দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের জন্য…
---
দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন লাভের ছয় উপায়সুখী ও দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের উদাহরণ দিন দিন কমে আসছে। আর পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তুচ্ছ নানা কারণে মানুষ হাঁটছে বিচ্ছেদের পথে। যেন বিচ্ছেদই
সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ সমাধান। কিন্তু একটু সহনশীল হলেই বিচ্ছেদ ছাড়াও অন্য পথে সম্পর্কের এ টানাপোড়েন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রতিটি সম্পর্কের মতো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কেও কঠিন সময় আসে। এই কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টকর হলেও অসাধ্য নয়। যে মানুষটির সঙ্গে চিরকাল একসঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞা করে আপনি বিয়ের সম্পর্কে জড়ালেন, দুঃসময়ে তাঁকে ছেড়ে যাওয়াটা কতটা যুক্তিসংগত—তা নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন। তুচ্ছ কারণে
আজীবন একসঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞা না ভেঙে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যান সুখী দাম্পত্য জীবন অর্জনের। এই কাজে সফল হলে হারানোর বেদনা বয়ে বেড়ানোর চেয়ে প্রাপ্তির আনন্দই বেশি উপভোগ করবেন আপনি। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে
দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন অর্জনের ছয়টি উপায় বাতলে দেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ
সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে সঙ্গীর সঙ্গে আপনার যোগাযোগের ঘাটতি হলে ধীরে ধীরে তা আপনাদের সম্পর্ককে ধ্বংস করে দিতে পারে। দাম্পত্য জীবনে সততার বিষয়টি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর বিষয়টি নিশ্চিত করা তখনই সম্ভব, যখন আপনাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে। পেশাগত কাজ, সন্তান লালন-পালন, শরীরচর্চা, ঘরের কাজ কিংবা সামাজিক কাজ নিয়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও অন্তত ১৫ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখুন আপনার সঙ্গীর জন্য। মূল্যবান এ সময়টুকু ব্যয় করুন একসঙ্গে বসে কথা বলার পেছনে। কেবল পরিবার কিংবা পেশাগত কাজ নিয়ে নয়, যেকোনো বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলুন প্রাণ খুলে।পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সীমা হিংগোরানির মতে, ‘ভালোবাসার মূল্য পরিমাপ করা সম্ভব নয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এই ভালোবাসার সম্পর্ককে মজবুত করে। সঙ্গীকে শ্রদ্ধা করলে বন্ধন দৃঢ় হয় এবং সম্পর্কের স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত হয়।’ যাঁকে আপনি বিয়ে করেছেন, অবশ্যই তিনি আপনার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার মানে এই নয় যে, আপনি তাঁকে কিনে ফেলেছেন। একা অবস্থায় কিংবা সবার সামনে কখনোই সঙ্গীর ওপর কর্তৃত্ব দেখানোর চেষ্টা করবেন না। সঙ্গীর অনুভূতি ও সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করতে শিখুন। আপনার মতের সঙ্গে না মিললেও তা করুন।
সমঝোতা
অনেক মানুষই মনে করেন, সমঝোতা করার মানে হলো নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করা। এ জন্য কোনো অবস্থাতেই সমঝোতার পথে হাঁটতে চান না তাঁরা। এই ধারণাটি ঠিক না। প্রয়োজনে সমঝোতা করা যেতেই পারে। জীবনে চলার পথে সব দম্পতিকেই অসংখ্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কখনো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, যখন দুটি ভিন্ন মতের মাঝে আপনাকে দাঁড়াতে হয়। সব সময় নিজের মতকে প্রাধান্য না দিয়ে সঙ্গীর মতামতকেও গুরুত্ব দিন। দুজন মিলে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিন, যাতে আপনারা দুজনই খুশি থাকতে পারেন।
অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা
প্রত্যেক মানুষই নিজের আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে চায়। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আপনি টাকা জমাতেই পারেন। বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আপনার আর্থিক যেকোনো সিদ্ধান্ত সঙ্গীকে জানানোটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কোথাও টাকা বিনিয়োগ করলে কিংবা বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের টাকা ধার দেওয়ার প্রয়োজন পড়লে কখনোই সঙ্গীর কাছে তা লুকাতে যাবেন না। এটি করলে আপনার সঙ্গী বিচলিত হতে পারেন। আপনার ওপর থেকে তাঁর বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়ে যেতে পারে। এতে করে অযথাই আপনাদের সম্পর্কে চির ধরতে পারে।
সঙ্গীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক
বিয়ের পর শ্বশুর-শাশুড়ি কিংবা সঙ্গীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বন্ধন দৃঢ় করার চেষ্টা করুন। কাজটি সহজ মনে হলেও আদতে বেশ কঠিন। কোনোভাবেই যদি আপনি সঙ্গীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সহজ হতে না পারেন, তাহলে অন্তত তাঁদের সঙ্গে আন্তরিক ব্যবহার করুন। সময়-সুযোগ পেলেই পাশে বসে কিছুক্ষণ মন খুলে কথা বলুন। মাঝেমধ্যে গেট-টুগেদার কিংবা একসঙ্গে ভোজের ব্যবস্থা করতে পারেন। মনে রাখবেন, দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েন দেখা দিলে সঙ্গীর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেতে পারেন আপনি।
রোমান্স
কত বছর ধরে এক ছাদের নিচে বসবাস করছেন সেই হিসাব না করে আপনারা রোমান্স কতটা ধরে রাখতে পেরেছেন, সেই হিসাব করুন। জীবন থেকে কখনোই রোমান্সকে হারিয়ে যেতে দেবেন না। যখনই সম্ভব, তখন সঙ্গীকে ভালো কিছু সময় উপহার দিন। তাঁকে বুঝতে দিন, তাঁর প্রতি আপনার মনোযোগ আগের মতোই আছে। তাঁর ইতিবাচক মূল্যায়ন করুন। আপনার জীবনে তাঁর প্রয়োজনীয়তা কতটা বেশি তা প্রকাশ করুন। তাঁকে বুঝতে দিন, তিনি আপনার জীবনের বিশেষ একজন মানুষ। বাচ্চা-কাচ্চা থাকলে তাদের দাদা-দাদি বা নানা-নানির কাছে পাঠিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে পড়ুন। দুজন মিলে একান্তে দারুণ কিছু সময় কাটিয়ে আসুন।