সোমবার, ২৭শে নভেম্বর, ২০১৭ ইং ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

বউ বদলের সংস্কৃতি চর্চায় এগিয়ে ভারত

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ১৫, ২০১৬

---

2016_05সম্প্রতি ভারতীয় নৌসেনার কয়েক জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বউ বদলের অভিযোগে নতুন করে তদন্ত শুরুর হয়েছে। তারা নাকি স্ত্রীকে সহকর্মী বা জুনিয়রের হাতে তুলে দিয়ে সহকর্মী বা জুনিয়রের স্ত্রীকে বিছানায় নেন। যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কোচিতে কর্মরত এক কর্মকর্তার স্ত্রী বিচ্ছেদের পর এমন অভিযোগ করেন।

২০১৩ সালে অভিযোগটি প্রথম সামনে এসেছিল। কিন্তু তখন বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি। ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট নতুন করে অভিযোগটির তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেয়ায় বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।

এতো গেল সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু ভারতীয় সমাজে এই সংস্কৃতির চর্চা কোন অবস্থায় আছে? পরিসংখ্যান দেখলে রীতিমতো ভিড়মি খাওয়ার অবস্থা হবে!

চার বছর আগে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিয়েলসন ভারতে একটি যৌনতা জরিপ করেছিল। তারা দাবি করেছিল, জরিপের  উঠে আসা ভারতের গোপন যৌনতার হালচাল দেখলে চমকে যাবে দুনিয়া। ‘ওয়াইফ সোয়াপিং’ বা বউ বদল এখানে এখন ডালভাত। সেখানে এক নম্বরে আছে আসানসোল।

কলকাতা থেকে সামান্য দূরত্বে মফস্বল শহরে বউ বদল একটি স্বাভাবিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সবাই নিঃসঙ্কোচেই এই চর্চার কথা স্বীকার করেন।

নিয়েলসনের জরিপ বলছে, বউ বদলে এগিয়ে চারটি মেট্রো শহর— নয়াদিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই এবং কলকাতা। এছাড়াও এগিয়ে কোটা, মোরাদাবাদ, কোলাপুর, সালেম, কোট্টায়াম, গুন্টুর, আসানসোল, আইজল এবং বালেশ্বর শহরে ব্যাপক চর্চা হয় এ সংস্কৃতির। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কেরালার কোট্টায়াম। জরিপ বলছে, প্রায় ২৭ শতাংশ বিবাহিত দম্পতি নিয়ম করে সঙ্গী বদল উপভোগ করেন।

একনজরে জরিপের তথ্য:
১. মধ্যপ্রদেশের র‌্যাটলামে সঙ্গী-সঙ্গিনীকে পোশাকহীন অবস্থায় দেখা মানুষের কাছে চূড়ান্ত অবসেশন।
২. কোট্টায়ামের ৯ শতাংশ মানুষ যৌন মিলনের সময় উত্তেজনা বাড়াতে যৌন বলবর্ধক ওষুধ ব্যবহার করেন।
৩. কোটার ৫৮ শতাংশ মানুষ শারীরিক মিলনের পর পার্টনারের আবেগকে প্রতারিত করে।
৪. ভারতে ওয়ান নাইট স্ট্যান্ডসের রাজধানী গুন্টুর।
৫. পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে বউ বদলের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে।
৬. র‌্যাটলামের ১৪ শতাংশ মানুষ সমকামী। অনেকে আবার নিজের সন্তানের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

এই ছবি মুক্তির আগে ২০১২ সালে পাওলি দাম বলেছিলেন, এটা এখন বাস্তবতা!

ওয়াইফ সোয়াপিং কী?
একগামিতার একঘেঁয়েমি কাটানোই সঙ্গী বদলের মূল কারণ। এই সংস্কৃতির পথপ্রদর্শক পশ্চিম। ছয়ের দশক যুক্তরাষ্ট্রে সেক্স রেভলিউশনের যুগ। সে সময় বিভিন্ন যৌন রোগ থেকে বাঁচতে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের সহজলভ্যতা সামাজিকভাবে আলোড়ন তোলে। আর তখনই সঙ্গী বদলের বিষয়টিও প্রকাশ্য আলোচনা আসে।

ইতিহাস বলছে, ষোড়শ শতকে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে স্ত্রী বদলের ঘটনা ঘটে। ১৫৮৭ সালের ২২ এপ্রিল বিয়ে করেন জনৈক জন ডে এবং লেনায়ে। এরপর জন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর এডওয়ার্ড কেলির সঙ্গে প্রথম বউ বদলের ঘটনাটি ঘটান। এক রাতের জন্য তারা পরস্পরে স্ত্রী বদল করেছিলেন। এরপর আঠারো, উনিশ এবং কুড়ির শতকে মানুষের জীবনযাত্রা দ্রুত বদলাতে থাকে। আর সঙ্গী বদলও হয়ে ওঠে আমেরিকানদের জীবনযাপনের অংশ। অনেকে এর সপক্ষে আলাদা দর্শনও তৈরি করে।

আফ্রিকা, আরব এবং পাপুয়া নিউগিনির সমাজ জীবনে বউ বদলের ঘটনাটি সভ্যতার প্রায় প্রথম থেকেই ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা যায়, ওয়াইফ সোয়াপিংয়ের কিছু অলিখিত শর্ত রয়েছে। সেগুলো হলো:

১. সঙ্গী বদলের ক্ষেত্রে সবসময় যে বিবাহিত হতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু যৌন অভিজ্ঞতা থাকতেই হবে।
২. ব্যক্তিগত তথ্য জানানোর কোনও প্রয়োজন নেই।
৩. শারীরিক সম্পর্কের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রায় সব ক্ষেত্রেই করে নেয়া হয়।

এই সংস্কৃতি সমাজে কতটা এবং কীভাবে ফেলে এ ব্যাপারে ভারতীয় মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বৈবাহিক বা প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের বাইরে কারও প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হবেন না, এমনটা হলফ করে বলা যায় না ঠিকই, কিন্তু যদি শুধু ক্লান্তি বা একঘেঁয়েমি কাটানোর জন্য কেউ বারবার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে থাকেন সেক্ষেত্রে সেই যৌনতা থেকেও নতুন ক্লান্তির পরিস্থিতি আসবে না এমনটা কিন্তু বলা যায় না। তার প্রভাব কমিটেড সম্পর্কেগুলোর ওপরেও পড়ে এবং বহু ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্য শ্রদ্ধা, ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও আমরা কিছু ভাঙনের ফাটল দেখতে পাই।

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

এ জাতীয় আরও খবর

এ জাতীয় আরও খবর