দেবরের ‘নির্যাতনে’ ভাবি নিহত
নিউজ ডেস্ক।। বরগুনার পাথরঘাটায় দেবরের নির্যাতনে ভাবির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহত সাথী বেগমের (২২) মা অহিদা বেগম। এ ঘটনার পর থেকে স্বামী জুয়েল পালাতক রয়েছেন। গত শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার কঠালতলী ইউনিয়নের কালিবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সাথী আক্তারের দেড় বছর বয়সী মরিয়ম আক্তার জুঁই নামের এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।
জানা গেছে, তিন বছর আগে উপজেলা কাঠালতলী ইউনিয়নের কালিবাড়ি গ্রামের আবু জাফরের ছেলে জুয়েলের সঙ্গে বিয়ে হয় উপজেলার মাছের খাল বাজার এলাকার ইউনুস আলীর মেয়ে সাথী আক্তারের। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য চাপ দেয় সাথীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এর আগে সাথীর বাবা মেয়ের বিয়েতে খাট-পালঙ্ক দেন। বিয়ের কিছুদিন পর রায়হানপুর ইউনিয়নের একটি মেয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন জুয়েল। এ ঘটনা স্ত্রী সাথী জানতে পারায় তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহের সৃষ্টি হয়। এর ফলে সাথীকে কয়েকদফা মারধর করে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
এরপর সাথী শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে ব্র্যাকের আইন সহায়তা কেন্দ্রে অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে ব্র্যাক আইন সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে জুয়েল এমন আচারণ করবে না মর্মে লিখিত দিয়ে সাথীকে বাড়ি নিয়ে যান। সাথীর মা অহিদা বেগম জানান, বছর খানেক আগে ব্র্যাকের মাধ্যমে মিলমিশ হওয়ার পর থেকে ভালোই যাচ্ছিল সাথীর সংসার। গত বৃহস্পতিবার সাথী আমাকে ফোন দিয়ে আবার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনের কথা জানান।
সাথীর মা আরও জানান, পেশায় মোটরসাইকেলচালক জুয়েল যাত্রী নিয়ে বরগুনা শহরে ছিলেন। এ সময় দুপুরের দিকে দেবর সোলায়মানের সঙ্গে সাথীর কথাকাটি হয়। কাটাকাটির একপর্যায় সাথীকে মারধর করায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে সাথীর মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যা করেছে বলে এলাকায় জানায় সাথীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এরপর থেকেই সাথীর দেবর সোলায়মান পলাতক রয়েছেন।
সাথী আক্তারের মা অহিদা বেগমের দাবি, দেবরের সঙ্গে কথাকাটির ফাঁকে মোবাইল ফোনে সাথী তাকে মারধরের ঘটনা জানিয়েছিল এবং সাথীকে মেরে ফেলবে বলেও মোবাইল ফোনে নিশ্চিত করে। এ ঘটনা সাথীর মা অহিদা বেগম জামাতা জুয়েলকে মোবাইল ফোনে জানালে তিনি এসে ভাই সোলায়মানকে বিচার করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কয়েক ঘণ্টা পর মেয়ের জামাতা জুয়েল ফোনে সাথীর বিষপানে আত্মহত্য্য কথা জানান।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই দেবর সোলায়মান ও স্বামী জুয়েল পলাতক রয়েছেন। জুয়েলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে রিসিভ করেনি। আজ সকালে পাথরঘাটা থানা পুলিশ সাথীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠায়।
পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘শুক্রবার রাতে মরদেহ থানায় আনার পরে আমার সামনেই সাথীর বাবা ইউনুছ মিয়া পোস্টমর্টামে না পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছেন। তার মেয়ের মাথায় সমস্যা আছে এবং নিজের ইচ্ছায় বিষ পান করেছেন বলেও জানান। প্রয়োজনে থানায় লিখিত দিয়ে যাবেন বলেও বলেছিলেন বাবা ইউনুছ।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হানিফ শিকদার বলেন, সাথীর বাবা-মা থানায় বসেই স্বীকার করেছেন তাদের মেয়ে মানসিক সমস্যার কারণে বিষপান করেছেন। সাথীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে এবং লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।