সরাইলে গৃহকর্মীর ইজ্জতের মূল্য ৪০ হাজার টাকা মামলা তুলে নিতে হুমকি, গৃহকর্মী ঘর ছাড়া
---
সরাইল প্রতিনিধিঃ ঘটনার ৭ দিন পরও নথিভূক্ত হয়নি ধর্ষনের পর হত্যার চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি। আসামী স্বপন কাল (শনিবার) সৌদী আরব চলে যাওয়ার কথা। তাকে সুযোগ দেয়ার উদ্যেশ্যেই বাদীর ইচ্ছার বিরোদ্ধে দফায় দফায় চলছে সালিস বৈঠক। দিন মজুরের কন্যার ইজ্জতের মূল্য নির্ধারন করেছেন ৪০ হাজার টাকা। আর গৃহকর্মী বলছে টাকা নয়, আমি আইনি বিচার চাই। নইলে এ জীবন আর রাখব না। সমাজপতির ছদ্যবেশী কিছু দালাল আসামীর সাথে মোটা অংকের টাকার চুক্তি করে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে দৌড়ঝাঁপ করছে। মামলাটি তুলে নিতে বারবার হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বাদীকে। প্রাণ ভয়ে নিজের ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে ওই গৃহকর্মী। আর পুলিশ বলছে, দেখছি। মামলার বাদী গৃহকর্মী ও তার পরিবার জানায়, ধর্ষিত গৃহকর্মী হাসপাতাল থেকে আসার পরের দিন এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করে। এর পর থেকে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজন বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য গৃহকর্মী ও তার পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাপ দিচ্ছেন। মামলা জমার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ তদন্তেই যায়নি এখনো। বাদীর অনুপস্থিতিতেই পানিশ্বর ইউনিয়নের নোয়াহাটি গ্রামের নোয়াব মিয়ার ছেলে শাহআলম মিয়া ও শান্তিনগর গ্রামের ইদ্রিছ মিয়ার ছেলে হানিফ মিয়ার মধ্যস্থতায় গত বৃহস্পতিবার দিনভর সরাইলে চলে সালিস সভা। সেই সাথে চলে টাকা বন্টন। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন- ফুল মিয়ার ছেলে সর্দার নুরুল ইসলাম, হারিজ মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া, আবদুল সামাদের ছেলে তাজুল ইসলাম, মতি মিয়ার ছেলে মুমিনুল হক ওরফে মহিম মাষ্টার, সুরুজ আলীর ছেলে ছালাম মিয়া, তারু মিয়ার ছেলে অহিদ মিয়া, সোনা মিয়ার ছেলে সুলমান মিয়া, মদন আলীর ছেলে আবু কালাম, আলা বক্সের ছেলে শাহজাহান মিয়া, দেওয়ান আলীর ছেলে ফারুক মিয়া, রইছ মিয়ার ছেলে রানা মিয়া ও আসামী স্বপনের বাবা গনি মিয়ার ছেলে রইছ মিয়া প্রমুখ। দীর্ঘ আলোচনার পর তারা স্বপন মিয়াকে দোষী সাব্যস্থ করে গৃহকমী গৃহবধুর ইজ্জতের মূল্য নির্ধারন করেন ৪০ হাজার টাকা। সিদ্ধান্ত হয় বাড়িতে গিয়ে টাকা দেওয়ার। শুক্রবার সকালে গৃহকর্মীর বাড়িতে যায় রানা মিয়া, শাহআলম ও মোমিন নামের তিন যুবক। তারা মামলা প্রত্যাহারের জন্য একটি স্বাক্ষর দিতে গৃহকর্মীকে নানা ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। সকাল ১১টায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মমিনুল হক ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যান গৃহকর্মীর বাড়িতে। টাকা নেয়নি গৃহকর্মী। তার সাফ জবাব টাকা নয়, ইজ্জত হননের আইনি বিচার চাই। পরে তার উপর আরো চড়াও হয় কিছু যুবক। আত্মরক্ষার্থে নিজের বাড়ি ছেড়ে গৃহকর্মী তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। ধর্ষন মামলার বাদী গৃহকর্মী মুঠোফোনে জানায়, সময় ক্ষেপন করে আসামী স্বপনকে সৌদী চলে যাওয়ায় সহায়তা করছে কিছু মাতব্বর ও পুলিশ। আমি কোন সালিস বৈঠক মানি না। নির্যাতিত হয়েছি আমি। অন্য কেউ আপোষ করার কে? আপোষ রফার জন্য তারা আমার বৃদ্ধ বাবাকে কি যেন খাইয়ে দিয়েছে। টাকা দিয়ে লোক ক্রয় করছে। এ ছাড়া তারা আমি ও আমার পরিবারের সকলকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। জীবন বাঁচানোর জন্য বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে এসেছি। আমার তো সব শেষ। মানুষকে মুখ দেখাতে পারছি না। আমি মামলা প্রত্যাহার করিনি। করবও না। শুধু আইনি সহায়তা চাই। টাকার অভাবে বিচার না পেলে আত্মহত্যা করব। গৃহকর্মীর বড় বোন বলেন, আমার অসুস্থ্য বাবা গত বৃহস্পতিবার থানায় যেতে চেয়েছিল। গ্রামের কিছুলোক তাকে জোর করে কি যেন খাইয়ে ভয় দেখিয়েছে। তারা আমার বোনের ইজ্জতের দাম টাকায় নির্ধারন করার কে? তাদের যন্ত্রনায় আমার বোনটা বাড়িতে থাকতে পারছে না। আমরা গরীব হওয়ায় আমাদের কথা কেউ বলে না। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলী আরশাদ বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য উপ-পরিদর্শক মোঃ মুজিবুর রহমান আজ ( শুক্রবার) ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। প্রসঙ্গত: গত ১৪ আগষ্ট শুক্রবার রাতে মা সহ পরিবারের কয়েকজন বাড়িতে না থাকার সুযোগে গৃহকর্তা স্বপন গৃহকর্মীকে হাত বেঁধে জোর পূর্বক তার শয়ন কক্ষে নিয়ে যায়। পরে বিয়ে ও টাকার লোভ দেখিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করে। সকালে লোকজনকে জানিয়ে দিতে এমন আশঙ্কায় রাতেই বাড়ির পশ্চিম পাশের বয়লারে নিয়ে জোর করে হত্যার উদ্যেশ্যে গৃহকর্মীর মুখে বিষ ঢেলে দেয়। চিৎকার শুনে তার বাবা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে নিয়ে ভতি করেন। ৪ দিন চিকিৎসা শেষে ১৮ আগষ্ট হাসপাতাল থেকে আসে গৃহকর্মী। ১৯ আগষ্ট স্বপন মিয়াকে আসামী করে ধর্ষন শেষে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা দেয় সে। মামলাটি এখনো নথিভুক্ত হয়নি।