’-এর সরঞ্জাম জব্দ করে র‌্যাব। কিন্তু এর পরও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব অবৈধ ডিটিএইচ বিক্রির পাশাপাশি একাধিক অনলাইনেও ব্যবসা করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, কিছু অসাধু ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অবৈধভাবে ডিটিএইচের ব্যবসা করে আসছেন। বিষয়টি র‌্যাব আমলে নিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এলাকায় অভিযান চালায়। এতে বিপুল পরিমাণ আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় ডিটিএইচ প্রযুক্তি বিক্রির জন্য মজুত দেখতে পায়। র‌্যাবের দলটি জানতে পারে, এসব সরঞ্জাম আমদানির কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। ওই দিন র‌্যাব সদস্যরা ট্রাকের মালামালসহ মুন্সীগঞ্জ এন্টারপ্রাইজের মুক্তি দাস, নাজমা ইলেকট্রনিকসের বেলাল হোসাইন ও কামাল হোসেনকে আটক করেন।
পরে জিজ্ঞাসাবাদে আটক তিনজন বলেন, ছাতা ও অপটিক্যাল রিসিভারের নাম দিয়ে এসব সরঞ্জাম আমদানি করা হয়। এ জন্য ভারতে তাদের নির্ধারিত এজেন্ট আছে। তারা এ পণ্যগুলো সংগ্রহ করে বেনাপোল সীমান্তে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে ঢাকায় এনে বিভিন্ন মার্কেটে সরবরাহ করা হয়। সাধারণ মানুষ ১০-১২ হাজার টাকার বিনিময়ে এসব সংযোগ নেন। এসব ডিটিএইচ সংযোগের মাধ্যমে ভারতীয় সব চ্যানেল খুব স্পষ্ট দেখা যায়।
ডিটিএইচ সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্যাবল সংযোগ ছাড়াই স্যাটেলাইট টিভি দেখার এই উন্নত প্রযুক্তিতে গ্রাহক সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে টিভি অনুষ্ঠান নিজের টিভিতে ডাউনলিংক করতে পারেন। এই প্রযুক্তিতে ছবি ও শব্দ আসে ক্যাবল সংযোগের চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে। প্রতিটি চ্যানেলের ছবি ও শব্দের মান থাকে একই রকম।
উল্লেখ্য, ক্যাবল অপারেটর ছাড়াই ক্রেতাদের জন্য বাসস্থানে ডিশ অ্যান্টেনা স্থাপন করে সেট টপ বক্স দিয়ে ডিটিএইচ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে এত দিন ছিল না। কয়েক বছর আগে দুটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয় সরকার। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ৭ই অক্টোবর বেক্সিমকো কমিউনিকেশন লিমিটেড ও একই বছরের ২০ অক্টোবর বায়ার মিডিয়া লিমিটেডকে লাইসেন্স দেয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ডিটিএইচ সেবা চালু করে দিয়েছে বেক্সিমকো কমিউনিকেশনসের রিয়েল ভিউ। এই অল্প সময়ে সারা দেশে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাবপক সারা ফেলে দিয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ গ্রাহকদের হৃদয় জয় করেছে। ডিটিএইচ সেবা শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই ডিটিএইচ সেবা নেয়ার জন্য একজন গ্রাহকের খরচ হয় প্রায় ছয় হাজার টাকা। বাংলাদেশে এ ধরনের সেবা বেক্সিমকোই প্রথম নিয়ে এসেছে। রিয়েল ভিউর মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি হবে ৩০০ টাকা। সহজে বিল পরিশোধের জন্য স্ক্র্যাচ কার্ড, মোবাইল পেমেন্ট (বিকাশ, ডিবিবিএল মোবাইল ব্যাংকিং, আইএফআইসি মোবাইল ব্যাংকিং, শিওরক্যাশ, ইউক্যাশ) সুবিধা রয়েছে।

ডিটিএইচে কী কী সুবিধা: সেট টপ বক্সে কয়েক শ চ্যানেল দেখা যাবে। তা ছাড়া কোনো কাজে ব্যস্ত থাকলে দর্শকেরা তাদের পছন্দের অনুষ্ঠান সেট টপ বক্সে পেন ড্রাইভ বা পোর্টেবল হার্ডডিস্কে রেকর্ড করতে পারবেন। পরে অবসর সময়ে তা দেখা যাবে। তবে পাইরেসি করা যাবে না। তা ছাড়া একই সময়ে একটি টিভি সেটে একাধিক চ্যানেল দেখতে পারবেন দর্শকেরা। হাই ডেফিনিশন (এইচডি) চ্যানেল, ভিডিও অন ডিমান্ডসহ নানা সুবিধাও পাওয়া যাবে এই সেট টপ বক্সের মাধ্যমে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, করসহ একটি সেট টপ বক্সে সাড়ে তিন হাজার টাকার কম মূল্যে বিক্রি করা যায় না। এটিকে আইসিটি খাতে অন্তর্ভুক্ত করে কর কমানো হলে সেট টপ বক্সের দামও কমে আসবে। কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, প্রতিটি সেট টপ বক্সের আমদানি শুল্ক হার ৫৯.৮৯ শতাংশ।





Loading...


প্রকাশকঃ মোঃ আশ্রাফুর রহমান রাসেল
সম্পাদকঃ জাবেদ রহিম বিজন
চেয়ারম্যান : আলহাজ্ব নুরুজ্জামান
ঠিকানা : ৬০৩ ফুলবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
email : [email protected] (news)
Phone: +880851 62307
+8801963094563


close