বিসিবির পতাকা নিষেধাজ্ঞায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ভারত-পাকিস্তানে
---
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে জাতীয় পতাকাসংক্রান্ত আইন মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিসিবি ত্বরিত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশিরা অন্য দেশের পতাকা হাতে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে অন্য দেশের নাগরিকেরা যে যার দেশের পতাকা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে পারবে।
বাংলাদেশের ৪৪তম স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন নেওয়া বিসিবির এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সব ক্রিকেট খেলুড়ে দলের সমর্থকের জন্য প্রযোজ্য। তবে অনুমিতভাবেই সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানে। কারণ বাংলাদেশে এ দুটি দেশের সমর্থক অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। বিসিবির সিদ্ধান্তে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররাও।
পাকিস্তানের ক্রিকেট কিংবদন্তি জাভেদ মিয়াঁদাদ এএফপিকে বলেছেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্তে খুবই বিস্মিত হয়েছি। ক্রিকেটের মূল দিকটি হচ্ছে খেলোয়াড়ি চেতনা। এ সিদ্ধান্তে খেলোয়াড়দের চেতনা নষ্ট হবে।’ পাকিস্তানের আরেক সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘আমি নিশ্চিত বিসিবি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবে। কারণ এটি অযৌক্তিক। আইসিসি নিশ্চয়ই এর ব্যাখ্যা চাইবে।’ ৯০ টেস্টে খেলা ইউসুফ অবশ্য জানিয়েছেন, প্রতিবার বাংলাদেশে এসে উষ্ণ অভ্যর্থনাই পেয়েছেন। আরেক সাবেক অধিনায়ক ইউনুস খান পুনর্বিবেচনা করতে বলেছেন এ সিদ্ধান্ত, ‘এটি খেলার চেতনাবিরোধী। যে কেউ তার প্রিয় দলকে সমর্থন করতে পারে, সেটি আপনি বন্ধ করতে পারেন না।’
ভারত-পাকিস্তানের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমই খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত সংবাদের নিচে পাঠকদের নানা মন্তব্য-প্রতিক্রিয়ায় ভরে উঠেছে। ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র খবরে বিস্ত নামের এক পাঠক মন্তব্য করেছেন, ‘এতে কাজ হবে না। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও ভারতের সমর্থক ঠেকাতে ইংল্যান্ড এ রকম কিছু একটা করতে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এটি একটি খেলাই। বাংলাদেশ মাত্রই বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে শুরু করেছে।’
একই পত্রিকায় ছদ্মনামে এক পাঠক মন্তব্য করেছেন, ‘এটি মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত! সম্পূর্ণ খেলার চেতনাবিরোধী। জোর করে কোনো দলের প্রতি সমর্থন বন্ধ করতে পারেন না। এটি হাস্যকর!’ ভারতের আইবিএনের খবরে বিনু নামে এক পাঠক লিখেছেন, ‘বাংলাদেশি মূর্খ!’ হারুনুর রশিদ নামের আরেক পাঠক বলেছেন, ‘একে বলে বাকস্বাধীনতা হরণ। জনতা ইচ্ছেমতো যেকোনো দেশের পতাকা ওড়াতে পারে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা উগ্রবাদী আদর্শের নমুনা। জনতা জেগে ওঠো। অন্যদের অধিকারকে সম্মান করো। সবাইকে দেখাও, বাংলাদেশ উদার মানুষের দেশ।’
পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘ডন’-এর খবরে ইমরান নামের এক পাঠক বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে, দুনিয়ায় আমরাই একমাত্র জাতি নয়, যারা হাস্যকর সিদ্ধান্ত নিই না। এ তালিকায় বিসিবিও রয়েছে।’ আজাহার নামের আরেক পাঠক বলেছেন, ‘পুরোই নির্বোধ!’ ইহতেশাম কায়ানি বলেছেন, ‘পতাকা নিষেধাজ্ঞায় কাজ হবে না।’ ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে’ প্রকাশিত খবরের নিচে সামি মন্তব্য করেছেন, ‘ওয়াহ! ধর্মনিরপেক্ষ সহনশীল উদার বাংলাদেশ… উদারতার ক্ষেত্রে আরেকটি জয়!’ একই পত্রিকার খবরে আওয়াইশ নিক ব্যবহারকারী বলেছেন, ‘কতটা শিশুসুলভ হতে পারে বাংলাদেশ!’
বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরেই ভিনদেশি দলগুলোকে সমর্থন করা, সেই দেশের পতাকা হাতে গ্যালারিতে বাংলাদেশি সমর্থকদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলে আসছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন ব্লগে এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল বিতর্ক হয়েছে। সমালোচনার কেন্দ্রে আছে বাংলাদেশের ভারত ও পাকিস্তানের সমর্থকেরা। বিসিবির একজন মুখপাত্র এএফপিকে বলেছেন, দেশে যেহেতু এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট আইন আছে, সরকারের নির্দেশ মানতে তারা বাধ্য। এরই মধ্যে স্টেডিয়ামের প্রবেশমুখের নিরাপত্তাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের কোনো সমর্থক ভিনদেশের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে বিদেশি সমর্থকদের জন্য এ রকম কোনো বাধা নিষেধ থাকবে না।